গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের মাটিতে থাকার বৈধতা হারাতে যাচ্ছেন তিনি। একইসঙ্গে তাকে ফেরত পাঠাতে ঢাকা থেকেও দাবি তোলা হচ্ছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে ভারত সরকারের সামনে। তাই হাসিনাকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার এক রকম বেকায়দায় পড়েছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) অনলাইন টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতের সাংবাদিক দেবাদীপ পুরোহিত লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা রাজপথের সহিংস বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে নয়া দিল্লি আসেন। সেই থেকে তিনি ভারতে একটি অজ্ঞাত স্থানে কঠোর নিরাপত্তায় আছেন। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হচ্ছে কি না অথবা তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক কোনো দাবি আছে কি না এমন প্রশ্ন শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এড়িয়ে যান। রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা হাইপোথিসিসের মধ্যে রয়েছে। এমন হাপোথেটিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অভ্যাস আমাদের নেই। ’
এরই মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে ১০০ ফৌজদারি মামলার শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে টেলিগ্রাফের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারতকে বলা। ’
মির্জা ফখরুল প্রকাশ্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি করে জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে মিটিংয়ে তিনি এ বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারে নেই। কিন্তু তাকে (হাসিনা) ফেরত আনার দাবি জানিয়েছি। তিনি যেসব অপরাধ করেছেন তার সবটার বিচার হতে হবে বাংলাদেশে। আমি জানি না কেন ভারতের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরেনি অন্তর্বর্তী সরকার। ’
ভারতের এস্টাবলিশমেন্টের একটি সূত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নতুন শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব নয়া দিল্লি। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া অনুকূলে নেই। এটা অনিশ্চিয়তার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি উদাহরণ হলো, পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে পূর্ণাঙ্গ ভিসা সার্ভিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ’
ভারতীয় অনেক সূত্র বলেছে, তারা বিষয়টি বোঝেন। তবে তাকে (হাসিনা) এই মুহূর্তে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মত নেই। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, ভারতের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো শেখ হাসিনার স্বেচ্ছায় অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়া। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
নয়া দিল্লির আরেকটি সূত্র টেলিগ্রাফকে বলেছে, শেখ হাসিনার ব্রিটিশ যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তার সম্ভাব্য ব্রিটেন যাওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্র সচিবের কাছে উত্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশ হাই কমিশন। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও অনানুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু খোঁজখবর নিয়েছে। তবে হাসিনার ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারত।
নয়াশতাব্দী/ইএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ