টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজারসহ বেশ কয়েকটি জেলার বাসিন্দা। বিভিন্ন জেলায় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুই দিন ধরে ঢাকার তুলনায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি ছিল বেশি। আজ বৃহস্পতিবারও তা অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় যে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে তৃতীয় দফার বন্যায় জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জলাবদ্ধতায় আখাউড়া স্থলবন্দরে যাত্রী পারাপার বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত; খাগড়াছড়িতে বন্যায় ডুবে গেছে ৩০ গ্রাম; সাজেকে আটকা আড়াইশ পর্যটক; কুমিল্লায় ভারি বর্ষণে শহরে জলাবদ্ধতা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে; সিলেটে বিভিন্ন পয়েন্টের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তাছাড়া চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত ব্যুরো, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের খবরে—
ফেনী: জেলার ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলনাইয়া উপজেলায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে জেলায় প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছে। সিলোনীয়া নদীর একটি পয়েন্টে নতুন করে বাঁধ ভেঙেছে।
প্রধান সড়ক ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। এর মধ্যে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, টানা বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে।
তিনি জানান, গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া ২৬টির সঙ্গে এবার নতুন করে আরও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক সংস্থা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব বলেন, প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছে।
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ডিঙি নৌকা দিয়ে প্রায় ১০০ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া গ্রামের শহিদুল্লাহ চৌধুরী কিসমত বলেন, ‘জন্মের পর এমন বন্যা কখনো দেখিনি। মঙ্গলবার বিকালে বাড়ির উঠানে পানি থাকলেও বুধবার সকাল থেকে ঘরে পানি ঢুকে যায়। পানিবন্দি হওয়ায় ছেলেমেয়েদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।’ একই গ্রামের নাসরিন বেগম বলেন, চুলা পানিতে ডুবে গেছে। মঙ্গলবার থেকে রান্না হচ্ছে না। বাড়ির সবাই না খেয়ে আছে। কেউ কোনো ধরনের সাহায্য করছে না।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, ‘উপজেলায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ফায়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবক ছাত্রদের সহায়তায় দুইটা ডিঙি নৌকা দিয়ে বন্যার্তদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায়ও উদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের কাছে আরো ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।’
বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক মাহবুবা তাবাচ্ছুম ইমা বলেন, দু-দিন ধরে তারা শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। তবে পানি বেশি থাকায় ডিঙি নৌকায় উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে না। স্পিডবোট ছাড়া ফুলগাজী-পরশুরামের দুর্গত এলাকাগুলোতে যাওয়া সম্ভব নয়।
পরশুরামের শালধর গ্রামের আবু ইউসুফ বলেন, ‘বেশির ভাগ এলাকার একচালা ও পাকাঘর (একতলা) ডুবে গেছে। কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থান নেই। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।’
এদিকে টানা বৃষ্টিতে ফেনী পৌর শহরের বেশির ভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব সড়কে বসবাসকারী বাসিন্দা ও পথচারীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, ফেনী শহরের মিজান রোড, একাডেমি রোড, শাহীন একাডেমি, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, রামপুর, তাকিয়া রোড, আবু বক্কর সড়ক, ফেনী বড় বাজারের বিভিন্ন গলি, বারাহীপুর এলাকা, মহিপাল চৌধুরী বাড়ী সড়ক, পাঠান বাড়ী রোডসহ বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে পানি প্রবেশ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারী ও বাসিন্দারা।
ফেনী পৌরসভার সচিব সৈয়দ মো. আবুজর গিফরী বলেন, কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে সড়ক থেকে পানি নামতে সময় লাগছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শহরের বিভিন্ন ড্রেন পরিষ্কারে কাজ করছে। পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বন্দরের সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার সকাল থেকেই আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
মাহমুদুল হাসান জানান, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ভবনেও পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া পানির তোড়ে স্থলবন্দর সড়কের পাশে আমদানি-রপ্তানিকারকদের বেশ কয়েকটি অফিসও তলিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সকালে বন্দরে কয়েকটি মাছের পিকআপ ভ্যান এসেছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে বড় ট্রাকগুলো আসতে পারেনি। এর ফলে রপ্তানি কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজলা পারভীন জানান, আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের আখাউড়ার জাজিরা খালের ওপর একটি বেইলি সেতু পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
খাগড়াছড়ি: ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। ফলে সাজেক বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় আড়াইশ পর্যটক।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের ৩০ গ্রাম। অন্যদিকে চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার বিকাল থেকে কবাখালি, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ সাজেক সড়কের একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানান, ‘সাজেক সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত ২৫০ জন পর্যটক। তারা আজকে ফিরতে পারবেন না।’ এদিকে দীঘিনালার কবাখালিতে আটকা পড়া পর্যটক আমিনুল ইসলাম ও ওয়াহিদ কবির বলেন, ‘আমরা ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছি। বন্যার খবর জানতাম না। এখন আটকা পড়েছি। সড়কের দুই তিন জায়গায় পানি উঠেছে। এত দূর বাইক জার্নি করে আসার পর সাজেক যেতে পারছি না। বুধবার দীঘিনালায় অবস্থান করব। পানি কমলে সাজেক যাব।’
এদিকে চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। শহর তলীর এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও কয়েক দফা বন্যায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। খাগড়াছড়ি পৌর শহরের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা শান্ত ইসলাম, তোফায়েল মিয়া বলেন, তাদের এলাকায় এবার কয়েক দফায় বন্যা হয়েছে। তবে এখনো কোন ত্রাণ সহায়তা বা খাবার পাননি তারা।
তবে খাগড়াছড়ির পৌরসভার প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘বন্যা দুর্গতদের জন্য ১২ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’ অন্যদিকে দীঘিনালার বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। পানিতে ডুবে আছে মেরুং ও কবাখালি ইউনিয়নের ৩০ গ্রাম।
এছাড়া পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেড কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বন্যাদুর্গতদের শুকনো খাবার ও খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। মাইনী নদীর পানি না কমায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এখনো মেরুং বাজার পানির নিচে।’ এদিকে মঙ্গলবার রাতে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা: সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের ফলে টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার ফলে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং ও দেবিদ্বার এলাকার কিছু অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘরবাড়িতে পানি ওঠতে শুরু করেছে। ফলে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কুমিল্লায়।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর ফলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় কুমিল্লায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর গত ৭২ ঘণ্টায় রেকর্ড করা হয়েছে ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ দুর্বল হতে থাকলেও মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। যার ফলে এ ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে আরও ২-৩ দিন। আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৃষ্টিপাতের ফলে গোমতী নদীর পানি এতটা বৃদ্ধি হওয়ার কথা নয়। গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ডাম্বল লেকের বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে ক্রমশ পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই লেকের বাঁধ খুলে দিলে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চল প্লাবিত হয়। ফেনী ও নোয়াখালীতে বন্যা সৃষ্টি হলেও কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত তেমন চিত্র চোখে পড়েনি।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আজ (গতকাল) দুপুর ১২টার দিকে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় এ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ১২ সেন্টিমিটার।
তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি টিম নদীর তীরে অবস্থান করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। তবে গোমতীর কোথাও বাঁধ ভাঙার তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
সিলেট: বিভিন্ন পয়েন্টের নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটে বৃষ্টিপাত কমে এলেও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সিলেটের বৃষ্টিপাতের ওপর এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি নির্ভর করে না। মূলত ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় পাহাড়ি ঢলের ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, চলতি সময়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকা ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বইছে। সেই সঙ্গে মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এতে সব মিলিয়ে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে উপকূলসহ দেশের নদীবন্দরগুলোতেও ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান করছে। যে কারণে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বৃষ্টি বাড়তে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টি আরো বেশি হতে পারে। আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি চলতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ, সিলেট ও দেশের উপকূলীয় এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে।
চলতি বছর পাঁচ দফা বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। কেন হঠাৎ এত বেশি বন্যা, প্রশ্নটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। অপরিকল্পিত বাঁধ, নদীর নাব্য সংকট, খাল হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বন্যা সৃষ্টি হয়। নদী, খাল যে পরিমাণ পানি বহন করতে পারত, সেটা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বৃষ্টিপাত হলেই বন্যার কবলে পড়ছে মানুষ।
হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি কি স্বাভাবিক ঘটনা নাকি অন্য কোনো কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের বর্ষা মৌসুম। এ সময় বাংলাদেশে স্বাভাবিক বন্যা হয়। আমাদের বৃষ্টির ৭০ শতাংশই এই সময় হয়। শুধু আমাদের নয়, উজানে থাকা ভারতের একটা অংশেও এই সময়ে ভাার বৃষ্টি হয়। ফলে এ সময় আমাদের এখানে বন্যার বিষয়টি নির্ভর করে ওদের ওখানে কী পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তার ওপর। আমাদের তিস্তায় কিন্তু দ্রুত পানি চলে আসে, আবার দ্রুত কমে যায়। এখন ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর আছে। এর প্রধান কারণ জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫২ ভাগ বৃষ্টি কম হয়েছে। ওই সময় চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। এক মাসের বৃষ্টি ৫-৬ দিনে হয়ে গেছে। প্রতি বছরই এখানে বর্ষায় যে পানি আসে সেখানে কিছু না কিছু বন্যা হয়। এই মুহূর্তে বড় বন্যার আশঙ্কা কম। তবে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় আছে। ১৯৯৮ বা ১৯৮৮ সালেও কিন্তু সেপ্টেম্বরে বন্যা হয়েছে। ফলে আমাদের প্রস্তুতি রাখতেই হবে। যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ