যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সরকারি বাসভবন যমুনায় সানডে টাইমসকে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে তাঁকে (টিউলিপ) ও তাঁর পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ভোগ করার জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে যেসব সম্পত্তি ব্যবহার করেন, সেগুলোরও তদন্ত হওয়া দরকার। যদি প্রমাণিত হয় যে তিনি এসব সম্পত্তি ‘‘সম্পূর্ণ ডাকাতির’’ মাধ্যমে অর্জন করেছেন, তাহলে তা ফেরত দেওয়া উচিত।’
শনিবার (১১ জানুয়ারি) সানডে টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং যদি প্রমাণ হয় শেখ হাসিনা সরকারের সময় যে ব্যাপকভাবে লুটপাট হয়েছে সেখান থেকে সুবিধা পেয়েছেন, তাহলে তাকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত পাঠানো উচিত।’
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এদিকে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ। এক্সে দেওয়া পোস্টে কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা বলেছেন, কেয়ার স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন এবং তিনি নিজেকেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। সরকার যে আর্থিক সমস্যাগুলো তৈরি করেছে, তা মোকাবিলায় মনোনিবেশ করা উচিত হলেও টিউলিপ সিদ্দিক সেই কাজে মনোনিবেশের জন্য সমস্যা হয়ে উঠেছেন। আর এখন বাংলাদেশ সরকারও শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে তার যোগসূত্র নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রিসভার সদস্য এবং তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। কিন্তু তার জন্মভূমি বাংলাদেশেই এখন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, যেখানে তিনি এবং পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া, নিজ খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের উপহারের ফ্ল্যাটে থাকা নিয়ে বিতর্ক চলছে তাকে নিয়ে।
এছাড়া সম্প্রতি টোরি এমপিরাও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেছেন। ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেছেন, ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
টোরি এমপি বব ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিককে তার সম্পত্তির লেনদেনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে এবং ব্যাখ্যা করতে হবে আসলে কী ঘটেছে এবং কেন? যদি তিনি তা না করেন, তবে মন্ত্রী হিসেবে তিনি তার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন না।
টিউলিপ সিদ্দিক অবশ্য কোনও ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডসের ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার লাউরি ম্যাগনাসের কাছে নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে লেখা একটি চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, ‘আমি কোনও ভুল করিনি।’
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারও বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের উপর পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তিনি। সেইসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, টিউলিপকে তার পদ থেকে সরিয়ে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা নিয়ে যে খবর চাউর হয়েছে তা ‘সম্পূর্ণ অসত্য’।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ