ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডক্টর ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা

প্রকাশনার সময়: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৯

বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে বলে দেশের সাধারণ মানুষ মনে করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে এ দেশের সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নির্যাতন নিষ্পেষিত হয়েছে বলে দেশের বিজ্ঞ মহল মনে করেন। দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে এ দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এ নিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণকে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে। দেশের সাধারণ মানুষের রাষ্ট্রে অধিষ্ঠিত সরকারের কাছে তেমন কিছু বিশাল চাওয়া পাওয়ার নেই, তারা শুধু একটা জিনিসের দিকে চেয়ে থাকে তা হলো— দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। যাতে করে সাধারণ মানুষ স্বল্পমূল্যে দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করে খেয়ে পড়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ দেশ পরিচালনা করেছে কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। সাধারণ মানুষের কী অবস্থা সেদিকে তারা তাকায় না, সেটা হোক আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। যাই বলে থাকি না কেন কোনো দলের কাছেই মানুষ তেমন কিছু ভালো আশা করে পায়নি। যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যায় তখন সে দলের নেতারা তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলানোর জন্য ব্যস্ত থাকে সঙ্গে থাকে সরকারি আমলাদের দুর্নীতি। আমরা বিগত দিনে দেখেছি যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল তখন সে দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ও আমলারা তারা নিজেরা দুর্নীতি করে এদেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। কিন্তু এ দেশের সাধারণ মানুষ দেশের কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো দিনই নষ্ট করে না ভবিষ্যতেও করতে পারবে না। কারণ তারা কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে না।

আমরা বিগত দিনে দেশের দুর্নীতিবাজদের খোঁজখবর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পেরেছি। বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের আমলে দলের ও সরকারি আমলারা এত বেশি পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন যে তার কোনো হিসাব নেই। যার জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিল সরকারি আমলারা। দেশের সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী দেখা যায়, পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক আবেদ আলী, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতিউর, কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান এ রকম আরো অনেকেই কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আবেদ আলী হতে পারে একজন গাড়ির ড্রাইভার, কিন্তু আবেদ আলী যে কর্ম করেছেন তার মাধ্যমে তিনি এ দেশে শত শত বিসিএস ক্যাডার জন্ম দিয়ে গেছেন। বিসিএসে প্রশ্ন ফাঁস করে আবেদ আলী কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন। এখানে সরকারের স্বচ্ছতা কতটুকু ছিল সেটা এখন ভাবার বিষয়। সরকারের দীর্ঘদিনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিলেও এবারে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একটাই দাবি মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা। এসব প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা মাঠে নেমেছে। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণ। এ আন্দোলনের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকতে না পেরে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ার পর দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বনন্দিত অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। দেশের সাধারণ মানুষের একটি ধারণা রয়েছে, ডক্টর ইউনূসের কোনো লোভ-লালসা নেই, তিনি যেহেতু বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন অবশ্যই দেশের মধ্যে একটা ভালো কিছু হবে এটাই আশা করেন দেশের সাধারণ মানুষ। কারণ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস শুধু বাংলাদেশে নয়, বাংলাদেশের বাহিরেও অন্যান্য দেশকে তিনি তার দক্ষ মেধা ও বুদ্ধি দ্বারা ওই দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বিশাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার কারণে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। দলমত নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের ডক্টর ইউনূসের প্রতি একটাই দাবি তা হলো— দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করা এবং দেশের মানুষ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়ে থাকে সরকারি সেক্টরগুলোতে, সেই সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন দলীয় লোক হওয়ার কারণে হরহামেশাই দুর্নীতি করে পার পেয়ে যাচ্ছে। সে দুর্নীতি রোধ করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কঠোর হতে হবে এবং তা বন্ধ করতে যা যা প্রয়োজনীয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমরাও একটা জিনিস পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই, তাহলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক, যে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ কার্যক্রম করে থাকে শুধুমাত্র ভূমিহীন লোকদের সঙ্গে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভূমিহীন লোকদের মাঝে ঋণ বিতরণ করে যদি শতভাগ আদায় করতে পারে তাহলে সরকারের ব্যাংকগুলো কেন প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে থাকে এখানে ব্যর্থতা কার? এখানে ব্যর্থতা হলো সরকারের। কারণ সরকারি কর্মচারীরা দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে থাকে। একটা জিনিস আমাদের সবার কাছে দৃশ্যমান ডক্টর ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন যখন সকালে মাঠের ঋণের টাকা আদায় করে অফিসে ফেরেন তখন দেখা গেছে সরকারের ব্যাংকের লোকজন ঘুম থেকে উঠে তারপর অফিসে এসে দায়সারাভাবে কাজ করে আবার চলে যায়। এভাবে ব্যাংকের ঋণ আদায় করা যায় না, ব্যাংকের ঋণ সঠিকভাবে আদায় করতে হলে ডক্টর ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মতো দায়িত্বশীল হতে হবে।

ডক্টর ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা আর সরকারের ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকার কারণে তারা তাদের মনমতো কাজ করে থাকে। যার জন্য সরকারের ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে থাকে। এখানে একটিমাত্র সেক্টরের কথা উল্লেখ করা হলো। এভাবে দেশের প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি লোকজন জবাবদিহিতার অভাবে তারা সব সময় তাদের মনমতো কাজ করে থাকেন। এবং সেবা গ্রহণের জন্য আসা লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে সেবা গ্রহীতারা সরকারি সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, দ্বারস্থ হন বেসরকারি সেবার দিকে। গ্রামীণ ব্যাংক এমনি এমনি নোবেল পুরস্কার পায়নি। এজন্য ডক্টর ইউনূসের প্রতি দেশবাসীর দাবি, যেভাবেই হোক আপনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালীন আপনি দেশের সরকারি খাতগুলোকে সংস্কার করে এমন একটি ব্যবস্থা নিয়ে আসবেন যাতে কোনো সময় কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলেও কোনো দুর্নীতি করার সুযোগ না পায়। সেটা করতে হলে আপনাকে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে আপনি ভালোভাবেই জানেন। দেশের মানুষ আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। আপনি দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে থেকে কাজ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন কিন্তু আপনি দেশের মানুষ হিসেবে নিজ দেশের জন্য কি করেছেন সেই দায়বদ্ধতা থেকেও আপনি কাজটি করবেন বলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা আপনার কাছে। সরকারি খাতগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে একটা জাতি সহজেই অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দুর্নীতি রোধ করাই আপনার সরকারের প্রধান কাজ। আমাদের দেশের আরেকটি বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, তারা যেভাবে শিক্ষা কার্যক্রমকে সাধারণ মানুষের মাঝে জবাবদিহিতার মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন সেই শিক্ষাখাতে আপনি সেভাবে ঢেলে সাজাবেন বলে দেশের মানুষ আশা করে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ