ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নকল খাদ্যপণ্যে সুস্থতা ‘কোণঠাসা’

প্রকাশনার সময়: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪

দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে নকল খাদ্যপণ্য। আর অতি লাভের আশায় দোকানিরাও ওসব পণ্য বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাপক হারে নকল খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতের কারণে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। আর অর্থনীতিকে ফেলছে হুমকির মুখে। সূত্র বলছেন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাজারে। যারা এসব পণ্য তৈরি করছেন, তারা দাম কমিয়ে দোকানিদের প্রলোভনে ফেলছেন। দোকানিরা কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে এ ফাঁদে পা দিচ্ছেন, যার পরিণতিতে ঠকছেন ক্রেতারা। নিম্নমানের এসব খাদ্যপণ্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব ভেজাল পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শিশু খাদ্যও।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ভেজাল খাবারের কারণে শিশুর পেটব্যথা ও চর্মরোগসহ নানা রকম রোগের উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঝুঁকি আছে শিশুর কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার। শিশুর ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে এসব খাদ্য। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছে কিন্তু থামছে না এই নকল পণ্যের দৌরাত্ম্য।

রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল, লালবাগ, ইসলামপুর, চকবাজার, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ও বছিলা এলাকায় নকল খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানা বেশি। বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও তার প্রমাণ মিলেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব নকল পণ্য যারা তৈরি করে তাদের একটা অংশ নির্দিষ্ট চক্রের সদস্য, যারা ছোট ছোট বাসা বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কারখানা চালায়। অভিযানে তাদের কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে নতুন কোনো বাসা ভাড়া নিয়ে আবারো একই কাজ করে তারা।

এক গবেষণার সূত্র মতে ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতি বছর দেশে কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষ ক্যান্সারে, ২ লাখ মানুষ কিডনি রোগে এবং দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা

হিসেবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) গঠন করা হয়। দেশের আইনে খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিএসটিআইর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মান সংস্থার অনুমতি ছাড়া অনেকেই নিম্নমানের ও নকল খাদ্যপণ্য তৈরি করছে। নিয়মিত অভিযানে তা ধরা পড়ছে। খাদ্যপণ্যে নকল ও ভেজাল রোধে বিভিন্ন সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘অবৈধ এসব ব্যবসা বন্ধে বিএসটিআইর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। পাশাপাশি নিয়মিত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও মামলা হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রতিরোধে ভোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। ভোক্তারা অভিযোগ করলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আরো সুযোগ তৈরি হবে। জনগণ সচেতন না হলে নকল পণ্য বন্ধ করা কঠিন। সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠলেই এ কাজ ত্বরান্বিত হবে। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুখাদ্য, প্রসাধনী সামগ্রী, ওষুধ ও তামাকজাতসহ নকল পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। নকল প্রতিরোধে এর উৎসে যেতে হবে। উৎসে গিয়ে বন্ধ করলে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ