ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাজার নিয়ন্ত্রণহীন

প্রকাশনার সময়: ০২ অক্টোবর ২০২১, ০৫:২৬

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। ধনীদের জন্য বাজারে সাজিয়ে রাখা সব পণ্য। যেখানে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। শুধু আলু, কচুরমুখী ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে।

সবচেয়ে কমদামি চালও ৫০ টাকার ওপরে। চিকন ও মাঝারি চাল ৭০ টাকার কাছাকাছি। কাঁচামরিচ ২২০ টাকা কেজি। এমন পরিস্থিতিতেও নতুন করে বেড়েছে চাল, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ-ময়দাসহ অন্তত একডজন পণ্যের দাম। সেইসঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম এবং মাছ। তবে অপরিপর্তিত আছে সবজির দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে থেকেই বাড়তি ব্রয়লার মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আরো ৫ টাকা করে বেড়েছে। পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। শিমের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমলেও অন্যান্য সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাজারে এখনো বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। শুধু কচুরমুখী ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে। এ দুটি সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। গত শুক্রবার পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫ টাকা। এমনকি গত বৃহস্পতিবারও বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা বিক্রি হয়।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে বাড্ডার ব্যবসায়ী জাহিদ বলেন, হঠাৎ করেই পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এক দিনে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। আমার পেঁয়াজ আগে কেনা, তাই ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আজকে পেঁয়াজ ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করার সুযোগ নেই।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নোয়াব আলী বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এ কারণে ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তাই আমাদের এখন বাড়তি দামে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সামনে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে।

এদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ৭ টাকার বেশি। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে ময়দা ৩৫ টাকা কেজি পাওয়া যেত, এখন সেই ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ১৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। ব্রয়লার মুরগির মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম চলতি মাসে দফায় দফায় বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম নতুন করে বাড়েনি। মুরগির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. আল আমিন বলেন, সবধরনের মুরগির দাম বাড়ায় এখন বাজারে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি। তাছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে বিক্রি বাড়ায় মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এ কারণেই মুরগির দাম বাড়তি। মুরগির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আর মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। এক কেজি গাজর ১২০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে গাজরের দাম কেজিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ সবজিটির দাম সপ্তাহের ব্যবধানেও অপরিবর্তিত রয়েছে।

এ তিন সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, পটোল, করলা। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

শিমের পাশাপাশি বাজারে আসা শীতের আগাম সবজি মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও বেশ চড়া। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাক, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।

খুলনায় কাঁচামরিচের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি, বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় কয়েক দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর সবজির দাম কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে তিন থেকে চার টাকা। পর্যাপ্ত সবরবরাহ থাকলেও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন এসব পণ্যের।

নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, কুশি ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা, রসুন ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগেও নগরীর বাজারে মানভেদে কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, ঝিঙে ৩০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, কুশি ৩০ টাকা, আলু ২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, পটোল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। তথ্যমতে, ভারত থেকে দেশে কাঁচামরিচ আসছে প্রতি কেজি ৫০ রুপিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম পড়ছে ৬৫ টাকার মতো। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতি কেজিতে ২২ টাকা শুল্ককর। প্রতি কেজিতে ফড়িয়াদের পেছনে খরচ হচ্ছে ৩ টাকা। বেনাপোল, সোনামসজিদ এসব স্থলবন্দর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে আসতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে আরো ১০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কেজি ভারতীয় কাঁচামরিচের দাম পড়ছে ১০০ টাকা।

নগরীর কেসিসি সন্ধ্যাবাজারের ক্রেতা মৎস্য ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান ও কলেজশিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তিন-চার দিনের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কেজিপ্রতি অন্তত ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এক মাস আগেও দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এভাবে দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ কিনবে কীভাবে?

কেসিসি সন্ধ্যাবাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও হায়দার আলী বলেন, কাঁচামরিচের সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ বেড়ে গেলে হয়তো দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

নয়া শতাবব্দ/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ