টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের ৮টি জেলা। এর মধ্যে রেকর্ড বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। ইতিহাস সৃষ্টি করে ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল নদীর পানি। বৃহস্পতিবার বাঁধ ভেঙে লোকালয় পানি ঢুকে গেলে শুক্রবার দিনব্যাপী কমতে থাকে নদীর পানির উচ্চতা। তবে এখন পর্যন্ত পানি পুরোনো রেকর্ডের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে অনেক।
ভয়াবহ বন্যার কবলে টালমাটাল দেশের কয়েকটি জেলা। পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছেন লাখ লাখ মানুষ ফেনীতে প্রায় ৩ লাখ মানুষ দিন কাটাচ্ছেন পানিবন্দি অবস্থায়। রয়েছে খাবারের প্রচণ্ড সংকট।
জেলার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাও বিঘ্নিত। অনেকেই স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।
ফেনী অংশে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি ওঠায় চরমভাবে ব্যাহত যান চলাচল। যানজটও পৌঁছেছে চরমে। পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজির দুর্গত এলাকার মধ্যেই ৫ হাজার বাসিন্দাকে ইতোমধ্যে বাসাবাড়ির ছাদ ও নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বিভিন্ন বাহিনী।
অন্যদিকে বানের জলে তলিয়ে আছে নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়িসহ মোট ৭ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়িঘর-রাস্তাঘাটও তলিয়ে আছে পানির নিচে। এই জেলার দুর্গত এলাকাগুলোয় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
তবে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করেছে। এখনও বাড়িঘরে পানি থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেই অবস্থান করছেন অনেকে। দুর্গত এলাকাগুলোয় এখনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, বুড়িরচংসহ ১৪ উপজেলার ১১৮টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়েছে। সেসব জায়গায় পানিবন্দি আছেন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ।
জেলায় সাড়ে পাঁচশ’ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৪৪ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে। অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি থাকায় কুমিল্লা অংশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৭ লাখ মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি অবস্থায়। প্রায় দুইশ’ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন ২০ হাজার মানুষ। তবে বেশির ভাগ আশ্রয় কেন্দ্রেও উঠেছে পানি। চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে বানভাসীদের। প্রকট আকার ধারণ করেছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
তবে, মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার প্লাবিত এলাকা থেকে ধীর গতিতে পানি নামছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন অনেকে। তবে এখনও পানিবন্দি আছে নিম্নাঞ্চলের কিছু মানুষ। নিচু এলাকার বাড়িঘর-রাস্তাঘাট এখনও জলমগ্ন।
হবিগঞ্জে ধীর গতিতে নামছে খোয়াই নদীর পানি। তবে এখনও প্লাবিত জেলার ১৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। বাড়িঘর-দোকানপাটে উঠেছে পানি। রাস্তাঘাটও তলিয়েছে পানির নিচে। চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে বানভাসীদের। খোলা হয়েছে ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এরইমধ্যে প্লাবিত ৫ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি সরেছে। তবে এতে দুর্ভোগ কমেনি গ্রামের মানুষের। বানের জল কমে আসায় স্পষ্ট হতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। উজানের ঢলে ভেঙে যাওয়া হাওড়া নদীর বাঁধ দিয়ে এখনও পানি ঢুকছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত পাওয়া খবরে বন্যায় ১৩ জনের প্রানহানি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে– কুমিল্লায় ৪ জন, কক্সবাজারে ৩, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ২, নোয়াখালীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়াইয় ১ ও লক্ষ্মীপুরের একজন রয়েছেন।
আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছেন ব্রাহ্মণপাড়ার মালাপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাও। পানির এই প্রবাহ অব্যাহত থাকলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা পর্যন্ত প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ