মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

তিন কারণে ফুরফুরে বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩৭

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, প্রায় দেড় যুগ পর গত বুধবার বাধাহীনভাবে সমাবেশ এবং সেই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের সুযোগ তৈরি হওয়ায় বিএনপি নেতারা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।

প্রায় দেড় যুগ পর বিএনপি এসব সুযোগ পেলেও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ তিন মাসের বেশি চায় না। দলটির নেতারা ইতোমধ্যে আগামী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জোর দাবি জানিয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করার কথাও জানিয়েছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। এখন দেশের পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করবে। তারা ছাত্রদের দাবি পূরণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি রূপরেখা মধ্য দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি পার্লামেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হবে। সরকার নিয়ে যেন জনগণের মনে কোনো প্রশ্ন তৈরি না হয় এটাই প্রত্যাশা করছি। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে আশা করছি।

বিএনপি মনে করে, স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে এবং সফল হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনায় সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এদিকে গত বুধবার ঢাকায় এক সমাবেশে নেতাকর্মীসহ জনগণের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আপনারা নৈরাজ্য শক্ত হাতে প্রতিরোধ করুন।

জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ পর গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বাধাহীনভাবে সমাবেশ করেছে বিএনপি। লাখো জনতার উপস্থিতিতে সমাবেশ করে দলটি। এদিকে সাড়ে ছয় বছর পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ভার্চুয়াল এই জনসমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ ছাড়া সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে অনেকটাই উজ্জীবিত দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনে গত বৃহস্পতিবার দায়িত্ব নেয় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এই সরকারের নেতৃত্বে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিএনপিসহ অন্য বিরোধীদের চাওয়া দ্রুত নির্বাচন দেয়া। যদিও এখনই আলোচনা হচ্ছে এই সরকারের নতুন নির্বাচন আয়োজনে সময় লাগবে। কারণ হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়কে সামনে আনা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের ফলে এসব ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। তাই রাষ্ট্র মেরামতে নতুন সরকারের কিছুটা সময় লাগবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাও রাষ্ট্র মেরামতে সময় লাগবে বলে অভিমত পোষণ করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগী উপদেষ্টাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারী শাসনের পতনের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এমন একটি পরিবেশ চায়, যেখানে তারা তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে এবং সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে বলে প্রত্যাশা করে। বিএনপি একটি পাবলিক ম্যান্ডেটসহ একটি নির্বাচিত সরকার গঠন এবং জনগণের সেবা করে একটি জবাবদিহিমূলক সংসদ, জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার এবং এর ফলে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত কয়েক দিন জোরালোভাবে বলেছেন, দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে। যদিও এর কারণ ব্যাখ্যা করতে চাননি তিনি। তবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের চাওয়া থাকবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনীতি সচল রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। এখন দেশের পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করবে। শেখ হাসিনা যেভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, লুটপাট করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়তেই এই সরকার কাজ করবে।’ তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশেও নেই বাইরেও নেই, এটা তো হবেই। এ জন্যই বাংলাদেশে আন্দোলন হয়েছে, রক্ত দিয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমি মনে করি ছাত্র-জনতার যে প্রত্যাশা তা পূরণের জন্য যা যা করার প্রয়োজন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাই করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর জন্য কাজ করবে। যত দ্রুত নির্বাচন দেয়া যায় ততই ভালো। ছাত্রদের দাবি পূরণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি রূপরেখা তৈরি করতে সক্ষম হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি পার্লামেন্ট তৈরি করবে। সরকার নিয়ে যেন জনগণের মনে কোনো প্রশ্ন তৈরি না হয় এটাই প্রত্যাশা করছি।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা করছি। আগে থেকেই আমাদের সহযোগিতা ছিল। সামনেও এই সরকারের প্রতি সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। আমরা বলেছি আগামী তিন মাসের মধ্যে যাতে এই সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। তা না হলেও যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এমনটিই চাই আমরা।’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সব ধরনের সহযোগিতা করছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নেমেছি, সবাই মিলে একটি সোনার বাংলাদেশ গঠন করতে চাই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সজ্জন ব্যক্তি তাকে যত রকমের সহযোগিতা দরকার আমরা তাই করব।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ