ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের চার দিন পর শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথগ্রহণ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বাকি ১৬ উপদেষ্টা হলেন— বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সুপ্রদীপ চাকমা, ফরিদা আখতার, বিধান রঞ্জন রায়, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, নূরজাহান বেগম, শারমিন মুরশিদ এবং ফারুকী আযম। তবে ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি সুপ্রদীপ চাকমা, বিধান রঞ্জন রায় ও ফারুকী আজম।
প্রায় চারশ অতিথির জন্য দরবার হল প্রস্তুত করা হয়। রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিকসহ বেসামরিক ও সামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে এদিন বিকাল থেকেই বঙ্গভবন এবং এর আশপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। বঙ্গভবনের ভেতরে এবং বাইরের সড়কেও ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। রাজধানীর রাজউক, অলিম্পিক ভবন, মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম ও বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীকে কাজ করতে দেখা যায়।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বসবাসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে তার এখানেই বসবাস করার কথা জানিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাষ্ট্রীয় এ অতিথিশালাটি সাজানো-গোছানোর কাজ করা হয়েছে। ভেতরে আসবাবপত্র নতুনভাবে এনেছে গণপূর্ত বিভাগ। এর আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানরাও এ ভবনটিতে থেকেছেন বলে জানা যায়। এখানে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, আনসার ব্যাটালিয়ন ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনটির প্রধান গেটে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সকাল থেকে এখানে নিরাপত্তার জন্য অবস্থান করেছি। আমরা এখানে বেলা ১১টার দিকে এসে দেখেছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) কোথায় উঠবেন আমরা কিছুই জানি না। উনার নিজস্ব বাসা গুলশানে উঠতে পারেন, আবার এখানেও উঠতে পারেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার পর দেশে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশের নবনিযুক্ত আইজিপিসহ বিভিন্ন বাহিনী প্রধান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজ আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন দিনের সৃষ্টি করল সেটাকে সামনে রেখে আরো মজবুত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যে তরুণ সমাজ এটা সম্ভব করেছে তাদের প্রতি আমার সমস্ত প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এরা এই দেশকে রক্ষা করেছে। এ দেশকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম দিয়েছে। এই পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম, সে বাংলাদেশ যেন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলতে পারে, এটি হলো আমাদের শপথ। এটা আমরা রক্ষা করতে চাই। এগিয়ে যেতে চাই।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজকে আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক। বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে কোনো যুবক আর হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে। বলেছে, যত গুলি মারুক আমরা আছি। যার কারণে বাংলাদেশজুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে। যার কারণে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করল।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের জন্য বেইলি রোড, মিন্টো রোড, হেয়ার রোডের ২০টি বাংলো বাড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম ভূঞা বৃহস্পতিবার বলেন, নতুন সরকারের সদস্যদের জন্য আমরা আবাসন ঠিক করে ফেলেছি। আমরা জানি না কতজন। তালিকার অপেক্ষায় আছি। তবে আমাদের বলা হয়েছে ২০টি আবাসন প্রস্তত করতে। সেভাবে আমরা সব কাজ করছি। বেইলি রোড, মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডকে মন্ত্রীপাড়া বলা হয়। এখানে বেছে বেছে ২০টি বাংলো প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। এসব বাংলোর চেয়ার-টেবিল-ফার্নিচার নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পিডব্লিউডির প্রধান প্রকৌশলী এ কাজের সমন্বয় করছেন। বাংলোর বাইরের আঙিনার আগাছা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও চলছে পুরোদমে। এসব বাংলোয় মন্ত্রীরা ছিলেন এতদিন।
সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল শাখা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল (বুধবার) থেকেই সেখানে প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান তাদের দায়িত্বের দিনগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনাতেই ছিলেন। ২০০৮ সালে এক-এগারোর পট পরিবর্তনের পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমেদও এ ভবনেই থেকেছেন।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য ২১টি গাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে। শপথের আগেই এজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরকারি পরিবহন পুল ঘুরে দেখা গেছে, গত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা যেসব গাড়ি ব্যবহার করেছেন, সেসব গাড়িই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৭-১৮টি গাড়ি লাগতে পারে বলে পরিবহন কমিশনার কার্যালয়কে ধারণা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় গাড়ি প্রস্তুত করা হয়। তবে কিছু অতিরিক্ত গাড়ি প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সরকারি পরিবহন পুলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভিভিআইপি প্রটোকলে সব সময় কয়েকটি গাড়ি বেশি প্রস্তুত রাখতে হয়। কোনো কারণে একটি গাড়ি নষ্ট হলে বা দুর্ঘটনায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে যাতে আরেকটি গাড়ি যেন পাঠানো যায় সে এ কারণে আমরা মোট ২১টি গাড়ি প্রস্তুত করেছি।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বিএমডব্লিউ’র অত্যাধুনিক সিরিজের গাড়ি। আর অন্য উপদেষ্টাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া গাড়িগুলোর মধ্যে টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড মডেলের গাড়ি রয়েছে। ২৫০০ সিসির এ গাড়ির মূল্য প্রকারভেদে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া রয়েছে মিতসুবিশি ল্যান্সার ইএক্স মডেলের গাড়ি। ১৬০০ সিসির এসব গাড়ির মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বৃহস্পতিবার সকালে তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধি, সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেই গঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’
এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এ কথা বলেছেন। ম্যাথু মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব সিদ্ধান্ত নেবে, সেগুলোতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন ও জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তারা এরই মধ্যে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সামনে কী পদক্ষেপ দেখতে চায়, তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, তারা যেন গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কাজ করে, সেটি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশে কী ঘটছে, তার ওপর আমরা নজর রাখছি এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতা নিয়োগ দিতে দেখছি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
গত সোমবার দুপুরের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। বিকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের তথ্য জানিয়ে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। এরপর থেকে দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না। গত রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে দেশে নতুন যাত্রা শুরু হলো।
উপদেষ্টাদের পরিচয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সামাজিক উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক। তিনি ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রবর্তনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ড. ইউনূস অর্ধশতাধিকেরও বেশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননাও।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্নর ছিলেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব ত্যাগের পর তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে আসীন ছিলেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে।
এম সাখাওয়াত হোসেন
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশি সামরিক ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ছিলেন।
এম সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পত্রিকায় কলাম লেখেন। তা ছাড়া, ২০টিরও অধিক বই লিখেছেন তিনি। চাকরি ও নির্বাচন কমিশন থেকে অবসরের পর তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে গবেষণার কাজ করছেন। একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকার কলামিস্ট এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
আসিফ নজরুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি একজন লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট। টিভি টক-শো ও সাহসী কলামের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। তিনি দশের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আসিফ নজরুল বাংলাদেশি লেখক হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শীলা আহমেদকে বিয়ে করেন। তার প্রাক্তন স্ত্রী ছিলেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী।
হাসান আরিফ
ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন হাসান আরিফ। তিনি একজন বাংলাদেশি আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
মো. তৌহিদ হোসেন
সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. তৌহিদ হোসেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার ছিলেন। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
সাবেক এ পররাষ্ট্র সচিব ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান একজন বাংলাদেশি আইনজীবী ও পরিবেশকর্মী। তিনি পরিবেশ নিয়ে কাজ করা এনজিও বেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রেন্ডস অফ আর্থ ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী সদস্য; এনভায়রনমেন্টাল ল’ এলায়েন্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং এনভায়রনমেন্টাল ল’ কমিশন অব দ্যা আইইউসিএনের সদস্য।
তিনি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বেশকিছু খেতাব ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ, হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট। এছাড়া তিনি ২০১২ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান।
শারমিন মুরশিদ
অধিকারভিত্তিক সংগঠন ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে রয়েছেন শারমিন মুরশিদ। সংস্থাটি ২০০১ সাল থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে আদিবাসী জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছে। তিনি ড. ইউনূসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ফারুক-ই-আজম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টায় যুক্ত হচ্ছেন ফারুক-ই-আজম। তিনি হলেন নৌকমান্ডো ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’। চট্টগ্রাম বন্দরে আক্রমণের জন্য গঠিত ওই আভিযানিক দলের উপ-অধিনায়ক ছিলেন তিনি।
আদিলুর রহমান খান
আদিলুর রহমান খান একজন মানবাধিকার কর্মী এবং মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের একজন আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্মুখসারিতে ছিলেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা
নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্তব্যরত রয়েছেন। ২০২৩ সালে ২৪ জুলাই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সুপ্রদীপ চাকমা বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি সপ্তম বিসিএসে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুপ্রদীপ চাকমা।
ফরিদা আখতার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী।
ফরিদা আখতারের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্যসম্পদ, তাঁতশিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন তিনি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পরিচালিত কার্যক্রমের মারাত্মক কুফল ও নারী স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে লেখালেখি এবং প্রতিকার আন্দোলনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সুপরিচিত ফরিদা আখতার। তিনি বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
বর্তমানে তিনি উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে নারী ও গাছ, কৈজুরী গ্রামের নারী ও গাছের কথা।
বিধান রঞ্জন রায়
বিধান রঞ্জন রায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা। পেশায় তিনি একজন মনোচিকিৎসক। তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও হাসপাতালে মনোচিকিৎসা বিভাগের পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
আ ফ ম খালিদ হোসেন
আ ফ ম খালিদ হোসেন একজন দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত। তিনি নতুন গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন।
বিশ্ব মুসলীম লীগের মুখপাত্র দ্যা ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নালসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খণ্ড এবং সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টি। এ ছাড়া, তিনি চারটি জাতীয় পত্রিকার নিয়মিত লেখক। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা। এছাড়া তিনি নেজামে ইসলাম পার্টির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
নূরজাহান বেগম
নূরজাহান বেগম ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন।
নাহিদ ইসলাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন এবং শেষ পর্যন্ত সেই আন্দোলনে সফল হোন।
আসিফ মাহমুদ
নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আরও যুক্ত হয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক।
২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর ঢাবির ডাকসু ভবনের সামনে থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে এ ছাত্র সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ