ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘টালমাটাল’ চেইন অব কমান্ড

প্রকাশনার সময়: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:২২

প্রশাসনের সব পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষে কাজ করতে সচিবদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ৪ আগস্ট সচিবদের নিয়ে করা বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সচিবদের দ্রুত কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি। এ নির্দেশনা মানলেও কাজের পরিবেশ নিয়ে ‘শঙ্কিত’ সচিবরা। তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক দপ্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ের চেইন অব কমান্ড এখনো টালমাটাল। আনসার বিদ্রোহের পর সরকারি আদেশ জারি করে সচিবালয়ের বাইরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি-দাওয়ার মিছিল-মিটিং বন্ধ করা গেলেও সচিবালয়ের ভেতরে কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায়নি। ফলে সংস্কারের উদ্যোগ শুরু করা নিয়েই তারা অনিশ্চয়তায়।

সচিবালয়ে একাধিক সচিব, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি রাজনৈতিক দলের সরাসরি সমর্থক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাপটে সচিবালয়ে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।

সরকারের শীর্ষ মহল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কোনো বৈঠকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে— শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট প্রশাসন ভেঙে ফেলতে হবে। সেখানে নিয়োগ দিতে হবে পদ বঞ্চিতদের। এর অংশ হিসেবে কাউকে কাউকে নিয়োগ দেয়াও হয়েছে। আলোচনা চলছে আরো নিয়োগ দেয়ার। এমন পরিস্থিতিতে নিজের পদ-পদবি ঠিক থাকবে কি-না, এ নিয়ে সারাক্ষণই আতঙ্কে রয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় তারা। সচিবালয়ে এখনো অস্থিরতা চলছে। যোগ্যতা থাক আর না থাক, মনের মতো পদ না পাওয়া নিয়ে সচিব থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত সবাই এখন আগের সরকারের ‘বৈষম্যের শিকার’ বলে দাবি করছেন। নিজের কাজ বাদ দিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ পদে বিদ্যমানদের সরানোর দাবিতে সরব তারা। তাদের দাবি ও বিক্ষোভের মুখে অনেকেই পদ ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন স্বেচ্ছায়। যারা আছেন, তারাও ভয়ে দিন পার করছেন— কখন বুঝি তাদের সরিয়ে দেয়া হয় বা সরে যেতে হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, আগামী অক্টোবরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি বাতিল করা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর। আরো যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষের পথে তাদের মধ্যে রয়েছেনা- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বিমানসচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ওএসডি সচিব খাজা মিয়া, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, ধর্ম সচিব মু. আবদুল হামিদ জমাদ্দার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আবদুল বাকী, ভূমি সচিব খলিলুর রহমান, পূর্ত সচিব নবীরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ ও বাণিজ্য সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া সচিব ড. মহীউদ্দীন আহমেদ ও বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান। চুক্তির মেয়াদ শেষে শিগগিরই তাদের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন অবসরোত্তর ছুটিতে চলে গেছেন।

এ পদগুলোতে আবার নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ এবং তাদের কাজ শুরু করায় সময় লাগতে পারে। ফলে সংস্কার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা কঠিন হবে কি-না— এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবন ও ৩ নম্বর ভবনে অবস্থিত একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অতীতে কখনো এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে শুনিনি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারের নির্দেশ তামিল করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমরা পদে থেকে সেই দায়িত্বই পালন করেছি। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মচারী রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে এসে নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তারা বলার চেষ্টা করছেন, আমরা নাকি বিগত সরকারের বেনিফিশিয়ারি। এসব বলে নানা ধরনের ফন্দিফিকির আঁটছেন। এভাবে চলতে পারে না। এর তো নিরসন হওয়া প্রয়োজন। কাজের পরিবেশ না ফিরলে সংস্কারের উদ্যোগ সফল হবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ