দেশে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি কমছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বিনিয়োগ কমার মূল কারণের মধ্যে রয়েছে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত দেড় দশক একচেটিয়া সুবিধা নিয়েছে সরকার-ঘনিষ্ঠরা, বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, বিনিয়োগ বাড়াতে এখন সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন জরুরি।
২০১৬-১৭ অর্থবছর জিডিপির অনুপাতে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ২৩ দশমিক ৬৬ ভাগ। এরপর বিনিয়োগে তেমন গতি না আসায় বিদায়ী অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ২৩ দশমিক ৫১ ভাগে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বেসরকারি বিনিয়োগে সুবাতাস আসেনি। চলতি বছরের অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৮ শতাংশের ঘরে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচি ও পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের বাণিজ্যনীতি কেমন হবে, তা ভাবনায় রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। সেইসঙ্গে তাঁরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দফায় দফায় সুদের হার বাড়াচ্ছে। এতে বাড়ছে ব্যবসার খরচ, কমছে বিনিয়োগ।
ফরেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ হওয়াটা স্বাভাবিক। আমি জানি কিছু বিনিয়োগকারী আছেন, যারা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তাঁরা একটু রয়ে সরে সামনে আগাচ্ছে।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘যেখানে আমাদের বেসরকারি সেক্টরে ক্রেডিট ছিল ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ। সেখানে সেই গ্রোথ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশে। তার অর্থ, দেশে কোনো বিনিয়োগই হচ্ছে না এখন।’
গত দেড় দশকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সরকার ঘনিষ্ঠরা বিশেষ সুবিধা নিয়েছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। তারা বলছেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যাংক, কাস্টমস, সরকারি সেবা সংস্থায় হয়রানির শিকার হয়েছে। যা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিনিয়োগের পরিবেশ।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য সেলিম রায়হান বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে গিয়েছিল। অতীতের সরকারের সেসব জায়গায় সংস্কারের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এবং সংস্কারে আগ্রহ ছিল না এর বড় কারণ ছিল, মুষ্টিমেয় গোষ্ঠী সংস্কারের বিরোধিতা করেছে। এখন এই সরকারের বড় করণীয়, এসব বাঁধা দূর করে ফেলা।’
গত চার দশকে জিডিপিতে শিল্পের অবদান দ্বিগুণ হয়েছে। অনেকটাই কমেছে কৃষিতে কর্মসংস্থান। তাই বেসরকারি শিল্প-বিনিয়োগ না বাড়লে বেকারত্ব বাড়ার আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।
নয়াশতাব্দী/ইএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ