ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘বিআরপি’ নিয়ে মাঠে নুর-রেজা

প্রকাশনার সময়: ০২ অক্টোবর ২০২১, ০৫:০৭

অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে আসছে নতুন একটি রাজনৈতিক দল। তৃতীয় ধারার নতুন এই দলের নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ অধিকার পার্টি (বিআরপি)’। চলতি অক্টোবর মাসেই ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। এ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না পারলেও যে কোনো অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন এই দলের নাম ঘোষণা হতে পারে।

জানা যায়, ‘জনতার অধিকার আমাদের অধিকার’ এই স্লোগান নিয়ে এই দলের নাম হবে ‘বাংলাদেশ অধিকার পার্টি (বিআরপি)।’ যদিও ‘গণ-অধিকার পরিষদ’ নামের আরেকটি প্রস্তাবও রয়েছে। তবে বিআরপি নামটিই বেশি পছন্দ সংশ্লিষ্টদের। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক ওই দলের উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন। আহ্বায়ক কমিটি হলে রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক এবং নুরুল হক সদস্য সচিব হবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে ড. রেজা সভাপতি ও নুরুল হক হবেন সাধারণ সম্পাদক। তবে গুরুত্বপূর্ণ নেতার সংখ্যা বেশি হলে ‘নীতিনির্ধারণী পরিষদ’ বা উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিও গঠন করা হতে পারে। নতুন এই দলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে আরো যারা থাকছেন তারা হলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গির, অধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। সামাজিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার হাবিবুর রহমান ও হাসিবুর রহমান থাকছেন নতুন দলে। তবে এতে থাকছেন না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি। তবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী পরামর্শক হিসেবে থাকতে পারেন।

সূত্রমতে, আলোচিত এসব নেতার বাইরেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে নুরুল হকের দল। সাবেক একজন সেনাপ্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন প্রবীণ অধ্যাপক, বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন সদস্য ও নির্বাহী কমিটির এক সদস্য এবং একজন আইনজীবী নেতার সঙ্গেও আলোচনা চলছে সম্ভাব্য ওই দলের। তবে কৌশলগত কারণে এখনই ওই সব নেতা ও ব্যক্তি সামনে আসছেন না। বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা সামনে আসবেন।

ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা বলেন, এখন পর্যন্ত ‘গণ অধিকার পরিষদ এবং বাংলাদেশ অধিকার পার্টি নাম দু’টি নামে রয়েছে চূড়ান্ত আলোচনায়। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নীতিনির্ধারণী পরিষদে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, ফারুক খানসহ অন্যরা থাকবেন। নতুন দল হিসেবে আরো গ্রহণযোগ্যতা ও মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার নাগরিকরা তাদের রাজনৈতিক দলে থাকবেন। এছাড়াও অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও দলে যোগ দিতে পারেন।

এ বিষয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, মূল দুই পদের একটিতে আমাদের বাইরের কেউ আসতে পারেন। কিন্তু কে আসবেন এই মূহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আরেক সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে আমরা দল গঠন করতে চাই। জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে পথ চলতে চাই। এই সবকিছুই এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে নজরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল হক নূর। এরপর ওই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন করে ভিপি পদে জয়ী হন তিনি। এরপর থেকেই মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় নুর। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনায় সরব তিনি। গত মাসে ঘোষণা দিয়েছেন নতুন একটি রাজনৈতিক দল করার। এরই মধ্যে পাঁচটি সংগঠন গঠন করেছেন নূর। সেগুলো হলো- ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ এবং পেশাজীবী অধিকার পরিষদ। নুর বর্তমানে এই সংগঠনগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন।

জানতে চাইলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের পুরো রাষ্ট্রের অবকাঠামোতে অনেক খুত আমরা ধরতে পেরেছি। আমার মনে হয় বড় ধরনের একটা পরিবর্তন দরকার। দেশটা পরিচালিত হচ্ছে গুটিকয়েকজনকে সুবিধা দেয়ার জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষকে এখানে চরমভাবে অবহেলা করা হচ্ছে। আর গণতন্ত্র থেকে আওয়ামী লীগ সরকার কত দূরে চলে আসছে সেটা সবারই জানা। যে দল শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক এখন সেই দলেরই প্রয়োজন। আর এই তরুণদের আদর্শ, নিষ্ঠা এবং সততা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি আশা করি- তাদের দ্বারাই এই দেশে পরিবর্তন আসতে পারে।

তিনি জানান, ভবিষ্যতে নুরের রাজনৈতিক দলে থাকছেন তিনি। এটা চূড়ান্ত। তবে নেতৃত্বে আসছেন কিনা, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমরাই প্রথম শক্তি হব। আওয়ামী লীগ চতুর্থ শক্তি হয় কিনা সেটিই সন্দেহ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এই দল কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে, এমন প্রশ্নে রেজা কিবরিয়া আরো বলেন, দলের উত্থান-পতন হতেই পারে। এককালে মুসলিম লীগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ দল ছিল। আর এখন মুসলিম লীগের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাই না। ইংল্যান্ডের লেবার পার্টি মাত্র ছয়জন দিয়ে শুরু করেছিল পরে তারা ক্ষমতায় গেল। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও এখন গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে এসেছে। আমি মনে করি- এই দলে আদর্শবান ছেলেমেয়ে আছে। ওদের নিয়ে আমি আশাবাদী।

জানতে চাইলে নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমান সময়ে যে দলগুলো আছে তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও মূলত তারা পরিবারকেন্দ্রিক বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই দলগুলো যখন ক্ষমতায় যায় তখন বাংলাদেশে এক নায়কতন্ত্র কায়েম করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ এটাকে ভালো চোখে দেখে না এবং সমর্থনও করে না।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ