ব্যবহার না হওয়ায় রেলওয়ের প্রকল্প থেকে টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে ফেরত যাচ্ছে রেলওয়ের ব্যয়বহুল তিন প্রকল্প থেকে ৭ হাজার কোটিরও বেশি টাকা। প্রকল্পগুলো হলো— পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ ও যমুনা সেতু নির্মাণ প্রকল্প। তবে দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ গত বছর নভেম্বরে শেষ হয়েছে। আর চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি দু’টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ওসব প্রকল্প থেকে প্রায় ৭ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। মূলত অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও লাভের অংশ বণ্টনের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে জানা যায়। আর পদ্মারেল সংযোগ ও কক্সবাজারে ডাবল লাইন নির্মাণ না হওয়ায় রেলযাত্রীরা প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের একটি অংশ ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত গত বছর ১ নভেম্বর চালু করা হয়েছে। বাকি অংশ ভাঙা থেকে যশোর পর্যন্ত আগামী নভেম্বরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া গত বছর নভেম্বরে দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা ব্যয় করেও ওই দুই রেলপথ সিঙ্গেল (একক) লাইনে নির্মিত হয়েছে। মূলত প্রশাসনিক অদক্ষতা ও অক্ষমতার কারণেই এমন হয়েছে। অথচ কারণ পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প ও কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয়িত টাকা দিয়ে ওই পথে ডাবল রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব হতো বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাদের মতে, অক্ষমতা ও দুর্বলতার কারণেই পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্পটি ডাবল লাইন নির্মাণ করা যায়নি। আশপাশের দেশে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে যে খরচ হয় তা বিবেচনা করে পরিকল্পনা নেয়া হলে এই খরচেই পদ্মা সেতুসহ যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি ডাবল লাইন করা সম্ভব ছিল। কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রেলপথটি ডাবল লাইন করা হয়নি। যাত্রীদের চাহিদা থাকার পরও কক্সবাজার রুটে পর্যাপ্ত ট্রেন দেয়া যাচ্ছে না। লাইন দিয়ে ট্রেন চালানোর জন্য রেলওয়ের পর্যাপ্ত কোচ ও ইঞ্জিন নেই।
সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে রেলওয়ে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। এ প্রকল্পে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার সিঙ্গেল (একক) রেলপথ নির্মাণ করা হয়। যা চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ডিপিপি সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ প্রকল্প রিভিউর মাধ্যমে প্রায় ৬২১ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। তাছাড়া রেলওয়ের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল প্রকল্প হলো চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গত বছরের নভেম্বরে শেষ হয়। প্রকল্পটি ২০১০ সালের ১ জুলাই শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর ডিপিপি অনুমোদনের সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করার কথা ছিল। পরবর্তীতে রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ বাদ দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও ব্যয় না কমিয়ে উল্টো বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সর্বশেষ রিভিউর মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৬ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানা যায়। তাছাড়া রেলওয়ের তৃতীয় ব্যয়বহুল প্রকল্প যমুনা রেল সেতু। যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর পশ্চিম অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে যমুনা রেলসেতু। প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ৪ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের ডিপিপি একদফা সংশোধন ২০২০ সালের ৩ মার্চ একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়। ইতোমধ্যে রেল সেতুটির ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই প্রকল্প থেকেও ১০০ কোটি টাকা বেশি উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানা যায়। এদিকে এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহদাত আলী জানান, পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্পের পুরো কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষ দিকে ভাঙ্গা-যশোর অংশে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। এ ছাড়া রেলওয়ের আরেকটি মেগা প্রকল্প যমুনা রেলসেতুর কাজও শেষ পর্যায়ে। এ বছরের মধ্যে যমুনা রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা যাবে। তবে প্রকল্প দু’টি উদ্বোধনের দিন তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ