মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

প্রত্যর্পণ না চাওয়া পর্যন্ত হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে: ড. ইউনূস

প্রকাশনার সময়: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:৩৫

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে বসে দেশ সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিকে অবন্ধুসুলভ আচরণ বলে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত রেখে দিতে চাইলে তাকে চুপ থাকতে হবে যতক্ষণ না বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়। গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক বিবৃতির পর এ মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তিনি শেখ হাসিনার ওই মন্তব্যকে অবন্ধুসুলভ বলেও উল্লেখ করেন।

গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারতে বসে দেশ সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিকে অবন্ধুসুলভ আচরণ করছেন। বাংলাদেশে তাকে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে পিটিআই।

বুধবার পিটিআইকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে ইউনূস আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ না করা পর্যন্ত ভারত যদি হাসিনাকে নিজের দেশে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) আরও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া হাসিনা ছাড়া সবাইকে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের সমালোচনাও করেন।

ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে পিটিআইকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ককে বাংলাদেশ সম্মান করে এবং এই কারণে নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এমন ধারণা বাইরে যেতে হবে যেটাতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থি হিসেবে চিত্রিত করে এবং শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে মনে করা হয়।

ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতে হাসিনা অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ বিচার করার জন্য আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি (হাসিনা) ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন, এটি সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা ভুলে যেতাম; মানুষও এটা ভুলে যেত যদি তিনি তার নিজের জগতেই থাকতেন, কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন এবং দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেউই এটা পছন্দ করছে না।’

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস স্পষ্টতই গত ১৩ আগস্ট হাসিনার বক্তব্যের কথাই উল্লেখ করেন। সেসময় হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে। ড. ইউনূস পিটিআইকে বলেন, এটা আমাদের বা ভারতের জন্য ভালো নয়। এটি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।

নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সবাই এটা বোঝে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে– তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ অঙ্গভঙ্গি; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মেই সেখানে (ভারতে) গেছেন তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, তাকে (হাসিনাকে) ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। হাসিনা যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।’

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ