বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়ে চলেছে বায়ুদূষণের মাত্রা। দিন দিন ঢাকার বাতাস দূষিত হয়ে উঠছে। বিশেষ করে শীত এলেই বাতাসের মান আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। চলতি বছর শীতের শুরুতেই টানা কয়েক দিন বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সকালেও ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য জানা যায়।
গতকাল বুধবার সকালেও এই সময়ে বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণে শীর্ষে ছিল ঢাকা। বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। সেই সতর্কবার্তায় নগরবাসীর উদ্দেশে আইকিউ এয়ারের পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
আইকিউএয়ারের সূচক অনুযায়ী, ঢাকা ও তার আশপাশের সর্বোচ্চ দূষিত তিন এলাকার মধ্যে আছে ইস্টার্ন হাউজিং-২ (৩৪০), ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (২৯৯) ও সাভারের হেমায়েতপুর (২৯৭)।
প্রসঙ্গত, কোন স্থানের বায়ুমান স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেখানকার বাতাসকে মান ভালো বলে বিবেচনা করা হয়। আর স্কোর যদি হয় ৫১ থেকে ১০০, তাহলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত স্কোরকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে সেই বাতাসকে বলা হয় খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর কোন জায়গার বায়ুমান ৩০১-এর বেশি হলেই সেখানকার বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণে ভুগছে ঢাকা। গত ডিসেম্বরের একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ।
২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো—ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণাধীন এলাকার ধুলা। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩৫ গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুসারে, বায়ুদূষণের ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু বায়ুদূষণের কারণেই প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বিশ্বব্যাপী।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ