পল্টন থেকে ফিরে এলে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে মুজফ্ফর আহমদ একদিন নজরুলকে বললেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আপনার কর্তব্য কি বলে আপনি মনে করেন? শুধুই সাহিত্য করবেন, নাকি রাজনীতিও করবেন?’ নজরুল পরিষ্কার ভাষায় জানালেন, ‘রাজনীতি যদি না করব তো যুদ্ধে গিয়েছিলাম কেন।’ বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিভিন্ন আন্দোলন নজরুল ইসলামকে প্রভাবিত করে গভীরভাবে। ফলশ্রুতিতে নজরুল কিছু কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে পড়েন। ঊনবিংশ শতকের শেষ বা বিংশ শতকের দ্বিতীয় তৃতীয় দশকের বিস্তৃত রাজনৈতিক পটভূমিতে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। কবির মনে ঢেউ তুলে বিদেশি বিপ্লববাদ আন্দোলনের ইতিহাসও। তাঁর কবি কল্পনাকে উদ্দীপ্ত, অনুপ্রাণিত করেছিল গোপীনাথ সাহা, ক্ষুদিরাম বসু, সূর্যসেন, যতীন দাস প্রভৃতি শহীদদের দুঃসাহসিক কার্যকলাপ। এ ছাড়া নজরুল কমিউনিস্ট আন্দোলনের দ্বারাও প্রভাবিত হন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্ফর আহমদ নজরুলের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন বলে স্বাভাবিকভাবে এ দলের অনেক কিছু তাঁকে প্রভাবিত করে। বিপ্লববাদী আদর্শে বিশ্বাসী নজরুল। দেশের শৃঙ্খল মুক্তির জন্য সন্ত্রাসবাদীদের বিপ্লবাত্মক প্রয়াস তাঁর ভিতরে নাড়া দিয়েছিল। স্বাধীনতা বলতে তিনি কেবলমাত্র ইংরেজদের হাত থেকে দেশের ধনিক সম্প্রদায়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, জমিদারদের শাসন ক্ষমতা লাভের কথা কিংবা কেবল মধ্যবিত্তের সুযোগ-সুবিধা লাভের কথা চিন্তা করেননি। স্বাধীনতা তাঁর কাছে ছিল শোষিত মানুষের মুক্তি ও মেহনতি মানুষের অধিকার।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মধ্যে যে বিদ্রোহী সত্তা, তাঁর রচনার পরতে পরতে যে শোষণমুক্ত সমাজ, শৃঙ্খলমুক্ত কর্মজীবী মানুষ, তা তিনি পেয়েছিলেন ১৯১৭ সালে সিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলের ছাত্র থাকাকালীন শিক্ষক নিবারণচন্দ্র ঘটকের কাছে। নিবারণচন্দ্র ঘটক শুধু নজরুলের শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন রাজনৈতিক দীক্ষা গুরুও। নজরুলের অন্তরে তিনি স্বাধীনতা ও বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষার সঞ্চার করেছিলেন। নিবারণচন্দ্র স্কুল জীবনে নিখিল ভারত বিপ্লবী সংগঠনের কর্মী ছিলেন। তাঁর মাসিমা প্রথম নারী বিপ্লবী দু-কড়ি বালা দেবী। নিবারণ ঘটক দেশের স্বাধীনতা ও বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নের বীজ তিনি নজরুলের মধ্যে বপন করেছিলেন। সিয়ারশোলের পরের অধ্যায় নজরুলের সৈনিক জীবন। সেখানে তিনি অবসরে বিপ্লবী পত্র-পত্রিকা পড়তেন, রাজদ্রোহমূলক কাগজপত্র আনতেন, আনতেন সরকার নিষিদ্ধ পত্রিকা, সংবাদ রাখতেন আইরিশ বিপ্লব, রুশ বিপ্লবের। এসব কিছুই ছিল কাজী নজরুলের রাজনৈতিক সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ। ‘চিত্তরঞ্জন দাশের’ প্রভাবে তিনি তাঁর জীবনের প্রথম পর্বে কংগ্রেসের ‘স্বরাজ্য দলের’ সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই দলের প্রার্থী হিসেবেই ১৯২৬ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ববঙ্গ থেকে ‘কেন্দ্রীয় আইনসভা’র উচ্চ পরিষদের সদস্য পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা (ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা বিভাগের প্রার্থী) করে তিনি পরাজিতও হয়েছিলেন। অবশ্য সেই ঘটনার আগে থেকেই তাঁর জনসংযোগের পালা শুরু হয়েছিল। সৈন্যবাহিনী থেকে ফিরে আসার পর মাস দুয়েকের মধ্যেই নজরুল মাত্র ২১ বছর বয়সে, দৈনিক ‘নবযুগ’ (সান্ধ্য) পত্রিকার সম্পাদনার যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, সেটার মধ্যেই কবির রাজনৈতিক সচেতনতার সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে নজরুল যখন প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেন তখন দেশে স্বাধীনতার জন্য উত্তাল আন্দোলন। ব্রিটিশের শাসন আর ভারতবাসী মানতে চায় না। রাজনীতিতে ‘কংগ্রেস’ নামক রাজনৈতিক দলের নেতা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, চিত্তরঞ্জ দাস, সুভাসচন্দ্র বসুসহ আরো অনেকে।
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী গিয়েছিলেন হুগলিতে। সেখানকার চাঁদনী ঘাটে বিশাল সামিয়ানা খাটিয়ে মহাসভার ব্যবস্থা করলেন হুগলি স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীরা। গান্ধীজিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ‘বাঙলায় মহাত্মা’ শিরোনামে নজরুল গান লিখলেন
‘আজ না-চাওয়া পথ দিয়ে কে এলে/ঐ কংস কারার দ্বার ঠেলে,/আজ শব-শ্মশানে শিব নাচে ঐ/
ফুল ফুটানো-পা ফেলে।’
গান্ধীজিকে নজরুল প্রথমদিকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু তিনি যখন পরবর্তী সময়ে অহিংস আন্দোলনের ডাক দেন তখন নজরুল তাঁর পথ পরিহার করেন। নজরুল উপলব্ধি করেছিলেন যে, গান্ধীজির আন্দোলনে দেশে স্বাধীনতার পথ সুগম হবে না। গান্ধী চান স্বরাজ। অর্থাৎ স্বাধীনতা নয়, স্বায়ত্ত শাসন। কিন্তু নজরুল চান ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা। তিনি গান্ধীজির পথকে পরিহার করে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার মাধ্যমে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চান। ‘ধূমকেতুর পথ’ প্রবন্ধে নজরুল লিখলেনা—
‘স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেননা, ও কথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকম করে থাকেন। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশির অধীন থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা-রক্ষা, শাসনভার, সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে। নজরুল প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেন ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে। নজরুল এ সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন। নজরুলের অন্যতম রাজনৈতিক সহকর্মী হেমন্ত কুমার সরকার কংগ্রেসের সভ্য হওয়া সত্ত্বেও কৃষক আন্দোলনে অধিকতর উৎসাহী ছিলেন। জেলে ও চাষিদের অনেক সভা-সমিতিতে তারা যোগ দিতেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুবুদ্দীন আহমদ ও শামসুদ্দীন হুসয়নের উদ্যোগে কলকাতায় একটি নতুন পার্টি গঠিত হয়। পার্টির নাম ‘ভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির অন্তর্ভুক্ত মজুর স্বরাজ পার্টি’ বা ‘শ্রমিক প্রজা স্বরাজ দল’। এ দলের প্রথম ইশতেহার কাজী নজরুল ইসলামের দস্তখতে প্রকাশিত হয়েছিল। পার্টি গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার মুখপাত্ররূপে ‘সাপ্তাহিক লাঙল’ পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়। ২৬ ডিসেম্বর ১৯২৫ সালে লাঙলের প্রথম খণ্ড বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনগরের বাড়ি থাকা অবস্থায় পূর্ববঙ্গ থেকে নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় আইনসভার নির্বাচনে প্রার্থী হলেন। ৩১ অক্টোবর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা সফর করেন এবং প্রায় পুরো নভেম্বর মাস তিনি ময়মনসিংহ, বাকেরগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার নির্বাচনে জনসংযোগ করেন। কিন্তু ওই সময়ে নজরুলের পক্ষে পূর্ব বাংলার কোনো মুসলমান আসন থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করা কঠিন ছিল। কারণ গোঁড়া মুসলমান সম্প্রদায় ইতোপূর্বেই তাঁকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিল। নজরুল নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। ২৯ নভেম্বর ১৯২৬ তারিখে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হলে দেখা যায় যে, নজরুল নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন এবং তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নির্বাচনে জয়লাভ করেন বরিশালের জমিদার মুহম্মদ ইসমাইল চৌধুরী ও টাঙ্গাইলের জমিদার আবদুল হালিম গজনবী।
এরপর ১৯২৯ খ্রিস্টব্দের শেষে সপ্তাহে কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজফ্ফর আহমদ একটি কৃষক সম্মেলনে যোগ দিতে কুষ্টিয়া যান। কলকাতা থেকে আবদুল হালিম, গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ফিলিপ স্প্র্যাট ও ত্রিপুরা থেকে ওয়াসিমউদ্দিন ওই সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের প্রতিনিধিদের কাছে নজরুল ছিলেন অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সেখানে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের পরামর্শক্রমে বঙ্গীয় কৃষকলীগ-কৃষকদের একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু ২০ মার্চ মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় মুজফ্ফর আহমদ গ্রেপ্তার হলে তা সম্ভব হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরে সেখানে নজরুল বিষয়ক আলোচনার ও নজরুল চর্চার ক্ষেত্রে যেন জোয়ার এসেছিল। সেটা সম্ভবত স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলামের সেখানে উপস্থিতির টানের ফলে ঘটেছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের প্রাবল্যে ও কবির প্রভাব সত্ত্বেও, নজরুলের রাজনৈতিক চিন্তা সেখানেও স্পষ্টত অনুপস্থিত ছিল। তারও আগে পশ্চিম বাংলায় প্রকাশিত ‘মুজফ্ফর আহমদ’, ‘ড. সুশীল কুমার গুপ্ত’ ও ‘আজহারউদ্দীন খান’ বা ‘প্রাণতোষ চট্টোপাধ্যায়ের’ গ্রন্থে কবির রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড যতখানি চিত্রিত করা হয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অবশ্য কবির রাজনৈতিক ভূমিকা বিশ্লেষণে সেটার অতিরিক্ত কোনো উৎসাহ দেখা যায়নি। রাজনীতিতে স্বার্থক না হলেও নজরুলের বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল। এর প্রথম কারণ হিসেবে বলা যায় বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে গভীর নৈকট্য। দ্বিতীয় কারণ— বিভিন্ন শ্রেণির ব্যতিক্রমী কাব্যধারা এবং তৃতীয় ও বলিষ্ঠ কারণ— কবির রাজনৈতিক দর্শন, দেশে ও মানুষের মুক্তির সংগ্রামের দর্শন। নজরুলের কবিতা বা গান নিয়ে গোড়া থেকেই বিভিন্ন লেখকের লেখায় যে উৎসাহ ও প্রাধান্য দু’দেশেই বর্তমান ছিল, সেটার সিকিভাগও তাঁর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা চরিত্র বিশ্লেষণে ব্যয়িত করা হয়নি। নজরুল চর্চার অসম্পূর্ণতা বা সংকটও সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি, তাঁর ‘রাজনৈতিক চরিত্র’ বিশ্লেষণের নামে বিগত কয়েক দশক ধরে আরেক ধরনের রাজনীতির খেলা শুরু হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে কতিপয় ‘নজরুল ব্যবসায়ী’, ‘বিদ্রোহী কবি’র রাজনৈতিক ভাবনা-চিন্তার চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দলগত বিচারে বা সংখ্যায় তাঁরা নেহাৎ কম নন। ব্যক্তি নজরুলের সামাজিক সুনাম এবং চরিত্র হননের কাজেই তাঁরা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। এবং সে কাজে তাঁদের কোনো ক্লান্তি নেই। এখন প্রশ্ন হলো, তবে কি নজরুলের কখনোই কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল না? কারো কারো মতে, বলতে গেলে সেসব ক্ষেত্রে নজরুলের কোনো সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট মতামত ছিল না, শাস্ত্র কি এবং কেন, সমাজের ও ব্যক্তির সত্তা ও স্বার্থ কিরূপ, শাসক স্বদেশি-স্বজাতি ও স্বজন হলেই দেশ বা মানুষ স্বাধীন হয় কি না— এসব প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কোনো দিনই তাঁর মনে জাগেনি।
অন্য কবি ও লেখকদের কাছে যেটা ‘পার্বণিক’ এবং সাময়িক প্রয়োজনের ও উত্তেজনার বিষয় ছিল, নজরুলের কাছে সেটাই তাঁর জীবনের ব্রত ছিল। ‘সজনীকান্ত দাস’, ‘মোহিতলাল মজুমদার’ বা ‘নীরদ চন্দ্র চৌধুরীদের’ মত এখনো নজরুল বিরোধী ভ্রান্তির আবর্তে অনেকেই আকণ্ঠ নিমজ্জিত রয়েছেন। নজরুল বিষয়ক বিভ্রান্তির এ জাতীয় উদাহরণ নেহাৎ কিন্তু কম নয়। নজরুলের জীবনে তাঁর সমকালীন ঘটনা সমূহের প্রতিক্রিয়া অনস্বীকার্য। ‘রুশ বিপ্লব’ (১৯১৭), ‘রাওলাট আইন ও জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড’ (১৯১৯), ‘মন্টেগু চেমসফোর্ড রিপোর্ট’, ‘আইন অমান্য আন্দোলন’ (১৯২২), ‘দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলা’ (১৯২৫), ‘পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি’ (১৯২৯), ‘চট্টগ্রাম সশস্ত্র বিদ্রোহ’ (১৯৩০), ‘গোল টেবিল বৈঠক’ (১৯৩০-৩২) ইত্যাদির পাশাপাশি বিপ্লবী ‘অনুশীলন’ ও ‘যুগান্তর’ দলের বৈপ্লবিক তৎপরতাও নজরুলকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। সেইসঙ্গে বিশের দশকের প্রথমার্ধে (১৯২১) কলকাতায় গোপনে ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ গড়ার কাজে কবির আগ্রহ বা প্রাথমিক প্রয়াসে আন্তরিক সহযোগ— এগুলোর প্রভাবও কবির জীবনে পড়েছিল। তারও আগে সেই ১৯০৫ সালে ‘বঙ্গভঙ্গের’ চেষ্টা, ১৯০৬ সালে ‘স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি’, ১৯০৮ সালের ‘রাজদ্রোহমূলক সভা ও সংবাদ দমন আইন’, ১৯০৮ সালের ‘ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীর কিংসফোর্ড হত্যার চেষ্টা’ বা ‘মাণিকতলায় বোমা তৈরির কারখানা’ স্থাপন; ‘ভি ভি সাভারকার’, ‘শ্যামজী কৃষ্ণ বর্মা’ ও ‘গণেশ সাভারকারের’ গুপ্ত কর্মকাণ্ড, ১৯২১ সালের নিরন্তর শ্রমিক ধর্মঘট ও ‘মোপলা বিদ্রোহ’ ইত্যাদি যুবক নজরুলকে যে নিরন্তর প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ