মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

ঋণখেলাপিতে রেকর্ড!

প্রকাশনার সময়: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬

আর্থিক খাতের বিষফোঁড়া খেলাপি ঋণ। এ ফোঁড়া নিরাময়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উল্টো নানা সুবিধা দিয়ে গেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে, গড়েছে নতুন রেকর্ড।

সবশেষ ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত আসছে না। অন্যদিকে সরকার পতনের পর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘরানার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পালিয়েছেন। এতে আগামীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট বিতরণ করা ঋণের ১১.১১ শতাংশ।

সে হিসাবে জুন প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসে বেড়েছিল ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ৬৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে সুশাসন ও খেলাপি ঋণই বর্তমান ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা ছিল। ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকার কারণে দিন দিন খেলাপি বেড়েছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় ঢালাওভাবে ছাড় দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের তথ্য গোপনেরও একটি প্রচেষ্টা ছিল। সব মিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খেলাপি তথ্য গোপন না করায় হঠাৎ এই সূচকে বড় লাফ দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকাই খেলাপি। যা বিতরণকৃত ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রাষ্ট্রের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পতনের আগেই আইএমএফের শর্ত মেনে গত মার্চ থেকে কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ কমে এসেছে। আবার তদারকি শিথিলতার কারণে এতদিন জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ আর ফেরত আসছে না। সরকার পতনের পর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যবসায়ীদের অনেকেই পালিয়েছেন। এতে করে খেলাপি ঋণ আগামীতে আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। তাদের শর্ত মেনে ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামানোর কথা। তবে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে এখনকার মতো নীতি সহায়তা রাখা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ