শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

৮৭৬ জনপ্রতিনিধি অপসারণ

প্রকাশনার সময়: ২০ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৫

যথাসময়ে জনপ্রতিনিধিরা কর্মস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় জনসেবায় ভাটা পড়ে। শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগপন্থি অনেক জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যান। তাদের কাজে যোগ দিতে সময় বেঁধে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ওই সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের অপসারণ করা হয়েছে। ১২ সিটি করপোরেশন, ৬০ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৩২৩ পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করা হয়। তারা কেউই বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত হননি। ফলে তাদের স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। সারা দেশে স্থানীয় সরকার বিভাগ মোট ৮৭৬ জনপ্রতিনিধি অপসারণ করেছে। এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করে সরকার।

জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদের পাশাপাশি দেশের ১২ সিটি করপোরেশন মেয়রকেও অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

অপসারিত মেয়ররা হলেন—ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রেজাউল করিম চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের তালুকদার আব্দুল খালেক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সিলেট সিটি করপোরেশনের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ইকরামুল হক টিটু, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তাহসিন বাহার সূচনা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জায়েদা খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

অপসারণের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ধারা ১৩ক প্রয়োগ করে বাংলাদেশের এসব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের স্ব-স্ব পদ থেকে অপসারণ করা হলো।

দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মহ. শের আলীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসানকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে খুলনা সিটি করপোরেশন, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে সিলেট সিটি করপোরেশন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে বরিশাল সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) মহাপরিচালককে (অতিরিক্ত সচিব) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে রংপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ধারা ২৫(ক) এর উপধারা (১) প্রয়োগ করে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তাকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হলো।

এছাড়া ৭টি পৌরসভার প্রশাসককে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী সারা দেশের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়েছে। গত রোববার এ বিষয়ে পৃথক আদেশ জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মৃত্যুজনিত কারণে নাটোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে খালি হওয়া ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এদিকে ৪৯৩ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যানদের স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছে। এতে বলা হয়, এতদ্বারা উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ধারা ১৩(ঘ) প্রয়োগ করে বাংলাদেশের ৪৯৩ উপজেলা চেয়ারম্যানকে স্ব-স্ব পদ থেকে অপসারণ করা হলো। প্রজ্ঞাপনে মৃত্যুজনিত কারণে কয়রা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। অপসারণকৃত চেয়ারম্যানদের স্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্যদিকে আওয়ামী সরকারের আমলে নির্বাচিত ৩২৩ জন পৌর মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। গত রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর ধারা ৩২(ক) প্রয়োগ করে বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত পৌরসভার মেয়রদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করা হলো। এসব পৌরসভায় প্রশাসক বসিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের কর্মকর্তাদের এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশসমূহের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে আইন সংশোধনের এ উদ্যোগ নেয়া হয়।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ