বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ধ্বংসে অনুমোদিত এজেন্সির অন্তরালে অসাধু চক্র

প্রকাশনার সময়: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৫৯

রিক্রুটিং এজেন্সির গাফিলতি, এজেন্সিগুলোকে নিয়ন্ত্রণাধীন সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিসহ নানা কারণে গত ১মে মালয়েশিয়ায় যেতে পারেনি প্রায় ১৭ হাজার কর্মী। এছাড়াও স্বল্প সময়ের মধ্যে বহু সংখ্যক কর্মীর জন্য বিমানের টিকেট নিয়োগকারীর কাছ থেকে কর্মীদেরকে বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পর রিসিভ করার নিশ্চয়তা না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিএমইটি ছাড়পত্র প্রাপ্ত এসকল কর্মী গেলো ৩১ মে এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় গমন করতে পারেননি।

এ ঘটনায় জড়িত ১০১টি রেক্রুটিং এজেন্সিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হলেও আড়ালে থেকে গেছে অনুমোদনহীন সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।

মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের পাওনা পরিশোধের জন্য ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে কর্মীদের পাওনার ইস্যুটি কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে একটি অসাধু চক্র মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ধ্বংসের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে চক্রটি- এমনটা দাবি একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের।

২০২২-২৪ বছরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরকারি খাতের BOESL সহ ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়া সরকার সেদেশে কর্মী প্রেরণের অনুমোদন দিলেও অনুমোদন ছাড়া অবৈধ ১১০০ এর অধিক লাইসেন্সধারী রিক্রুটিং এজেন্সি অবৈধভাবে ভিসা ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। এতে কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা।

অর্থ ফেরতদের জন্য দুই দফা সময় বেঁধে দেওয়া হলেও মালয়েশিয়াগামী অনেক কর্মী তাদের অর্থ বুঝে পাননি। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

১০১টি রেক্রুটিং এজেন্সি সরাসরি কর্মীদের কাছ থেকে অর্থ না নিয়ে সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সির নিকট থেকে অর্থ নিয়েছে। অর্থ ফেরত প্রক্রিয়ায় সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি গুলোকে সম্পৃক্ত করা না গেলে কর্মীদের অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের দায়-দেনা পরিশোধপূর্বক প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট ১০১টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অবহিত করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানান, শ্রমিকদের অর্থ ফেরত দেওয়া নিয়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। একটি শ্রেণী মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের নানামুখী প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে অর্থ আদায় করে দেওয়ার কথা বলে এজেন্সি মালিকদের হয়রানি করছে।

তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে দিয়েছে। এর মধ্যে মূল রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। বাকী ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা গেছে সহযোগী এজেন্সি ও দালালদের হাতে। তবে, সব টাকা মূল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী গুছিয়ে নিচ্ছে তাদের ব্যবসা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সাথে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে।

তবে অনুমোদিত এজেন্সিগুলো বলছে, বাংলাদেশ ও মায়েশিয়া সরকার বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এর আওতায় ২০২২ সালের ২ জুন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিং-এ অনলাইন ভিত্তিক স্বচ্ছ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সরবরাহ করা এজেন্সি থেকে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক সীমিত সংখ্যক এজেন্সি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত ১ হাজার ৫২০টি বৈধ লাইসেন্স এর মধ্য থেকে মালয়েশিয়া সরকার প্রথমে ২৫টি ও পরে সরকারি খাতের BOESL সহ ১০১টি লাইসেন্স তালিকাভুক্ত করে।

মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশসহ মোট ১৫টি সোর্স কান্ট্রি হতে গত ১ জুন থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে ইস্যু করা কোটার সংখ্যা ইকোনমিক প্ল্যানিং ইউনিট অনুমোদিত বৈদেশিক কর্মীর সর্বমোট লক্ষ্য মাত্রা (২৫ লক্ষ) অতিক্রম করায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ গত ১ মার্চ একটি সার্কুলারের সকল সোর্স কান্ট্রি হতে কোটাপ্রাপ্ত বৈদেশিক কর্মীদেরকে ৩১ মে'র মধ্যে প্রবেশের সময় নির্ধারণ করে।

তারপরও শুধুমাত্র বাংলাদেশ হতে মে মাসে গমন করেছে ৪৫,০৩১ জন কর্মী। অন্যদিকে অন্য সকল ১৪টি সোর্স কান্ট্রি হতে মে মাসে গমন করেছে মাত্র ৪৪,০৭৫ জন কর্মী।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৩১ মে পর্যন্ত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটি থেকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন মালয়েশিয়ায় গেছেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার হিসাব মোতাবেক গেছে ৪৭২৪৭৬ জন কর্মী।

মালয়েশিয়ার সরকার তালিকাভুক্ত এজেন্সি গুলোর বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচার মালয়েশিয়ার নিকট তাদের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বৈধ ও তালিকাভুক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে অযাচিত তদন্ত ও অপপ্রচারের কারণে নিয়োগকারী দেশের বিরূপ প্রভাব পড়ছে, যা কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে।

এতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিটেন্স প্রবাহসহ জনশক্তি রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান একাধিক এজেন্সি মালিক।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ভালো এজেন্সিগুলোকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করলে এই সেক্টরের অস্থিরতা কমবে এবং শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত হবে। এতে অভিবাসন ব্যয় কমবে এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলেও ধারনা তাদের।

দেশের স্বার্থে বৈধ ও তালিকাভুক্ত এজেন্সিদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানিকে উৎসাহিত করা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মালয়েশিয়া সরকারের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের কর্মীদের কর্মসংস্থান এর সুযোগ গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ