ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবস্থা চালু করার এক বছরের মধ্যে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় রাজস্ব বোর্ডকে বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে দেখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে বিস্তর আলোচনার পর গত বছর চালু করা হয় ইএফডি ব্যবস্থা। লক্ষ্য ছিল, ২৫ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য ট্র্যাক ও সঠিকভাবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় করা। কিন্তু এ ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ইএফডি পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শর্ত লঙ্ঘন, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অসহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইএফডি চালু না করায় এতে সাফল্য আসেনি। এ পরিস্থিতিতে ইএফডি ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। ইএফডির বদলে কী ব্যবস্থা চালু করা যায়, তা ভাবতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন এনবিআরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। তবে তার আগে কার্যকর ও সমন্বিত অটোমেশন নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে ইএফডি ব্যবস্থার বিকল্প চিন্তা করার নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। সভায় উপস্থিত এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড ইএফডি ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও তারা সঠিকভাবে তা করতে পারেনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, দতাদের গত জুনের মধ্যে ৩০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ইনস্টল করার কথা থাকলেও মাত্র ১১ হাজার ইনস্টল করেছে। এর মধ্যে আট হাজার মেশিনের ক্ষেত্রে এনবিআরের স্পেসিফিকেশনের মেশিন আমদানির নীতিমালাও লঙ্ঘন করেছে।’ এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে শিগগিরই কারণ দর্শানের নোটিশ দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও আরো কিছু কারণ আছে। যার ফলে এ ব্যবস্থাটি আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। এ অবস্থায় বিকল্প ভাবছি আমরা।’ বিকল্প কী হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনোকিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এনবিআরের মধ্যকার উইংগুলোর মধ্যে ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইন্টিগ্রেশন তৈরি করার পর তা ঠিক করা হবে।’ অবশ্য এনবিআরের এমন অভিযোগ মানতে রাজি নয় ইএফডি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।
অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির আরেকজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ আমদানি কর রয়েছে, যা মওকুফ করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তা-ও হয়নি। অথচ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আবার এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী মাঠে গিয়ে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাচ্ছিল না।’
২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের (ইসিআর) মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা হতো। তবে ওই বছরে ২৫ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে এসব প্রতষ্ঠানের কাছ থেকে ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। কথা ছিল, এ ব্যবস্থা এনবিআরের সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কোনো পণ্য বিক্রির পর ওই তথ্য এতে ইনপুট দিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরে রক্ষিত সার্ভারে যুক্ত হবে এবং এতে কত ভ্যাট তা-ও দেখা যাবে। ফলে এতে কোনো তথ্য ইনপুট দেয়ার পর ভ্যাট ফাঁকির সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এ ব্যবস্থা চালু করতে পাঁচ বছর দেরি হয়। শুরুতে প্রায় এক বছর পরীক্ষামূলকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠানে চালু হওয়ার পর গত বছরের আগস্টে জেনেক্স ইনফোসিসের মাধ্যমে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দেয় এনবিআর। বছরে ৬০ হাজার এবং পরের পাঁচ বছরে ৩ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ১১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইএফডির আওতায় এসেছে।
সাবেক এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এনবিআরের এই প্রকল্প যে ব্যর্থ হবে, আমরা তখনই বলেছিলাম।’ এজন্য এনবিআরের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যারা এ সময় নষ্ট করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’ তিনি বলেন, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাইজেশন ও অটোমেশন ছাড়া এবং ভ্যাটের ১০ ধরনের রেট রেখে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। একই এলাকায় কোনো প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে, আবার কোনোটায় হচ্ছে না— এটিও এ ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ