ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

টিস্যুর দামে ইস্যু

প্রকাশনার সময়: ১০ অক্টোবর ২০২১, ০৪:০৪
ফাইল ছবি

করোনাকালীন এই সময়ে টিস্যুর ব্যবহার বেড়েছে অনেক বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বারবার হাত ধোয়ার পর টিস্যু ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাসার পাশাপাশি এখন বেশিরভাগ অফিসে আগের চেয়ে বেশি টিস্যু ব্যবহার হয়। ফলে বাজারে আগের থেকেও চাহিদা বেড়েছে টিস্যু পেপারের। মানুষের বাড়তি চাহিদা ও সচেতনতার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে টিস্যু পেপারের। প্রকারভেদে প্রতিটি টিস্যু প্যাকেটের দাম এক লাফে বেড়েছে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ। আর এই বাড়তি খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে।

তবে টিস্যু পণ্যের বিপণন ও উৎপাদনকারী কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারিকে পুঁজি করে আন্তর্জাতিক বাজারে টিস্যুর কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। আগের চেয়ে বেড়েছে আমদানি শুল্কও। ফলে উৎপাদনসহ যাবতীয় খরচও বেড়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা দাম সমন্বয় না করলে কোম্পানিগুলোকে লোকসান গুনতে হবে। আর লোকসান দিয়ে আগের দামেও বিক্রি করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে টিস্যু পণ্যর দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে।

সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা মোহন কুমার সরকার। তিনি স্থানীয় দোকান থেকে হ্যান্ড টাওয়েল কিনতে গিয়ে দেখেন, প্যাকেটের দাম ৯৫ টাকা হয়ে গেছে। অথচ জুন-জুলাই মাসে তিনি ৭৮ টাকা দিয়ে হ্যান্ড টাওয়েল কিনেছিলেন। আর ২০ টাকার টয়লেট টিস্যু কিনলেন ৩০ টাকা দিয়ে। হঠাৎ দাম এত বাড়ল কেন, খুচরা বিক্রেতা মামুনের কাছে জানতে চান তিনি। তবে ওই দোকানি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরে টিস্যুর গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য কত লেখা আছে, শুধু তা দেখিয়ে দেন।

মুদিদোকানের বিক্রেতা মামুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের টিস্যুর দাম দুই-তিন মাস আগে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এখন প্রায় ক্রেতারা প্রশ্ন করছেন, কিন্তু আমার কাছে কোনো জবাব নেই। আগে দাম বাড়লে ১-২ টাকা বাড়ত। এবার এক লাফে প্যাকেটপ্রতি ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বসুন্ধরা সাদা টয়লেট টিস্যুর প্রতি প্যাকেটের দাম ১৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা, রঙিন টয়লেট টিস্যুর দাম ২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা, হ্যান্ড টাওয়েল প্রতি প্যাকেট ৭৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা। পেপার ন্যাপকিন টিস্যু প্যাকেট ৫৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। ঠিক একইভাবে ফেস বক্স টিস্যুর প্যাকেটের দাম ৬২ থেকে বেড়ে ৭২ টাকা ও পেপার ন্যাপকিন টিস্যু ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির টয়লেট টিস্যুরও দাম বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে বসুন্ধরা ফ্রেস ছাড়াও সোনালি, বাংলা ও ফে টিস্যুসহ সব ধরনের টিস্যুর দামও বেড়েছে।

জানা গেছে, বাজারে ফেস টিস্যু, পকেট টিস্যু, কিচেন টাওয়েল, টেবিল ন্যাপকিন, টয়লেট টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়েল, ওয়ালেট টিস্যু, ক্লিনিক্যাল বেড শিট পাওয়া যায়। দেশে ২৫টির মতো কোম্পানি টিস্যু উৎপাদন ও আমদানি করে। টিস্যু উৎপাদন করে বসুন্ধরা, মেঘনা, কল্লোল, জননী, বাংলা টিস্যু, সফটি, আমেনা আর হাক্কানীসহ আরো কয়েকটি কোম্পানি। এসব টিস্যুর গুণগত মান ভালো, আন্তর্জাতিক মানের। তবে সম্প্রতি সব কোম্পানির প্রতিটি টিস্যু পেপারের দাম কম-বেশি বেড়েছে।

একাধিক বিক্রেতা জানান, কঠোর লকডাউন শেষে গত ১১ আগস্ট থেকে সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাবে টিস্যুর ব্যবহার অনেকটাই বেড়ে গেছে। কোম্পানি যদি দাম বাড়ায় তাহলে তো আমাদের এখানে কী করার আছে। এই কথাটি ক্রেতাদের কে বোঝায়।

কারওয়ানবাজারের বসুন্ধরা টিস্যুর পরিবেশক রহমত অ্যান্ড সন্সের বিক্রেতা মো. লিটন নয়া শতাব্দীকে বলেন, নতুন করে টিস্যুর দাম বেশ বেড়েছে। তবে বাজারে প্রভাব পড়ছে সম্প্রতি। কারণ, আমাদের কাছে আগের দামে কেনা বেশ কিছু পণ্য ছিল। সেগুলো আমরা এত দিন আগের দামেই বিক্রি করেছি। এখন নতুন টিস্যু বাজারে যাচ্ছে, তাই দাম বাড়তি।

কারওয়ানবাজারে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ টিস্যুর পরিবেশক জামাল ট্রেডার্সের বিক্রয় প্রতিনিধি হারিছুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, কোম্পানি থেকে আগেই জানানো হয়েছিল দাম বাড়বে। এখন থেকে নতুন পণ্য আসছে। তাই দামও কিছু বাড়তি। খুচরা পর্যায়েও আরেকটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যে কোনো নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে বাজার তদারকিতে বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের পক্ষে নানা সংস্থা কাজ করলেও তাদের সার্বিক কাজে সমন্বয়হীনতার চিত্রই বারবার সামনে আসছে। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় তৈরি হচ্ছে ফাঁক। এ সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় দাম বাড়াতে সক্রিয় হয়ে উঠছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। আর সেই দামের নাগাল ছুঁতে নাকাল হয়ে যাচ্ছেন ভোক্তারা। তাই বাজার তদারকিতে ওই তিন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের ওপর তাগিদ দিয়েছেন তারা।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ