বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে পঞ্চম দল হিসেবে এবার বেরিয়ে গেল কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস।
বিএনপির নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকে কেন্দ্র করে বিরোধের কথা উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার হয়েছে জানায় দলটি।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে একটি রেস্টুরেন্টে দলের সর্বোচ্চ পর্ষদ মজলিসে শূরার বৈঠকের পর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন দলের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।
খেলাফত মজলিসের জোট ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কোনো দলেরই জোট ছাড়ার স্বাধীনতা রয়েছে। স্বতন্ত্র দল হিসেবে যে কোনো দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এদিকে জোট ছাড়ার বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বৈঠকে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় অধিকাংশ নেতা জোট ছাড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। কারণ ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। সে কারণে খেলাফত মজলিস এখন থেকে কোনো জোটের সঙ্গে থাকবে না। তবে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিস জাতির প্রয়োজনে সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামে খেলাফত মজলিস বিশ্বাসী। ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে খেলাফত মজলিস জোটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে। জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির কার্যকলাপে হতাশ তারা। দীর্ঘদিন ধরে জোট নিষ্ক্রিয়।
মাওলানা ইসহাক বলেন, রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক গঠিত হয়। জোট কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে দীর্ঘ ২২ বছর আছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০ দলীয় জোটের দৃশ্যমান রাজনৈতিক তৎপরতা ও কর্মসূচি নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটকে কার্যত রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর করা হয়। এখন থেকে ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় উপস্থিতি নায়েবে আমির জোবায়ের আহমেদ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক মিনহাজুল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব মোনতাছির আলী, আব্দুল জলিল প্রমুখ।
এদিকে, জোটের আরেক শরিক কল্যাণ পার্টিও ২০ দল ছেড়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপিকে। অলি আহমদের এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। বিএনপির শরিকরা জোট ছেড়ে গেলেও তাতে জোটে দলের সংখ্যায় কোনো হেরফের হয়নি। কারণ, যখনই কোনো দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখনই দলের অন্য একজন নেতার নেতৃত্বে একাংশ একই নামে আলাদা দলের ঘোষণা দিয়ে ২০ দলে থেকে গেছেন। বিএনপিও এখন একলা চলো নীতিতে হাঁটতে চাইছে। এমনকি জোট থাকা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার দাবি জোরালো হয়েছে। সম্প্রতি দলের ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানা গেছে। এখন শুধু চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতামতের অপেক্ষায় দলটি।
সূত্রমতে, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে সহিংসতার মামলায় গত ২৪ এপ্রিল গ্রেফতার হন। পাঁচ মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে কারাগারে। ধারণা করা হচ্ছে জোট ছাড়ার পরে তিনি মুক্তি পেতে পারেন। কারণ এর আগে গত ১৪ জুলাই বিএনপি জোট ছেড়ে দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।
এরপর ১৮ জুলাই থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেন ওই দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতারা। বর্তমানে জমিয়তের অধিকাংশ নেতা জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ফলে জমিয়তের মতো খেলাফতও একই পথে অনুসরণ করে নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে চাইছেন।
জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপির কার্যকলাপে হতাশা থেকেই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় খেলাফত মজলিস। তাদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে জোট নিষ্ক্রিয়। বিশেষ করে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর রাজনৈতিক কর্মপন্থা নির্ধারণে ২০ দলের শরিকেরা গুরুত্ব হারায়।
তাছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে তাদের মনে হয়েছে, তারা জোটে থাকা ইসলামি দলগুলোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে থাকা একমাত্র নিবন্ধিত ইসলামি দল ছিল।
দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, রাষ্ট্রীয় চাপ ও দলের মহাসচিবকে মুক্ত করাই এখন প্রধান কাজ। তাই ভিন্ন কৌশল নেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও পরিকল্পনায় কিছু সংযোজন বিয়োজন করার চিন্তা করছে দল। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে তাদের মনে হয়েছে, তারা জোটে থাকা ইসলামি দলগুলোর ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নন। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোট ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, কিছু দল হতাশায়, কিছু দল চাপে পড়ে জোট ছাড়ছে। এভাবে কিছু দল যাবে, কিছু দল থাকবে। যারা থাকবে, তাদের নিয়েই কাজ করতে হবে।
খেলাফত মজলিসের জোট ছাড়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কোনো দলেরই জোট ছাড়ার স্বাধীনতা রয়েছে। স্বতন্ত্র দল হিসেবে যে কোনো দল যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটি তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। খেলাফত মজলিস যদি মনে করে তারা ২০ দলীয় জোটে থাকবে না, সেই স্বাধীনতা তাদের আছে।
তিনি বলেন, মূলত আমরা অনেক রাজনৈতিক দল একটি লক্ষ্য নিয়ে জোটবদ্ধভাবে এগিয়ে গিয়েছিলাম। এখন তারা যদি মনে করে জোটের প্রয়োজনীয়তা নেই, তাহলে ছেড়ে যেতেই পারে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় খেলাফত মজলিসের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, তারা তো জোটের অংশ। তাহলে তারা কেন কাজ করেনি। জোটে আমরাও (বিএনপি) একটি পার্টি, তারাও একটি পার্টি। এখানে সবারই কাজ করার অধিকার রয়েছে। নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা জোট ছাড়ছে, এটা কারণ হতে পারে না।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ