ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬

শহীদদের পরিচিতি নিশ্চিত হওয়া জরুরি

প্রকাশনার সময়: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:০৬

ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সময় মূল মিডিয়াগুলো যেহেতু সরকারি বিধি নিষেধের আওতাধীন ছিল, এজন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আমাদের সামনে আসেনি।

সকাল-সন্ধ্যা নামে একটা অনলাইন পত্রিকার সাজ্জাদ হুসেন ভাই প্রথম একটি সংবাদ শেয়ার করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ৩০ জুলাই ২০২৪-এ সহিংসতায় নিহত অন্তত গড়ে ১৫ জনকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।

১৫-২৯ জুলাই পর্যন্ত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের ৪নং ব্লকের পেছনে অজ্ঞাতনামা অনেক লাশ দাফন করা হয়, ওখানে ৪৩ জনকে দাফন ও সমাহিত করা হয়। ২২ জুলাই ১১ জন, ২৩ জুলাই ০১ জন, ২৪ জুলাই ৯ জন, ২৫ জুলাই ০৩ জন, ২৭ জুলাই ৭ জন, ২৮ জুলাই ১১ জন, ২৯ জুলাই ১ জনকে সমাহিত করা হয়। ২২ জুলাই ৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে আসে আর ২ জন আসে সোহরাওয়ার্দি মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে। ২৫ তারিখে ৩ জনই আসে ঢাকা মেডিকেল থেকে। ২৭ তারিখে আসে, সোহরাওয়ার্দি থেকে, ২৮ তারিখে আসে ঢাকা মেডিকেল থেকে। উপরের তারিখগুলো খেয়াল করলে দেখবেন ২৪ জুলাই তারিখটা উধাও। এ দিনের মৃতদেহগুলো মূলত আন্দোলনকারীদের— যা কোনো হাসপাতালে না দিয়ে সরাসরি কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। কবরস্থানের, গোলাম রব্বানিকে রেজিস্টার দেখানোর কথা বললে, সে রাজি হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু জানান, ২৮ জুলাই ছাড়া, অন্য লাশের রেজিস্ট্রেশন তার জানামতে পুলিশ ফাঁড়িতে হয় নাই।

৩১ জুলাই আজকের পত্রিকায় বলা হয়- ঢাকার ৩ হাসপাতালে অস্বাভাবিক লাশের গতি পরিলক্ষিত হয়েছে আর লাশ বেওয়ারিশ ঘোষণার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় নেয়া হয় নাই। ৩টি হাসপাতাল থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ২১টি মরদেহ আঞ্জুমানে মুফিদুলের মাধ্যমে রায়েরবাজার কবরস্থানে পাঠানো হয়।

১৫ আগস্ট প্রথম আলো নিউজ করে বেওয়ারিশ লাশ শনাক্তকরণের উদ্যোগ নেয়া উচিত। ১৬ আগস্ট মানবজমিনের নিউজে উল্লেখ করা হয়- আজিমপুর কবরস্থানে জুলাইয়ের শেষে পুলিশের প্লাস্টিক ব্যাগে করে মিরপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এসে লাশ ফেলে যায়।

আমরা আমাদের চারপাশে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে চিনি, যারা একটা নির্দিষ্ট ইকোনোমিক ক্লাস বিলং করে। যাদের ভাই-বন্ধুরা সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের নিয়ে আলোচনা করতে পেরেছে, তাদের কষ্টটাকে মানুষের সামনে আনতে পেরেছে। আমাদের থেকে যারা আরেকটু আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে তারা এসে কমপক্ষে নিজেদের ভাই বাবা ও সন্তানকে সমাহিত করতে পেরেছে। তারা জানে তাদের ভাই, বাবা ও সন্তানের কবরটা কোথায়। হয়তো গভীর রাতে, পরিবারের কেউ এই কবরটা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠবে।

কিন্তু নিহত শহীদ বীরদের মাঝে এমন কেউ আছে, যার পরিবার এতটাই অসহায়, হয়তো খবর নেয়ার মতো টাকাটাও তাদের কাছে এ মুহূর্তে নাই। হয়তো এ মানুষটাই বাড়িতে টাকা পাঠাত। হয়তো তার বাড়িতে এমন এক অসুস্থ বয়স্ক মা বা বাবা বসে আছেন, যে প্রতি মুহূর্তে ধুঁকছেন আর ভাবছেন তার সোনামানিক কেন তার খবর নেয় না, ফোন দেয় না। হয়তো তার ফোনও নাই, পাশের বাড়ির কারও ফোনে কল আসত। এই বীরদের DNA স্যাম্পল যদি এখন কোনোভাবে সংগ্রহ করা না যায়, তবে এরা আমাদের ৭১-এর নাম না জানা আসল বীরদের মতো চিরতরে হারিয়ে যাবে। কারণ কিছুদিন পরে হয়তো আর DNA স্যাম্পল নেয়ার মতো অবস্থায় থাকবে না। সত্যিকার বীরদের যে জাতি সন্মান করতে পারে না, তাদের অবস্থা কেমন হয়, তা তো আমরা বিগত দিনগুলোতেই দেখেছি।

আমি খুব চাচ্ছিলাম, এ DNA স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য আদালতে রিট করি। কিছু মানুষ কথা দিয়েছে, কিছু মানুষ পিছিয়ে গেছে। তাই আপনাদের সামনে এ আর্জি তুলে ধরা। আপনাদের কারণে যদি ফাইনালি আমি রিট করতে পারি আর একজন মানুষ, একটি পরিবারও যদি তার হারিয়ে যাওয়া মৃত মানুষকে খুঁজে পায় তাহলে একবার ভাবুন তার জন্য ঠিক কতখানি স্বর্গীয় প্রাপ্তি হবে ব্যাপারটা।

বেওয়ারিশ লাশের পুনঃময়নাতদন্ত নিয়ে আমার সঙ্গে প্রথমে কথা বলে Towhidul Hassan। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যে চলে গেছে, সে কিভাবে চলে গেছে জানার পাশাপাশি, কার কাছ থেকে চলে গেছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই তার পরিবার জানতে পারবে- কত সাধারণ ডালে ধরেছিল অতি মূল্যবান এক ঝরে যাওয়া ফুল। গাজী মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে বেশি সন্মান না করলে, কালজয়ী এ পুরুষেরা কি জন্মাবে আমাদের দেশে?

লেখক: মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক সেনা সদস্য

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ