রাজধানীর পল্লবীর কলেজপড়ুয়া সেই তিন বান্ধবী বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও নিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছিলেন। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের চিন্তায় যেতে চেয়েছিলেন জাপানে। তবে দেশ ছাড়ার আগেই তাদের উদ্ধার করে র্যাব।
উদ্ধার হওয়া তিন ছাত্রী হলেন- কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, কানিজ ফাতেমা ও স্নেহা আক্তার। তারা সবাই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নিসা মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, স্নেহা পল্লবী ডিগ্রি কলেজ ও কানিজ দুয়ারিপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী।
উদ্ধারের পর এই তিন ছাত্রী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে নানান তথ্য দিয়েছে।
র্যাব জানায়, ওই তিন ছাত্রী করোনার কারণে দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তাদের পরিবার পড়াশোনা ও ধর্মীয় বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের কারণে বিরক্ত হয়ে পড়ে তারা।
র্যাব আরও জানায়, ওই তিন ছাত্রী স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়েন। তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছিলেন। তারা কক্সবাজারও গিয়েছিলেন।
র্যাব ৪-এর উপঅধিনায়ক মেজর রবি খান গণমাধ্যমকে বলেন, ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছিলাম। তাদের (তিন ছাত্রী) অবস্থান শনাক্ত করার পর র্যাবের একটি দল কক্সবাজারে যায়। সেখানে র্যাব সদস্যরা তাদের (তিন ছাত্রী) অনুসরণ করে।
গতকাল (৫ অক্টোবর) তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে আমাদের সদস্যরাও তাদের অনুসরণ করে ঢাকায় আসেন। মিরপুরে প্রবেশ করার সময় তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।
এদিকে বুধবার বিকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তিন ছাত্রীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক জানান, এই তিন ছাত্রী কক্সবাজার হয়ে জাপান যেতে চেয়েছিল। উন্নত, স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার জন্য হাফসা চৌধুরী নামের এক নারীর সহায়তায় তারা জাপানে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। কক্সবাজার যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে থাকা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার একজন নিয়ে যায়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা কক্সবাজারে যে হোটেলে উঠেছিল, তার আশপাশে র্যাবের উপস্থিতি দেখে তারা ঢাকায় ফিরে আসে।
পরিবারের কাউকে কিছু না বলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সবাই নিজ নিজ বাসা থেকে একযোগে বের হয়ে যায় ওই তিন বান্ধবী। বের হওয়ার সময় সবাই বাসা থেকে কয়েক লাখ টাকা, গহনা, স্কুল সার্টিফিকেট ও দামি মোবাইল নিয়ে যায়।
নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবার দাবি করেছিল- বিদেশে নেওয়ার প্রলোভনে তাদের নিয়ে গেছে একটি নারী পাচারকারী চক্র। এ জন্য তারা বাসা থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে।
এ ঘটনায় নিসার মা মাহমুদা আক্তার পল্লবী থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর এক তরুণীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার চারজনের মধ্যে দুজন সহদোর। এ ছাড়া তাদের মধ্যে এক তরুণীও রয়েছেন। গ্রেফতার দুই ভাই হলেন- তরিকুল্লাহ (১৯)ও তার বড়ভাই রকিবুল্লাহ (২০)। বাকি দুজনের বয়স ১৮ বছর।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ