এখনো দেশি-বিদেশি অতিথি খরায় ভুগছে ঢাকার বিলাসবহুল হোটেলগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে এ খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে পুঁজি টিকিয়ে রাখার লড়াই চলছে।

জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ইভেন্ট কমে যাওয়া, করপোরেট অতিথির সংখ্যা কম থাকা, বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের জারি করা ভ্রমণ সতর্কতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী দু’এক মাসের মধ্যে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনের বিক্রয় বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মদ জি জিসান বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে অতিথির সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা থাকে ৭৮ থেকে ৮০ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত ব্যবসায়ীরা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রুম বুকিং দিয়ে থাকেন। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অতিথির সংখ্যা অনেক কমেছে।’ বর্তমানে ব্যবসার কাজে যারা ভ্রমণ করছেন তাদের রুম বুকিং ১০ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু অতিথি এলেও তাদের সংখ্যা খুবই কম।

রেডিসন ব্লু’র ২০০ কক্ষের মধ্যে ৫০টি সাধারণত এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো বুকিং দিত। ঢাকা থেকে বিদেশি ফ্লাইটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই সংখ্যাও কমেছে। ‘হোটেলটি পরিচালন খরচ মেটানোর মতো আয় করছে না’ জানিয়ে জিসান বলেন, ‘শুধু রেডিসন নয়, প্রায় সব পাঁচতারা হোটেলের একই অবস্থা। আগামী ছয় মাস এমনটি চলতে থাকলে কয়েকটি হোটেল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ’

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের জনসংযোগ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাফেউজ্জামান বলেন, ‘গত জুলাই থেকে যে অবস্থা চলছে তাতে হোটেল ব্যবসায় মন্দা থাকাটা স্বাভাবিক। আমাদের হোটেলে অতিথি কোনো দিন ২০ শতাংশ আবার কোনো দিন ৩০ শতাংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তা প্রায় ৬৫ শতাংশ থাকে।’

তার মতে, হোটেল ব্যবসা লাভ-লোকসানের মধ্য দিয়েই চলে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা ইভেন্টভিত্তিক। অতিথিভিত্তিক নয়। আগামী মাসে ক্রিকেট দল আসলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’

ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেডের বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। গত ১৮ জুলাই থেকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অনেক বিদেশি বুকিং বাতিল করেছেন।’

গত এক সপ্তাহে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অতিথির সংখ্যা এখনো ৪০ শতাংশের নিচে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পোশাক পণ্যের বিদেশি ক্রেতারা এখনো সফর শুরু না করায় করপোরেট ক্রেতার সংখ্যা কম।’ যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ কয়েকটি দেশ এখনো ভ্রমণ সতর্কতা তুলে না নেয়ায় হোটেল ও আতিথেয়তা শিল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি না হওয়ায় বিদেশিরা ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষ্য, তাদের বেশিরভাগ অতিথি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে আসেন। এ মুহূর্তে তারা বাংলাদেশ ভ্রমণে দ্বিধায় আছেন।

দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার ক্লাস্টার পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার তুহিনূর সুলতানা বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে অতিথির সংখ্যা বেড়েছে। গত দেড় মাসের ভোগান্তির পর ব্যবসা আবার ফিরছে।’ তিনি জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় অতিথির সংখ্যা ১০ শতাংশে নেমে এসেছিল। একের পর এক এক্সপো ও সেমিনারের মতো নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/জিএস