ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জামায়াতের টার্গেট ২০৪৮

প্রকাশনার সময়: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০৪:৫৪ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ০৫:০৪
সংগৃহীত ছবি

দলের শতবর্ষ ২০৪৮ সালকে ক্ষমতায় যাওয়ার টার্গেট করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এ কারণে ২০১৮ সাল থেকে নেয়া হয়েছে গোপন পরিকল্পনা। দলের শতবর্ষে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া দলটি সরকারি ২৫ দফতরে ২ লাখ কর্মীকে চাকরিতে ঢোকানোর মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। পাশাপাশি ৪ শতাধিক ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিকদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। টার্গেট রয়েছে শিক্ষা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির। সেখানে তরুণদের টার্গেট করে নেয়া হয়েছে বড় ধরনের পরিকল্পনা।

এজন্য বিদেশ থেকে বিভিন্ন এনজিওর আড়ালে আসছে বিপুল পরিমাণ টাকা। এসব টাকা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ৯ জামায়াত নেতার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে মাস্টারমাইন্ডদের ওপর কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের জয়েন্ট কমিশনার হারুণ-অর-রশিদ বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, আব্দুর রফ, ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত ও জামায়াত কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালামকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর তাদের দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। নিবন্ধন হারানোর পর ২০১৮ সাল থেকে ৩০ বছরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে মাঠে নামে তারা। তাদের প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে ২০৪৮ সালে ক্ষমতায় যেতে সরকারি অন্তত ২৫ দফতরে ২ লাখ লোকের নিয়োগের ব্যবস্থা করা। ৪ শতাধিক ট্রেড ইউনিয়নের ব্যানারে কৃষক ও শ্রমিকদের একত্রিত করা। এজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিচ্ছে দলটির বিদেশে থাকা কর্মীরা। বিভিন্ন এনজিওর আড়ালে তারা অর্থ আনছেন। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম নেয়া দলটি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হয়। এরপর ২০১৮ সালে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

বিগত নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলটি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে। কিন্তু বর্তমানে টানাপড়নের কারণে নিজস্ব ধারার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছে দলটি। এর আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সারাদেশে ব্যাপক তা-ব চালায়। পেট্রলবোমা, বাসে আগুন দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষ হত্যার মতো অভিযোগ উঠে দলটির বিরুদ্ধে। নির্বাচনকালে ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, প্রিজাইন্ডিং অফিসারকে হত্যা করার মতো কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি তারা। মিসর ও তুরস্কের দুটি দলকে এখন নিজেদের আদর্শ ভেবে আগামী নির্বাচনকেও ঘিরে দলটি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতা চালাতে এখন থেকেই দল গোছাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম।

গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যমতে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ২০৪৮ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা এঁটেছিল মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতারকৃত নেতাদের ল্যাপটপ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে প্রায় ৪০০ ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে। এছাড়া তাদের একটি শ্রমিক সংগঠনও রয়েছে। কৃষক-শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ ওই সংগঠনের ব্যানারে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে তারা। জামায়াত পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেখানে টার্গেট করা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। চাকরির বিনিময়ে কর্মী সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দেশে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে জামায়াত। যেখানে বিদেশ থেকে ফান্ড এনে তারা মূলত দলের জন্য ব্যবহার করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দল তৈরি করে ছাত্রলীগের মধ্যে তাদের প্রবেশ করিয়ে দেয়া। তার ব্যানারে সরকারি চাকরি নেয়া। আবার হেফাজতের মধ্যেও তাদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে।

হারুনুর রশিদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকে তারা তাদের কর্মী, দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ম্লান করে অপপ্রচার চালাবে এমনও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এজন্য বিদেশে তাদের একটি শক্তিশালী সাইবার ইউনিট রয়েছে। তারা বিদেশে বসে জামায়াতের হয়ে সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মী বিদেশে গিয়েছেন। তারা সেখান থেকে প্রতি মাসেই দলের জন্য বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়ার পর দেশব্যাপী একটি তালিকা করা হয়েছে। ওই তালিকা ধরে জামায়াত নেতাদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এমনকি জেলার পুলিশ সুপারদের কাছেও তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা ধরে গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমিরসহ তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, নোয়াখালী জেলা আমির মাওলানা আলাউদ্দিনকে তার চৌমুহনীর বাসা থেকে এবং একইভাবে জেলা জামায়াতের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসিমুল গনি মহল চৌধুরী ও চৌমুহনী ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত কর্মী মো. ফখরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। একইভাবে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন নগর জামায়াতের বায়তুল মালবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, নগর জামায়াতের সহ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, নগর শিবিরের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মিফতাহুল আলম, নগর শিবিরের সাথী ইরফান ইউনুস, জামায়াত কর্মী ইমরান আলী, মো. দেলোয়ার ও মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় জামায়াতে ইসলামীর রুকন হুমায়ুন কবিরকে। তিনি নগরীর মতিহার থানার ধরমপুর এলাকার মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হুমায়ুন কবিরের নামে নগরীর বিভিন্ন থানায় ৯টি নাশকতার মামলা রয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি সুজা মিয়া, বেলকা ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া, জামায়াত কর্মী মিজানুর রহমান ও মনোয়ারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ