ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাষ্ট্র সংস্কারের দৃঢ় প্রত্যয়

প্রকাশনার সময়: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার এক মাস পূর্তি উপলক্ষে ‘শহীদি মার্চ’ পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকার রাজপথ। রাষ্ট্র সংস্কারের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে। মাস পূর্তির দিনে ‘শহীদি মার্চ’ থেকে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গঠনের শপথ পুনঃউচ্চারিত হলো ঢাকার রাজপথে। শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিতে হাজারো ছাত্র-জনতার মিলন ঘটে গতকাল। বেলা পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। ছাত্রদের ডাকে এই মার্চে অংশ নিতে রাজপথে নেমে এসেছে হাজারও মানুষ।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ‘শহীদি মার্চ’ নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। শিক্ষার্থীরা জানান, ঠিক এক মাস আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। এতে দ্বিতীয় স্বাধীনতার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার বিনিময়ে হাজারো ছাত্র-জনতাকে জীবন দিতে হয়েছিল। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা আহত হন। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন, অনেকে এখনো হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন। তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণের জন্যই এই কর্মসূচি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে, সেই অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে আমরা আবারোও রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি। সারজিস আলম বলেন, ভুলেও কেউ ফ্যাসিস্টদের দোসর হওয়ার চেষ্টা করবেন না। যারা ফ্যাসিস্টদের বিন্দুমাত্র ধারণ করে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যদি দোসর হয়ে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে এ দেশের ছাত্র-জনতা এক সঙ্গে তাদের প্রতিহত করবে।

কোনো চাঁদাবাজ, ক্ষমতার অপদখলকারী, সিন্ডিকেটদের অবস্থান এ দেশে হবে না। সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষকে নির্মমভাবে হত্যার দায় শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের নিতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাসহ সব অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানাই।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলে দলে হাজারো ছাত্র-জনতা জড়ো হচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মার্চে অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসছিলেন।

তাদের বেশির ভাগের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা গেছে। দুপুর আড়াইটার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করে। মার্চে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও যুক্ত হয়। এ ছাড়া ধাপে ধাপে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও তাদের দল নিয়ে মার্চ করে যায়। মার্চে অংশ নেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও। সর্ব প্রথম দলটিতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা দিতে মার্চের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি রয়েছে।

মার্চে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের পতাকা মাথায় বেঁধে লাঠির আগায় উড়াতে থাকেন। কেউ কেউ শহীদদের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছেন।

এ দিন বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর নীলক্ষেত, কলাবাগান, ধানমণ্ডি ২৭, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে শহীদি মার্চ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শহীদ পরিবার, পেশাজীবী, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ শহীদি মার্চে অংশ নিয়েছেন।

এ সময় ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেন উপস্থিত ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া শহীদের রক্তের অর্জনকে বৃথা যেতে না দেয়ার স্লোগানও দেয়া হয়। তারা আবু সাইদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি; ২৪ আমাদের বিশ্বাসসহ একাধিক স্লোগান দেন।

লাখো ছাত্র-জনতার এই শহীদি পদযাত্রায় মুহুর্মুহু ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে িক্তর স্লোগান, মুক্ত বাংলাদেশের স্লোগান। মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণআন্দোলনে নিহত অনেকের নাম। শহীদদের স্মৃতি উচ্চারণ করে তাদের আত্মত্যাগের মহিমাকে স্লোগানের ভাষায় রূপ দিয়ে রাজপথের উত্তাল জনতা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়ে পায়ের তালে পা রেখে ঢাকার রাস্তা প্রদক্ষিণ করছে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘সফল হোক সফল হোক, শহীদি মার্চ সফল হোক’, ‘শহীদদের কারণে, ভয় করি না মরণে’, আবু সাঈদ/শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, আজকের এই দিনে আবু সাঈদ/শহীদদের মনে পড়ে’,‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গত জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনের একপর্যায়ে তা সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়।

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ