ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডায়রিয়া রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম

প্রকাশনার সময়: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪

বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ফেনীতে ২৬ জন। গতকাল সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রার্দুভাব। আশ্রয় কেন্দ্র ও বাড়িঘরে মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এসব রোগ। নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সহস্রাধিক আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। বেডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যা আক্রান্ত জেলার ১১টি জেলা হলো— ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার এর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। বন্যাপ্লাবিত উপজেলা ৬৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত ৫০৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে।

বন্যায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন, নারী ৭ জন ও শিশুর সংখ্যা ১৮। কুমিল্লায় মারা গেছেন ১৭ জন, ফেনীতে ২৬ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ১১ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ১ জন। মৌলভীবাজারে নিখোঁজ আছেন ১ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পানিবন্দি লোকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মোট ৩ হাজার ৬১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় মোট ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৪১ জন লোক এবং ৩২ হাজার ৮৩০টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৪৭২টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে। সংবাদদাতার পাঠানো আরও খবর—

নোয়াখালী: ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ১৬টি। চিকিৎসা নিচ্ছে এর কয়েকগুণ বেশি। বেডে জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় জরুরি ভিত্তিতে একটি ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সেখানেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. নাহিদ হাসান বলেন, ২৪ ঘণ্টায় বন্যার কারণে হাসপাতালটিতে ২৪০ জন রোগী ভর্তি হয় যাদের সবার শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ায় নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। ‘ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এত রোগীর জায়গা দিতে না পারায় নতুন ওয়ার্ডেও রোগী রাখা হচ্ছে।’

ডায়রিয়া ওয়ার্ড ইনচার্জ রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে ডায়রিয়সহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রন্ত হওয়ায় কেউ কারো খবর নিতে পারছে না। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার জেলা সদরে ২৬০ জন ডায়রিয়া রোগীর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে আরো ২৪৫ জন ভর্তি রয়েছেন। জেলা জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব দেখা দেয়ায় জেলায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ১৪০টি সরকারি মেডিকেল টিম একযোগে কাজ করছে। এসব মেডিকেল টিম ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ দেয়ার পাশাপাশি পানিবাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’ ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে নিরাপদ পানি ব্যবহার ও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সেপ্টেম্বরেও বন্যার পূর্বাভাস: আগস্ট মাসের বন্যার ভয়াবহতার চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। এরই মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে দেশে নতুন করে বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সেই বন্যা হতে পারে স্বল্পমেয়াদি। এবারের বন্যায় উপদ্রুত দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন করে বন্যা হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতি মাসের শুরুতে আবহাওয়া পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেয়। রোববার সেপ্টেম্বর মাসের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি বর্ষাকালীন লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মৌসুমি ভারি বৃষ্টির কারণে কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

গত আগস্ট মাসের ২০ তারিখের পর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ ১১টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে আক্রান্ত হয় অর্ধ কোটির বেশি মানুষ। বন্যার ক্ষতির চিহ্ন এখনো এসব এলাকায় রয়ে গেছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত আগস্ট মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬ ভাগের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক এবং অন্যান্য বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

আগস্টের ১ থেকে ৪ এবং ৮ থেকে ৯ উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ু প্রবল অবস্থায় থাকার ফলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয়। ১৬ আগস্ট উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়।

সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় দুর্বল হয়ে একই এলাকায় লঘুচাপে পরিণত হয়। ২০ আগস্ট এটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে এবং ২১ আগস্ট ২০২৪ এটি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। এ প্রভাবে ১৬ থেকে ২১ আগস্ট উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয়। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হয়। ১ আগস্ট দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টি ২৭৬ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয় নোয়াখালীর মাইজদীকোর্ট এলাকায়। এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩১ আগস্ট, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ