ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘হতাশ’ বিনিয়োগকারীরা 

প্রকাশনার সময়: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪

টানা ষষ্ঠ কার্যদিবস দরপতনে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। ছয় দিনের পতনে বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। সরকার পতনের পরপর সূচক, শেয়ারদর ও লেনদেনে লাফ দেয়ার পর এই দরপতন শুরু হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের লোকসান বরং আরো বেড়েছে। শেয়ারদর বাড়তে থাকার পর মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করে এখন বরং আটকে গেছেন তারা।

২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দরপতনের মধ্যে সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস গতকাল সোমবার শুরুতে উঠানামার মধ্য দিয়ে গিয়ে দুপুর ১২টার পর সূচক ছিল ইতিবাচক। আগের কয়েকদিনের মতোই পতন হয় শেষ বেলায়। শেষ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের মতোই ৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে দরপতন শুরু হলে ছয় দিনে কমেছে ১৭৪ পয়েন্ট। এই পতনে বাজারে তালিকাভুক্ত সব শেয়ারের মোট মূল্য বা বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ ৩ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।

দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬২৯ পয়েন্টে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর চার কর্মদিবসে সূচক ৭৮৬ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা যারা নতুন করে শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের সেই সিদ্ধান্ত এখন আর্থিক লোকসানের কারণ হয়েছে।

লেনদেন নেমে এসেছে ৬২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়, গত ১১ আগস্ট যা ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে দরপতন শুরু হওয়ার দিনও ছিল ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার বেশি।

তালিকাভুক্ত ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর হারিয়েছে ৩০৭টির, বিপরীতে বেড়েছে ৬৭ টির ও আগের দরে লেনদেন হয় ২৫টির কোম্পানির শেয়ার। একটি ব্রোকারেজ হাউজের এক কর্মী বলেন, ‘ডিএসইতে অস্থিরতা চলছে। বিএসইসি সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়েছে কিন্তু ডিবিএ (স্টক ব্রোকারদের সমিতি) নাখোশ, তারা কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু সেটা মানেনি। পরে পরে ডিএসইর সাবেক এমডি মাজেদুর রহমানের বিষয়ে আপত্তি দেয়া হলে তিনি পদত্যাগ করেন। এমন অস্থিরতার মধ্যে বড় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় না হয়ে বাজার পর্যবেক্ষণে আছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন বলেন, ‘বাজারে বেশ কিছু সংস্কার স্কিম একসঙ্গে নিয়েছে বিএসইসি। ডিএসইসি বোর্ড সংস্কারের মতো উদ্যোগ ও পুঁজিবাজারে অনিয়ম অনুসন্ধান করতে কমিটি গঠন করেছে। এই দুটি কমিটি গঠন সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। নতুন কমিশন বিনিয়োগকারীদের ভালো কোনো বার্তা দিতে পারছে না। এজন্য বিনিয়োগকারীরা আস্থায় নিতে পারছেন না, এতে বাজার সাফার করছে।’

পুঁজিবাজারে অনিয়ম নিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাজারে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার সব কিছুই তো জানা। এখানে বিএসইসির ভেতরের যে লোকজন জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা। এসব করতে হবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে। কিন্তু তা হচ্ছে না।’

দরবৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে যারা: সোমবার ডিএসইর লেনদেন তথ্য অনুযায়ী, একক খাত হিসেবে মোট লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ অবদান রাখে ব্যাংক খাত। একক খাত হিসেবে ১৭ শতাংশ অবদান রাখে ওষুধ ও রসায়ন খাত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের অবদান ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

ডিএসইর প্রধান সূচকের সঙ্গে শরিয়া সূচক ডিএসইএস আগের দিনের চেয়ে ৬ পয়েন্ট কমে হয় ১ হাজার ২১৫ পয়েন্ট। আর ডিএসই ৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট হারিয়ে অবস্থান নেয় ২ হাজার ৯২ পয়েন্টে।

একক কোম্পানি হিসেবে ডিএসইতে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এসেছে লোকসানি কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের। সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে আরো দুই কোম্পানি বিকন ফার্মা, এনভয় টেক্সটাইল ও ন্যাশনাল টি কোম্পানি। দেশবন্ধু পলিমার, লোকসানি শ্যামপুর সুগার, লিবরা ইনফিউশন, নিউলাইন ক্লদিং, এনআরবি ব্যাংক ও সিভিও পেট্রোকেমিক্যালস ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে। এসব কোম্পানির শেয়ারদর ৫.৮৫ শতাংশ থেকে ৮.৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ৮ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেয়া এস কে ট্রিমসও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে দর হারিয়েছে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, ইবিএলএনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, কনফিডেন্স সিমেন্ট, হামি ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাইম টেক্সটাইলস ও পিপলস ইন্স্যুরেন্স ছিল দর পতনের শীর্ষ দশে। এসব কোম্পানির শেয়ারদর ৬.০২ শতাংশ থেকে ৭.২৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ