দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জন হয়েছে। আর এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বন্যায় এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৮ লাখেরও বেশি মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা গতকাল বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও ১১ জেলার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার এখনো পানিবন্দি। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন। গত কয়েক দিনে বন্যায় যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে তার মধ্যে কুমিল্লারই ১২ জন। এছাড়া নোয়াখালীতে ৬, চট্টগ্রামে ৫, কক্সবাজারে ৩, ফেনীতে ২ এবং খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও লক্ষ্মীপুরে এক জন করে মারা গেছেন।
অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত মানুসের জন্য দুর্গত এলাকায় ৪ হাজার ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ মানুষ এবং ৩৯ হাজার ৫৩১ গবাদিপশুর আশ্রয় হয়েছে।
১১ জেলার বানভাসিদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৬১৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি। উজানের তীব্র ঢল এবং অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পরে দ্রুতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি: সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে আমরা পেয়েছি, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা আমরা পাইনি। সে হিসেবে বলতে পারি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ তিনি বলেন, সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগ্রহ করা ৮৮ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি এ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (ডিডিএম) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক বন্যাদুর্গত এলাকায় যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
আলী রেজা জানান, বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ব্যুরো প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের আরো খবর—
চট্টগ্রামের ১৬৩ পয়েন্টে ভেঙেছে বাঁধ ও নদীতীর: ভয়াবহ বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামের হালদা, সাঙ্গু নদ এবং ডলু, সর্তা, ধুরং, টংকাবতী ও শ্রীমাই খালের পাড় ভাঙছেই। সাম্প্রতিক বন্যায় চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ১৬৩টি পয়েন্টের ২০ কিলোমিটার নদীর তীর, বাঁধ ও খালপাড়ের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায়। হালদা, ধুরং নদী ও সর্তা খালে বন্যার পানি বিপৎসীমায় প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙন বেশি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ক্ষতি হওয়া এসব এলাকার নদীতীরের বাঁধ মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে। পাউবো চট্টগ্রামের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রবহমান নদী এবং খালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর আওতাধীন এলাকার ৪৩টি স্থানের প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩৮০ মিটার ধুরং নদীর তীর, নাজিরহাট পৌরসভার ২৯০ মিটার হালদা নদীর তীর ও বাঁধের স্লোপে ধস, ফটিকছড়ির সুন্দরপুর, সমিতিরহাট ও নারায়াণহাট ইউনিয়ন মিলে ৭১০ মিটার হালদা নদীর তীর, বাঁধের স্লোপ ও ব্লকে ধস, খিরাম ইউনিয়নে ১৮০ মিটার সর্তা খালের তীর ও সংযোগ সড়ক ভাঙন, পাইন্দং ইউনিয়নের ১ দশমিক ১৮০ মিটার ধুরং নদীর তীর এবং বক্তপুর ইউনিয়নের ২৯০ মিটার তেলপাড়ি খালের তীর ভাঙনের মুখে পড়েছে।
হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে ৪০ মিটার হালদা নদীর তীর ও ব্লকে ধস নেমেছে। চন্দনাইশের বৈলতলী ইউনিয়ন ও সাতকানিয়ার উত্তর ব্রাহ্মণডাঙা এলাকার ৩২০ মিটার সাঙ্গু নদের তীর, পটিয়ার হাইদগাঁও ও ভাটিখাইন ইউনিয়নে ৩৬০ মিটার শ্রীমাই খালের তীর ও বাঁধের স্লোপ, সাতকানিয়ার ছদাহা এলাকায় ৬০ মিটার হাঙ্গর খালের বাঁধের নিচে, লোহাগাড়ার আধুনগর ও পুটিবিলা এলাকার ১৩৫ মিটার ডলু খালের বাঁধ ও বাঁধের নিচে, আনোয়ারার জুইদণ্ডী, হালদাখালী, রায়পুর এলাকার ৮০০ মিটার সাঙ্গু নদের বাঁধ, লোহাগাড়ার চরম্বা ও আমিরাবাদ এলাকার ৩৩৫ মিটার টংকাবতী খালের পাড় ভেঙে পড়েছে।
ফেনী: ফেনীতে ধীরে ধীরে বন্যাকবলিত এলাকার পানি নেমে যাচ্ছে। নিম্নাঞ্চল ছাড়া সবকটি এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমেছে। পানি নামার সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। তবে বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ট্রলি ও ট্রাকে করে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। দাগনভূঞা ওসোনাগাজীতে উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও কিছু স্থানে লোকেরা এখনো পানিবন্দি রয়েছেন। এ ছাড়া সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার কিছু এলাকায় হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর পানি রয়েছে।
ফেনী জেলায় বন্যায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। জেলায় একটি এবং ছয় উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখনো জেলার ৮টি উপজেলার ৮৭টি ইউনিয়নের ২১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দি। এক হাজার ৩০৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৩ জন। আবার নতুন করে অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন। তবে কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে কথা বলে জানা গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নতুন করে মানুষ ওঠার জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পানিবন্দি জীবন পার করছেন। গত মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অপরদিকে, জেলার দুর্গম অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। ত্রাণ পেতে হাহাকার করছেন বন্যার্তরা।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। আর জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নতুন করে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর: ভারি বর্ষণে নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরের পানির চাপে চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, হাজীরপাড়া, দত্তপাড়া, মান্দারী, কুশাখালী, লাহারকান্দি, তেওয়ারীগঞ্জসহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সর্বত্র জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। অনেক এলাকায় কোমর সমান পানি রয়েছে। ঘরবাড়ির ভেতরেও পানি। অনেক এলাকায় নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ, সেতু-কালভার্ট-রাস্তা, দোকানপাটসহ স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গবাদি পশু গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। বন্যায় চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে অনেক গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় অনেকে কম দামে পালন করা এসব পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারিভাবে পশুখাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত সরেজমিন লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এলাকাবাসী, ত্রাণ বিতরণকারী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার রাতে বৃষ্টি হবার কারণে বন্যার পানির চাপ বেড়ে গেছে। নতুন করে আরও কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— জাদৈয়া, চাঁনখালি, আটিয়াতলী, লাহারকান্দি, মজুপুর, বাঙ্গাখাঁ।
পানিবন্দি এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের ১টি পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়ন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এতদিন বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে ছিল। গত দুই দিন ধরে নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ছে। এতে সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, মান্দারী, বাঙ্গাখাঁ, উত্তর জয়পুর ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রায় ৪ ফুট পানিতে ডুবে আছে জনপদ। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা-হাজীগঞ্জ বেড়ির পশ্চিম পাশে ভুলুয়া নদীতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিতে ডুবে আছে বিস্তীর্ণ জনপদ।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় ৬ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৯৫ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দি মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি সাইক্লোন শেল্টারে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে। সবাইকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, নোয়াখালীর পানির চাপ লক্ষ্মীপুরে আসছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
কুমিল্লা: স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে কুমিল্লা জেলা। এ বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলাজুড়ে কৃষি খাতে ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি, যা অতীতের যে কোনো ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কার্যালয়টি জানিয়েছে, জেলাজুড়ে মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। চলমান বন্যায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমন বীজতলা ৪ হাজার ৫১৫ হেক্টর ও ধান ২৩ হাজার ৩০৯ হেক্টর, খরিপ-২ শাকসবজি ২ হাজার ১৯ হেক্টর, রোপা আউশ ৩৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর, বোনা আমন ৩৩৫ হেক্টর এবং ২১৬ হেক্টর আখ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৬৪১ হেক্টর রোপা আমন, ১ হাজার ৬১৫ হেক্টর খরিপ শাকসবজি, ২০ হাজার হেক্টর রোপা আউশ এবং ১১ হেক্টর আখ ফসলের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০৪ হেক্টর খরিপ শাকসবজি, ১৩ হাজার ৪৩২ হেক্টর রোপা আউশ এবং ২০৫ হেক্টর আখ ফসলের জমি। এসব ফসলের মধ্যে ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার রোপা আমন বীজতলা, ২৬৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার রোপা আমন, ৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার খরিপ শাকসবজি, ২৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ৭২ হাজার টাকার রোপা আউশ এবং ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার আখ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
মীরসরাই: টানা সাত দিন চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। বন্যায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার অন্তত দুই লাখ মানুষ কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ও মাটির ঘর। দুই দিন ধরে অধিকাংশ ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে ও গ্রামীণ সড়কে পানি থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারছে না এখানকার মানুষ।
রাজশাহী: ভারতের মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার গঙ্গা নদীতে অবস্থিত ফারাক্কা বাঁধের সব কটি গেট খুলে দেওয়ার পর রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বাড়েনি। গত সোমবার বিকাল ৩টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা একই জায়গায় স্থির আছে। তবে স্থানীয়দের কৌতূহলের কারণে আবারও মাপা হলো পদ্মার পানি। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সোমবার বিকাল ৩টায় পদ্মা নদীর রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ মিটার। গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় সেখানে একই উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অঞ্চলটিতে পানির বিপৎসীমা ১৮ মিটার। ফলে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭০ মিটার নিচে আছে।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ