ঢাকা, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৬

পাহাড়ে অস্থিরতা 'নেই' পর্যটক, সংশ্লিষ্টদের কপালে ভাঁজ

প্রকাশনার সময়: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৩১

সহিংসতা ও অস্থিরতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে রাঙামাটির পর্যটন খাত। এখানে সারাবছর পর্যটকে মুখরিত থাকলেও চিরচেনা সেই দৃশ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে রাঙামাটিতে পর্যটকশূন্যতা বিরাজ করছে। এতে রুমগুলো 'ফাঁকা' পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকবাহী গাড়ির চালকরা। যার ফলে পর্যটক সংশ্লিষ্ট খাতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।

গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতার ঘটনায় তিনদিনের অবরোধের ডাক দেয় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্রসমাজ। এতে সাজেক ভ্রমণে গিয়ে আটকা পড়ে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। তিনদিন পর তারা সাজেক ছাড়তে পারলেও পর্যটকদের জন্য অনেকটাই দরজা বন্ধ হয়ে যায় সাজেকের। ২৪ সেপ্টেম্বর আটকা পড়া পর্যটকরা সাজেক ত্যাগের পরই রাঙামাটির জেলা প্রশাসন সেখানে ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেন।

এরপর সাজেকের সেই অবরুদ্ধ দুয়ার তিন দফা বাড়ানো হলেও গত ৪ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়। এতে গত এক মাস ধরে পর্যটক নেই সাজেকে। সব মিলিয়ে সাজেকের পর্যটনে বর্তমানে লোকসান বহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। লোকসান কমাতে অনেকেই স্টাফদের ছুটিতে পাঠিয়েছে, কারো চলে গেছে চাকরি।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের মাচালং হিজিং পাড়ায় দুই আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও চুক্তি পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, দুর্গম সাজেক হিজিং পাড়ায় জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপের উপর অর্তকিত হামলা করে ইউপিডিএফ প্রসিত সশস্ত্র গ্রুপ। এসময় জেএসএস পাল্টা জবাব দিলে উভয়ের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। দু’জন নিহত হয়েছেন দাবি করা হলেও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

একদিকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি বাঙালি সহিংসতার ঘটনায় পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়ার মধ্যেই সাজেক হিজিং পাড়ায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সবমিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেও স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে প্রশাসন। বার বার এমন ঘটনা ঘটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন খাত। এ সংকটের অবসান চান পর্যটক নির্ভর মানুষগুলো। বারবার যাতে এমন ঘটনা না ঘটে এজন্য সরকারের উচ্চ মহলের নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এর আগে জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দেশে উদ্ভত পরিস্থিতির অস্থিরতা, আগস্টে বন্যা এবং সবশেষ পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, সাজেকের মাচালং হিজিং পাড়ায় দুই আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় ওই এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার প্রভাব পর্যটকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি বাঙালি সহিংসতার ঘটনায় পর্যটনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল চাকমা জন গণমাধ্যমকে বলেন, 'সাজেকের ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে। পর্যটক নেই, অথচ স্টাফের বেতন, ভাড়া, বিদ্যুৎ ও পানির বিল সবকিছু তো বন্ধ নেই। এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারে। দুইদিন পরপর একেকটা সমস্যা সৃষ্টি হয়, আর সাজেকে পর্যটক ভ্রমণ বন্ধ হয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু লোকসান রিসোর্ট-কটেজ কিংবা রেস্টুরেন্ট মালিকদের হচ্ছে না, পর্যটকদের বহনে জিপ চালক, হেলপারদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। সাজেকে স্থানীয় পাহাড়িরা তাদের বাগানে উৎপাদিত ফলমূল, বাঁশকোড়লসহ হাতে বানানো অনেককিছুই বিক্রি করে, তাদের আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলমূলগুলো পচে যাচ্ছে।'

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটি দেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এই ব্যবসায় অনেক লোক নিয়োজিত। তাই এই আদেশ যাতে আর না বাড়ে সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি অচিরেই সেই সুখবর পাবেন।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের দু’টি আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির টাকা ভাগবাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে তারা। পাহাড়ে এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছুই না। তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় সময় সশস্ত্র আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি বাঁধে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ