ধর্ষণের সালিশি সমাধান মোটেই বৈধ নয়। এটি একটি ক্রিমিনাল ওফেন্স। বিচারকরা যদি মনে করেন তাহলে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের নিচের কন্যাশিশুকে বাবা মার সম্মতিতে বিয়ে দেয়া যেতে পারে বলে মন্তব করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে শনিবার (৯ অক্টোবর) এফডিসিতে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগীতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় শাস্তির ভয়ে কাজীরা বাল্যবিয়ে পড়ায় না, সেখানে বিয়ে পড়ায় নোটারী পাবলিক যেটি প্রতিরোধ অত্যন্ত জরুরি। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবকদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতাকে বিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। যেটি মোটেই সমর্থন যোগ্য নয়। তবে ছেলে ও মেয়ের সম্পর্কের মাধ্যমে কোন মেয়ে গর্ভবর্তী হলে তাদের বিয়ের ব্যাপারটি ভিন্ন বিবেচনায় দেখা যেতে পারে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি যথপোযুক্ত। তবে করোনাকালে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে প্রশাসন ব্যস্ত থাকায় আইনটির যথাযথ প্রয়োগ হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতা কমে আসবে। কিন্তু কমেনি। যে কারণে এ সময়ে বাল্য বিবাহ বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড গমেজ ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাল্যবিবাহ শুধু বন্ধ করলেই হবে না, বাল্যবিবাহ ঠেকানো মেয়েটি পরবর্তীতে কেমন আছে? বিয়েটি কেন হচ্ছিলো? মেয়েটির অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা কেমন? সে কি তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে অন্যদিকে যে মেয়েটির বাল্য বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সেই মেয়েটি কেমন আছে? তার শারিরিক মানসিক স্বাস্থের অবস্থা কি রকম। এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বাল্যবিবাহের শিকার সেই মেয়েগুলোর সুরক্ষায় কাজ করতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি হিসেব অনুযায়ী গত বছর গড়ে মাসে ৫৮ টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত কিশোরীদের ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের ৩১ শতাংশই গর্ভবর্তী হন। যারা শারিরিক ও মানসিক ভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত নয়। ৪৩ শতাংশ কিশোরী মা গর্ভজনিত সমস্যার কারণে মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৯ শতাংশ। বাল্যবিবাহ নির্মূলে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল, কোভিড এর অতিমারিতে নানাবিধ কারণে তা আবার পিছিয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন করোনাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তেমন নজরদারি করতে পারেনি। তাই করোনাকালে বাল্য বিবাহ বেড়েছে। দারিদ্রতার কারণে অনেক কিশোরীরাই বাল্যবিবাহের শিকার হয়। তাই মেয়েদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি যদি আমরা কারিগরি শিক্ষা দিতে পারি তাহলে তারা নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু আয় করতে পারবে। তখন হয়তো বাল্যবিবাহ অনেকাংশে কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আগের আইনে ১৮ বছরের নীচে বিয়ে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল। নতুন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭'-এ ১৮ বছরের নীচে বিয়ে নিষিদ্ধ করা হলেও, ঐ একই আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতিতে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সম্মতিতে ১৮ বছর বয়সের নীচেও বিয়ের অনুমতি দেওয়া যাবে। তাহলে কি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বাল্যবিয়ের সংস্কৃতি আমাদের দেশে চলতেই থাকবে বলে প্রশ্ন করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রতিযোগিতায় ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালকে পরাজিত করে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, চাইল্ড এন্ড ইয়ুথ ফোরাম এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. মেহরুবা, সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন, ড. শাকিলা জেসমিন ও মোর্শেদা ইয়াসমিন পিউ।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ