ঢাকা, সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১, ১২ রজব ১৪৪৬

আসছে জাতিসংঘ তদন্ত দল

প্রকাশনার সময়: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩০

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে; তার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের জন্য আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসবে। তারা তদন্তের পর দায়বদ্ধতা নিশ্চিতে একটি পথনির্দেশিকা দেবেন বলেও জানিয়েছেন জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

গোয়েন লুইস বলেন, ‘তারা বাংলাদেশে আসার জন্য টিকিট করে ফেলেছেন এবং আগামী সপ্তাহে আসবেন। এই প্রতিনিধি দল প্রাথমিকভাবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংয়ের কাজটি করবে। তাদের কাজের পরিধি, টার্মস অব রেফারেন্স, কত সময় কাজ করবে; সেটি নিয়ে এখনো কাজ চলছে। কিন্তু আমরা কাজ করতে প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভ্যন্তরীণ যে তদন্ত প্রক্রিয়া (বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি) ছিল, সেটিতে জাতিসংঘের তদন্ত দলের অন্তর্ভুক্তি চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ওই সময়ে জাতিসংঘ সেটি মেনে নেয়নি। এখন যে তদন্ত দল আসবে, সেটির নেতৃত্ব দেবে জাতিসংঘ এবং সেটি নিরপেক্ষ হবে। এর বিশ্বাসযোগ্য থাকবে এবং এটি দায়বদ্ধতার একটি পথনির্দেশিকা দেবে।’

তদন্ত দলের সমুদয় খরচ জাতিসংঘ বহন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা জেনেভা থেকে আসবেন। বাংলাদেশে যারা রয়েছেন, তারা এক্সটার্নাল দল হিসেবে কাজ করবেন। যখন সরকারের সঙ্গে তার কাজ করা কাঠামোর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে, তখন বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে এসে কাজে নেতৃত্ব দেবেন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন।’

কারিগরি দলের টার্মস অব রেফারেন্সের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি এখনো প্রস্তুত হয়নি এবং এটি নিয়ে কাজ চলছে। এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশের সরকার কী চায় এবং কী ধরনের টেকনিক্যাল সহায়তার প্রয়োজন হবে। কাজেই জটিল কিছু বিষয় এখানে রয়েছে। এটি আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে হবে এবং এটি শিগগির হবে। তারপরে সিনিয়র যে দলটি আসবে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজে ঐকমত্য

সামনের দিনগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকার যে অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারণ করবে, সেগুলোতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে জাতিসংঘ সম্মত রয়েছে বলেও জানান গোয়েন লুইস।

তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছি সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায়কে মানবাধিকার সম্প্রসারণে সহায়তা করা এবং তদন্ত কাজে সহায়তা করা, যেটিতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত সন্ধ্যায় একমত হয়েছেন।’

বাংলাদেশে জাতিসংঘের ১৫টি সংস্থা উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার কাজ করছে এবং তারা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সহায়তা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি একটি অগ্রাধিকার বিষয়ে এবং এক্ষেত্রে জাতিসংঘ কিভাবে সহায়তা করতে পারে সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা, বন্যা সহায়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে যাবেন ড. ইউনূস

আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যাবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এ বিষয়ে গোয়েন লুইস বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যখন ড. ইউনূস যাবেন, তখন তাকে আমরা কীভাবে সহায়তা করতে পারি; সেটি নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে।’

মিয়ানমার প্রসঙ্গ

বর্তমানে মিয়ানমারে যা হচ্ছে, সেটি নিয়ে সবার উদ্বেগ আছে জানিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, ‘আমরা জানি সংঘাতের সঙ্গে সঙ্গে আরো মানুষ বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করতে চাইছে। অবশ্যই এ সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। তবে মিয়ানমারে যে অবস্থা রয়েছে সেটি প্রত্যাবাসনে একটি বড় বাধা। আমরা মিয়ানমারের বিশেষ দূতের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছি।’

তদন্ত দলকে সহায়তা করবে সরকার: অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের হত্যার তদন্তে জাতিসংঘ কারিগরি দল আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধি দলটি প্রাথমিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংসের কাজ করবে। তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘকে সহায়তা করতে প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের চাওয়া একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, রাশিয়া ও জাপানের রাষ্ট্রদূত। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলেন উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মূল বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের সহায়তা করা। যাতে আমাদের তদন্তটা ঠিক মতো করতে পারি এবং যারা শাস্তি পাওয়ার কথা তাদের যেন শাস্তির মুখোমুখি করা যায়। কারণ, এ সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। যারা এ অপরাধগুলো করেছে এবং যারা হুকুম দিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং এ কাজে জাতিসংঘ সহায়তা করুক, এটা নিয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা বলছে। এখানে সরকার কোনোভাবে যুক্ত থাকবে কিনা, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের আমরা যুক্ত করব। বাকিটা আন্তঃমন্ত্রণালয় ঠিক করে নেবে। তারা স্বাধীনভাবে করুক। তিনি (জাতিসংঘ) যদি এখানে তদন্ত করতে চান তার নিরাপত্তার বিষয়টাও তো দেখতে হবে। কাজেই স্বাধীন যতই হোন না কেন তারপরও আমাদের ইনভলমেন্ট থাকতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ সরকার চায় একটা স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং তার ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি দেয়া হোক। কাউকে কিন্তু ঢালাওভাবে বা সামরিক ট্রায়ালের চিন্তা কিন্তু সরকারের নেই। আমরা পুরোপুরি আইন অনুযায়ী করতে চাই কাজটা। তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা চাইব অবশ্যই যেন একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। অবস্থাটা এমন যে, কোনো কিছু করতে গেলে একটা সমালোচনা আসতে পারে। সে জন্য আমরা চাইব, এটা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে হোক এবং এতে যা যা সহায়তা করা লাগবে সেটা আমরা করব।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ