কথার জাদুকর স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন আজ। একাধারে কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি, গীতিকার হিসেবে সৃজনশীলতা ও মনোরঞ্জনের অতুলনীয় মেলবন্ধন ঘটিয়ে কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তায় তিনি এ দেশের মধ্যবিত্ত জীবনের বিচিত্র কথকতাকে সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন প্রায় পাঁচ দশক ধরে।
আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সেই কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতার জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর তার জন্ম নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তার বাবা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ।
প্রতি বছরই প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে সকাল থেকে তার হাতেগড়া নুহাশ পল্লীর লিচু তলায় ভিড় করতে শুরু করেন ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনেরা। ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করেন জনপ্রিয় এই লেখক-নির্মাতাকে।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্যদিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পথিকৃৎ।
ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন এবং নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিমার রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। বিদেশে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে এসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালে লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’। এই উপন্যাস দুটির কারণে তখনকার সাহিত্যবোদ্ধা মহলে বেশ প্রশংসিত হন তিনি।
এরপর দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের লেখকজীবনে নিজেকে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তায় শীর্ষে নিয়ে যান। গল্প বলার অসামান্য ভঙ্গির কারণে ‘গল্পের জাদুকর’ হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। তার লেখা গল্প-উপন্যাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনধারার নিঃসংকোচ বর্ণনা পাওয়া যায়।
দুই শতাধিক উপন্যাস লিছেন হুমায়ূন আহমেদ। এর মধ্যে রয়েছে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘দেয়াল’, ‘বাদশাহ নামদার’, ‘কবি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘লীলাবতী’, ‘গৌরীপুর জংশন’, ‘নৃপতি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নক্ষত্রের রাত’ ইত্যাদি। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলী’ ব্যাপক আলোড়ন তোলে। সায়েন্স ফিকশন এবং কিশোর গল্প লিখেও তিনি দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন। গল্প ও উপন্যাসের মতো হুমায়ূন নির্মিত নাটক ও চলচ্চিত্রও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পায়। ‘আজ রবিবার’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ তাঁর জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র।
সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অগণন পুরস্কার লাভ করেন। একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি কবি শামসুর রাহমান সেমিনারকক্ষে আজ বিকেল ৪টায় সেমিনারের আয়োজন করেছে। এতে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক ড. সরকার আমিন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক আহমেদ মাওলা ও অধ্যাপক সুমন রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ