যেসব চ্যানেল ক্লিন ফিড সেবা দেয় তাদের সম্প্রচারে কোনো বাধা নেই। এমনকি আকাশ ডিটিএইচেও এসব চ্যানেলের সম্প্রচার কখনো বন্ধ ছিল না। শুধু ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) পুরো খাতকে জিম্মি করার জন্য এসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। কোয়াবের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ দর্শকরা। সরকার বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে। কোয়াব বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
২৪টির বেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিন ফিড দেয়। সুতরাং এগুলো চালানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ২৪ চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে- বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, টেন স্পোর্টস, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দুবাই স্পোর্টস, মাস্তি টিভি, বিফরইউ মিউজিক, এমটিভি, স্টার স্পোর্টস ১, স্টার স্পোর্টস ২, স্টার স্পোর্টস ৩, ৪।
জানা গেছে, ২৪টির বেশি বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিন ফিড বা বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার সেবা দেয়। তারপরও এসব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের পেছনে রয়েছে কোয়াবের একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখার কৌশল। এই খাতকে পুরোপুরি জিম্মি করে নিজেদের আখের গোছাতে চাচ্ছে সংগঠনটি।
তবে এসব এখন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চুপ সংগঠনের নেতারা। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত। যদিও বিষয়টি নিয়ে সরকারকে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে।
সাইফ হাসান নামের এক দর্শক নয়া শতাব্দীকে বলেন, বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে কোয়াব তাদের আধিপত্যকে জাহির করার চেষ্টা করেছে। যাতে সরকার বাধ্য হয়ে বিজ্ঞাপনসহ চ্যানেল সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়! যা রীতিমতো অন্যায়। এখন সরকারের উচিত হবে আরো কঠোর হওয়া। ইতোমধ্যে কোয়াবের জোচ্চুরি ফাঁস হয়ে গেছে। ২৪ চ্যানেল ক্লিন ফিড দেয়ার পরও তারা এসবের সম্প্রচার বন্ধ রেখে আইন ভেঙেছে। আমরা কোয়াবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছি। তিনি বলেন, এত দিন কোয়াব সবাইকে ভুল বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যা তথ্যমন্ত্রীর কথায় প্রকাশ পেয়েছে।
ক্লিন ফিড দেয়া ছাড়া বিদেশি টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রাখায় সরকারকে আগেই অভিনন্দন জানিয়েছেন সাংবাদিক সংগঠন, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)-এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানতে পেরেছি, বিদেশি যেসব চ্যানেল ক্লিন ফিড দিচ্ছে, গতকাল ১৭টি চ্যানেলের কথা বলেছিলাম। আসলে ১৭টি নয়, ২৪টির বেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিন ফিড দেয়। সুতরাং এগুলো চালানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আকাশ ডিটিএইচ এসব চ্যানেল সম্প্রচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যদেরও এগুলো চালানোর ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এ বিষয়ে কোনো চিঠির প্রয়োজন হলে আমরা তা ক্যাবল অপারেটরদের কাছে পাঠাব। যদি এরপরও কেউ এগুলো না চালায় তাহলে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হবে। সুতরাং শর্ত ভঙ্গের কাজ কেউ করবেন না।
বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চ্যানেল বন্ধ করতে বলা হয়নি বলেও জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু বলেছিলাম, বাংলাদেশের আইনানুযায়ী, যা পৃথিবীর সব দেশেই আছে। সেটি হচ্ছে বিদেশি চ্যানেলকে অবশ্যই বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার করতে হবে এবং সেটি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আমেরিকা সব জায়গায়ই মানা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মানা হচ্ছিল না। আইনটি মানার জন্য দুই বছর ধরে তাগাদা দেয়া হচ্ছিল। তিনি বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় আগে আমরা বৈঠক করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল, ১ অক্টোবর থেকে আমরা আইনটি কার্যকর করব। তিনি আরো বলেন, একটি মহল থেকে ক্লিন ফিড নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমি আশা করব, তারা বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
সরকার আইন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী আরো বলেন, জনগণের স্বার্থে, মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, শিল্পী-কলাকৌশলী, সাংবাদিক সবার স্বার্থে এ আইন কার্যকর করেছি। সুতরাং সবার স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ অবস্থান নেবে সেটি কাম্য নয়। এর আগে ক্লিন ফিড বাস্তবায়নের জন্য তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান অ্যাটকোর নেতারা।
২৪ বিদেশি চ্যানেলের মধ্যে রয়েছে বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা এইচডি, ডিডাব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কুরান, আল সুন্না, টেন স্পোর্টস, ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, দুবাই স্পোর্টস, মাস্তি টিভি, বিফরইউ মিউজিক, এমটিভি, স্টার স্পোর্টস ১, স্টার স্পোর্টস ২, স্টার স্পোর্টস ৩, ৪।
গত এপ্রিল মাসের দিকে দেশে বিজ্ঞাপনসহ কোনো বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার না করার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল সরকার। তবে সেটা পিছিয়ে গত ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়। ওইদিন থেকে বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।
অক্টোবর মাসের শুরুর দিন থেকে বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনমুক্ত ক্লিন ফিড অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিশ্চিত করার সরকারি ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনমুক্ত শুধু ক্লিন ফিড সম্প্রচারের আইন আগে থেকে থাকলেও এত দিন তা কার্যকর হয়নি।
এর ফলে একদিকে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর বিজ্ঞাপনের বাজার সংকুচিত হয়েছে, অন্যদিকে বিদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হলেও এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোনো রাজস্ব জমা হয়নি। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের তথ্যানুযায়ী, বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সরকার বছরে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা করে রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। দেশের শিল্প ও সেবা খাত যেখানে বিপুল টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য ও সেবার প্রচার চালাতে হচ্ছে, সেখানে, বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন দেখিয়ে, বাড়তি কোনো টাকা খরচ না করেই দেশের বাজারে ভিনদেশি পণ্যের বিশাল চাহিদা তৈরি হয়েছে, যা দেশীয় শিল্প ও সেবা খাতকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন না দিয়ে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এর ফলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এসব টেলিভিশনের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগও হুমকির মুখে পড়ছে। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের তৈরি করেছে। এসব চ্যানেলের সংবাদ ও বিনোদনমূলক নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন নতুন শিল্পী কলাকুশলীও তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারছেন। তাই দেশীয় চ্যানেলগুলোর যাত্রা ব্যাহত হলে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পাশাপাশি, অসংখ্য মানুষের জীবিকাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ