ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রেভ্যুলেশন এবং নতুন দল

প্রকাশনার সময়: ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১১

লেখাটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। আমার পরিচিত একটি সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক যিনি বিগত সরকারের আমলে প্রিন্সিপালের নির্দেশে দুই বছর শিক্ষক পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করা কলেজ শিক্ষকদের ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওদের বিরোধিতা শুরু করে। লেলিয়ে দেয় ছাত্রলীগকে। মওকা পেয়ে ছাত্রলীগও শিক্ষক পরিষদের সদস্যদের যাচ্ছেতাই ভাষায় অপমান-অপদস্থ করে। হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষকদের ওই ক্ষুদ্র গ্রুপ যারা ছাত্রলীগকে ইউজ করেছিল তারা এবার সদর্পে নিজেদেরকে বিএনপি ঘোষণা দিয়ে ওই শিক্ষককে নানা ভাষায় শাসানি দেয় হেনস্তা করার প্রয়াস পায়। সুবিধাবাদী পলিটিক্সের স্বরূপ বোঝানোর জন্য উদাহরণটি দেয়া হলো। কী মনে হয় বিএনপিও যদি আক্রোশ, জিঘাংসা, প্রতিহিংসা, ক্ষমতালিপ্সা নিয়ে আওয়ামী লীগের মতো F’ascism কায়েম করতে চায়, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা না নেয়, হিতবাদিতার পক্ষে নিজেদেরকে না শোধরায়- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? এক কথায় উত্তর হলো ‘না’। আওয়ামী লীগ নিজেদের ঐশ্বরিক পাওয়ার ভেবে নিয়েছিল। এক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত না করা নিয়ে যে নাটকগুলো মঞ্চস্থ করে গেছে সেটার প্রায়শ্চিত্ত হতেই অনেক বছর লেগে যাবে। বিএনপির আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিরোধী আওয়ামী লীগের ওপর গ্রেনেড হামলা ঘটেছিল। মারা গিয়েছিল ২৪ জন মানুষ। এখনো গ্রেনেডের স্প্রিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছে ৩০০ মানুষ। আমরা মনে করি ১৫/১৬ বছরে বিএনপি অমানুষিক নির্যাতনের ভিতর দিয়ে গিয়ে সেই অতীত কর্মকাণ্ডকে ওভারকাম করে গেছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেকদিন পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সজীব মুখটি আমরা দেখতে পেয়েছি। কথা শুনতে পেয়েছি। পল্টনে নতুন দিনের প্রথম সমাবেশে যিনি শান্তি ও সম্প্রীতির স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। যাকে একটা মেরিটলেস মামলায় বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ শরীরে অন্তরীণ জীবন কাটাতে বাধ্য করেছিল হাসিনা রেজিম।

এমন সব আগুনের দিন পেরিয়ে এসে বিএনপির সামনে আবার সুযোগ এসেছে। তারা যে হাসিনার চেয়ে অনেক বেশি ভালো এ প্রমাণটা যেন রাখে। অন্যথায় মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দেখতে দেখতে গণমানুষের ক্লান্তি আর ঘুচবে না। সুশাসন বঞ্চিত সেই ক্লান্ত মানুষ জেগে উঠলে আরেকবার ২০২৪ এর আগস্ট অভ্যুত্থান ঘটবে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে তারা এতদিন যুদ্ধ করেছে চেনা প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে। এখন তাদের লড়তে হবে নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন জমানার সঙ্গে। আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট যেই জমানা অনেক বদলে গেছে।

আমরা ইতোমধ্যে আভাস পাচ্ছি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা নতুন দিনের উপযোগী আনকোরা দল গঠন করবে। যেই দল তরুণ প্রজন্মের মর্জিমাফিক চলবে।

অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম তাঁর সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘প্রথমেই নাহিদ এবং আসিফকে অভিনন্দন। এটা যেমন তাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন তেমনি দেশের মানুষের স্বার্থে আত্মত্যাগও বটে। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকার কারণে সামনের ইলেকশনে তাদেরকে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তারা দুই জন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে পুরো দেশের মানুষের প্রাণের দাবিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবে, জনগণের রায় বাস্তবায়ন করতে চাপ প্রয়োগ করবে, আমাদের আস্থার প্রতিবিম্ব হয়ে উঠবে।

২০২৪ সালের এ অভ্যুত্থানে অন্যতম বড় অর্জন— বাংলাদেশের মানুষ তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে দেখতে চায়, দেশ গঠনে সামনের সারিতে প্রত্যাশা করে। এ তরুণদের মধ্যে কেউ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকবে, কেউ রাজপথে থাকবে। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে এসে নতুন করে ক্যাম্পাসগুলোকে ঢেলে সাজাবে আবার কেউ হয়তো সংসদে দেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে। দেশের মানুষ যদি চায়, নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে কোনো একটি ক্ষেত্রে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আন্দোলনকারীদের সতীর্থ ও অন্যতম অ্যাক্টিভিস্ট মো. সাহারাজ ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘আপনারা যারা Sarjis Alam ও Hasnat Abdullah কে উপদেষ্টা লিস্টে না দেখে আশাহত হচ্ছেন তাদের বলতে চাই, আমি খুব কনফিডেন্টের সাথে আপনাদের জানাতে চাই এরা দুই জন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে একটা নতুন দল গঠন করে সেই দলের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি হবেন। সব কিছুই প্লানিং মোতাবেক চলছে। এই দল গঠনে আমার সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে তাদের সহযোগিতায় এবং আমি সবাইকেই অনুরোধ করব সেই দল গঠনে এগিয়ে আসতে। আমিও চাই নতুন দল, তরুণ নেতৃত্ব আসুক।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম কাজ দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রস্তুত করা। কিন্তু সেই পথটা কেমন? গেল তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপিকে কোণঠাসা করে আওয়ামী লীগ একক আধিপত্য নিয়ে ক্ষমতা বাগিয়ে নিয়েছিল। যা কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এখন সেই আওয়ামী লীগের পতনের পর তাদের নেতাকর্মীদেরকে সুযোগ না দিয়ে যদি আরেকটি নির্বাচন করা হয়, নিশ্চিতই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বিএনপি। ক্ষমতা পেয়ে ওই বিএনপি কি অন্যদলের স্বাধীন রাজনীতি মানবে? বৈশ্বিক রাজনীতির হালহকিকত এবং অতীত অভিজ্ঞতা বলে কোনো রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আর Despotism হাত ধরাধরি করে চলে। তাহলে ইউনূস সরকার কী করবে?

দেশকে বিশুদ্ধ গণতন্ত্রে ফেরাতে হলে সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। এমনকি কেউ যদি নতুনভাবে কোনো রাজনৈতিক দল গড়তে চায় তাদের স্বাধীনতা ও অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করার পর জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অবাধ হতে পারে। ২০০৭-এ ওয়ান ইলেভেন পিরিয়ডে আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছার কথা জেনেছিলাম। যে কারণে সদ্য উৎখাত হওয়া সরকারের রুদ্ররোষে পড়েছিলেন তিনি। নানাভাবে হেনস্তার শিকারও হয়েছেন। এখন যদি তাঁর ইচ্ছা বা পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, আমরা সেই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। ছাত্ররা মাঠে ভালো কাজ করে দেখাচ্ছে।

আমরা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী সবাইকে দেখলাম। নতুন নাগরিক শক্তি অথবা গণশক্তি কেমন পারফরম্যান্স করে সেটি দেখতে মুখিয়ে রইলাম। আমরা চাই পুরোনো জরাজীর্ণতা দূরীভূত হয়ে আধুনিক মানুষরা বাংলাদেশ ঢেলে সাজাক। পুরোনো মানুষরাও আধুনিকতা রপ্ত করুক।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ