ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১, ১৩ রজব ১৪৪৬

ডক্টর ইউনূসকে পাড়ি দিতে হবে বন্ধুর পথ

প্রকাশনার সময়: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১৪

রাজনৈতিকভাবে ক্লান্তিলগ্ন সময় এখন অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এখন এক অস্থির সময় পার করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ডক্টর ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ছাত্র নেতাদের মধ্যে দু’জন রয়েছেন। নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনূস বাংলাদেশের এমন এক দুর্যোগ মুহূর্তে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন সেটা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সবাই জানে। দেশ স্বাধীনের পর এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তাদের শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে দেশের সব মানুষ জানে। যখনই যে দল ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা নিজের স্বার্থ ব্যতীত দেশের মানুষের জন্য তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেননি। সর্বশেষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা একটানা ১৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। তার এই দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার সময়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও তার সরকারের মন্ত্রী এমপিদের ও আমলাদের বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়। যার কারণে এ সরকারকে বিদায় করানোর উদ্দেশ্যে এদেশের ছাত্র-জনতা একত্র হয়ে মাঠে নামে। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার তোপের মুখেই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। দেশে গঠিত হয় নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ছাত্র জনতার আন্দোলনের একটাই উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গঠন করা। তারা তাদের সেই চাওয়া প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিতে নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তৈরি করেন।

ডক্টর ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্গতকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এমপি, মন্ত্রী ও সরকারি আমলাদের গ্রেপ্তার, রদবদল শুরু করেছেন। তিনি দেশের প্রতিটি খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য বিগত সরকারের আমলে বসিয়ে যাওয়া লোকদেরকে সরিয়ে তার পছন্দমতো বসাচ্ছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে এত পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে যে, দেখলে যে কোনো মানুষ তাজ্জব হয়ে যায়। দেশের প্রতিটির খাতে তারা দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছিলেন, আর এসব খাত থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে গেছেন। তিনি তার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের মানুষ থেকে বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছেন। তার মন্ত্রী, এমপি ও আমলাদের ওপর কঠিন কোনো বিধিনিষেধ না থাকার কারনে যে যেমনে পারছে লুটপাট করেছে। এখন মন্ত্রী এমপিদের কারাগারে নেয়ার পর তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলে আমরা যা করেছি শেখ হাসিনার নির্দেশে করছি। শেখ হাসিনার দোহাই দিয়ে তারা বাঁচার চেষ্টা করছে।

এখন দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে ছাত্র সমাজ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে। কারণ বিগত দিনে দেশের মানুষ দেখেছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সরকারের শাসনামল তারা আর তাদের দেখতে ইচ্ছুক না। যখনই যে দল ক্ষমতায় যায় তারা দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, উল্টো দেশের মানুষ তাদের প্রতি বিদ্রোহ প্রকাশ করেছে। এখন কথা হলো, আওয়ামী লীগ-বিএনপি যদি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কোনো কাজ করত তাহলে কেন দেশের মানুষ আজ সম্মিলিতভাবে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর দেশ শাসন করলেও জামায়াত ও বিএনপি ও অন্যান্য যে ছোটখাটো রাজনৈতিক দল আছে তারা দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার জন্য শত চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দেশে যেভাবে দুর্নীতির আখড়া করে বসে ছিল তাদের সেই দুর্নীতি দেখে দেশের উদীয়মান ছাত্রসমাজ দেশ থেকে চিরতরে দুর্নীতিকে মূলোৎপাটন করার জন্য সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে সারা বিশ্বে দাঁড় করানোর উদ্দেশ্যে আন্দোলন করেছে। দেশের মানুষ যাতে দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে এটাই ছিল তাদের আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কিন্তু তাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য কোনো বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার জন্য নয়, যেসব রাজনৈতিক দল চিন্তা ভাবনা করছেন ছাত্র সমাজের আন্দোলনের ফলে হাসিনা সরকার পতন হওয়ার পর বিশেষ কোনো দল ক্ষমতায় বসে দেশ শাসন করবেন তাদের চিন্তাটা ভুল। দেশের মানুষও পুরাতন এসব রাজনৈতিক দলের শাসন শোষণের রাজনীতি আর দেখতে চায় না।

এখন দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে তৃতীয় কোনো শক্তি দেশটাকে শাসন করুক, যাতে করে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয়। পুরাতন রাজনৈতিক দলগুলো যাতে ক্ষমতায় না ফিরে। তৃতীয় কোনো শক্তি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তোলার চিন্তা ভাবনা করতে পারে। তাহলে সেই তৃতীয় শক্তিকেই দেশের মানুষ সাপোর্ট দেবে। দেশের মানুষ জানে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সারা বিশ্বের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নোবেলজয়ী একজন ভালো মনের মানুষ। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করে ডক্টর ইউনূস যেহেতু একজন ভালো মনের মানুষ, সেক্ষেত্রে তার পক্ষে সম্ভব হবে দুর্নীতিমুক্ত একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ডক্টর ইউনূস বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে তাকে পাড়ি দিতে হবে অনেক বন্ধুর পথ। এ সময়টুকু দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার মানুষ ডক্টর ইউনূসকে দিতে হবে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যে আবেদন করে সেটা সম্ভব হবে না, তার কারণ হলো একটা দেশকে নতুন রূপে গঠন করতে হলে ডক্টর ইউনূসকে পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। একটি অর্থনৈতিকভাবে ভগ্নদশা দেশকে এত অল্প সময়ে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা সম্ভব না। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মনে করে যেহেতু ডক্টর ইউনূস সারা বিশ্বের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তার দ্বারাই সম্ভব একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলা। দুর্নীতিমুক্ত, বেকারত্ব দূরীকরণে তার একটা বিশাল ভূমিকা বর্তমানে কাজে লাগতে পারে। দেশের মানুষের অনেক দিনের একটি স্বপ্ন ছিল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর ইউনূস দেশের শাসন ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত হলে হয়তো আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ পেতে পারি। এখন সময় এসেছে মানুষের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। এখন দেশের মানুষ মনে করে, যে করেই হোক দেশকে একটি নতুন রূপে মডেল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ডক্টর ইউনূসকে সময় দিতে হবে। ভালো কিছু পেতে হলে আমাদের একটু ধৈর্য ধরতেই হবে। পরিশেষে বলতে চাই, দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গঠন করতে যতটুকু সময় আপনার লাগবে সেটুকু সময় নিয়েই দেশ গঠনে আপনাকে ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। কারণ দেশের যুবসমাজ রয়েছে আপনার সঙ্গে। আপনার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। কে কি বলবে সেটাও চিন্তা করার দরকার নাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এমন একটি দেশ গঠন করে যাবেন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে যেখানে লেখা থাকবে আপনার নাম। একটি জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে আপনাকে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ