বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর সারা দেশে পুলিশের ওপর বীভৎস নৃশংসতা চালানো হয়েছে। এতে অন্তত ৭৫ পুলিশ সদস্যের করুণ মৃত্যু হয়। নিহতের বেশির ভাগই ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে নিচের সারির। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এর মাত্রা আরো বেড়ে যায়। একযোগে ডিএমপির অন্তত ৪৭টি থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র-গুলি ও মালামাল লুটপাট করা হয়। বাধা দেয়ায় এ সময় বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে অনেক পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর তাদের মরদেহ বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এরই মাঝে গতকাল বিকালে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসানের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিভিন্ন থানার ভেতরে ও বাইরে অনেক পুলিশ সদস্যের মরদেহ ২ দিন ধরে পড়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে। পচন ধরেছে অনেক মরদেহের। এদের মধ্যে অনেকের পরিচয় শনাক্ত হলেও বাকিরা অজ্ঞাত রয়েছেন। ভয়ে লাশ শনাক্ত করতে আসছেন না পরিবারের সদস্যরাও। যা সর্বকালের সব ধরনের নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। লঙ্ঘিত হয়েছে মানবাধিকারও। সব মিলিয়ে পুলিশে এমন বীভৎস হত্যাযজ্ঞ এর আগে কখনো হয়নি। এছাড়া নির্যাতন করা হয়েছে অনেক পুলিশ সদস্যের পরিবারের ওপরও। ভয়ে পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে আছেন অনেকে। সব মিলিয়ে পুলিশের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চলছে কর্মবিরতি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সব হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়ে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে একযোগে থানার ওসি রাজ্জাকসহ ১৩ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাদের মরদেহগুলো থানার একপাশে স্তূপ করে রাখে দুর্বৃত্তরা। এর আগে কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশের এক কনস্টেবলকেও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিনই সারা দেশে ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। থানায় হামলার সময় ঊর্ধ্বতনদের কাছে সাহায্যের আবেদন করলেও সাড়া মেলেনি। এসব ঘটনায় ভয়ে অনেক কর্মকর্তারা ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
এর পর গত সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর একযোগে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও পুলিশ সুপার এবং রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে খোদ রাজধানীর ৪৭টি থানা ও বিভিন্ন পুলিশ বক্সে হামলা চালানো হয়। বেশি তাণ্ডব চালানো হয় যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, ভাটারা, কদমতলি, উত্তরা পূর্ব, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রামপুরা, খিলগাঁও ও মিরপুর থানায়। এ সময় সাহায্যে চেয়ে ঊর্ধ্বতনদের কাছে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকার বাইরে হামলা চালানো হয়, টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা, বগুড়ার সদর, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুর থানা এবং নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি, জয়পুরহাট সদর থানা, কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিস, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং দিনাজপুর সদর থানায়। এ সময় আহত হন অন্তত ৩ শতাধিক পুলিশ সদস্য। নিহত হন অনেকে। যার পরিসংখ্যান এখনো তৈরি করতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর। কারণ ওই দিন পুলিশ সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনেও হামলা চালানো হয়। তারাও এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেনি। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতেও এ ধরনের নৃশংসতা দেখা যায়নি। গতকাল পুলিশের নিহতের সংখ্যার বিষয়ে নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এখনো পরিসংখ্যান করা হয়নি। সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছে। পরিসংখ্যান সংগ্রহের কাজ চলছে।’
জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে কয়েকজনের মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন, যাত্রাবাড়ী থানার আনসার সদস্য আবু জাফর (৪৩), উত্তরা পূর্ব থানার কনস্টেবল, মো. আবু হাসনাত রনি (২৪), একই থানার এস,আই, খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার (৪৯), পিতা, ঘেনেন্দ্র চন্দ্র সরকার, কনস্টেবল শহিদুল আলম (৪৮), যাত্রাবাড়ী থানার এস আই, সুজন চন্দ্র দে (৪২), একই থানার এএসআই রাজু আহমেদ (৩৫), এএসআই ফিরোজ হোসেন (৪২), পুলিশ কনস্টেবল, রেজাউল করিম (৪৮), পুলিশ সদস্য আব্দুল আলিম শেখ (৪৬), সঞ্জয় কুমার দাস (৩১), ডিবির ইন্সপেক্টর রাশেদুল ইসলাম (৪৪), কনস্টেবল মনির হোসেন (৪৫), র্যাব ১০-এর সদস্য আনোয়ার হোসেন (৫৭), সংসদ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল মাহফুজুর রহমান (২৪) ও বিজিবি সদস্য আবদুল আলিম শেখ (৪৬)। এছাড়া গতকাল আরো ৭ জনের মরদেহ রাজারবাগ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এর বাইরে গত ৬ আগস্ট ঢাকা মেডিকেলে অন্তত ২১ জনের মরদেহ পাঠানো হয়। এদের বেশির ভাগই পুলিশ সদস্য। অনেকের পরনে পুলিশের প্যান্ট থাকলেও গায়ে কোনো জামা ছিল না। কোমরের বেল্ট ও প্যান্টের ধরন দেখে তাদের পুলিশ সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে মারধরে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় পরিচয়ও সহজে শনাক্ত করার মতো অবস্থাই নেই বলে সেখানে দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৭৫ জনের মরদেহ আনা হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার ১১ জনের, সোমবার ৩৭ জনের, মঙ্গলবার ২১ জন ও গতকাল ৭ জনের মরদেহ আনা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বয়স আনুমানিক ২২. ৪০, ৩২, ৩৮ বছর।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মঙ্গলবারও যাত্রাবাড়ী থানার আশপাশে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে দুজনের মরদেহের ওপর পুলিশের পোশাক দেখা গেছে। আরেকটি মরদেহের হাতে পরানো রয়েছে হাতকড়া। ভয়ে তাদের মরাদেহ কেউ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা গতকাল বুধবার ভোরে মরদেহগুলো উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠান। এ ঘটনার পর অনেকের পরিবারের সদস্যরাও তাদের স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করতে আসছেন না। এমনকি যেসব পুলিশ সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন তাদের বিষয়েও পরিবারের সদস্যরা খোঁজখবর নিচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা হয়তো আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই হতাহত হন। পরে বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে তারা থানার ভেতর ঢুকে পুলিশ সদস্যদের মারধর করে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য হতাহত হন। পর্যায়ক্রমে বাড্ডা, রামপুরা, আদাবর, মিরপুর ও উত্তরা পূর্বসহ অন্তত ৪৭টি থানায় একযোগে হামলা চালানো হয়। থানায় আটকা পড়েন অনেক রিজার্ভ ও গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নিজেদের রক্ষা করতে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে অনেক হামলাকারীও নিহত হন। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলি শেষ হয়ে গেলে থানায় হামলে পড়ে দুর্বৃত্তরা। ধরে ধরে পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তাদের মরদেহ রাস্তায় এনে উল্লাস করতেও দেখা যায়। যাত্রাবাড়ীতে হত্যার পর পুলিশ সদস্যের মরদেহ ফুটওভার ব্রিজের সঙ্গেও ঝুলিয়ে রাখা হয়। আবার অনেকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমেও ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়। ভাটারা থানা থেকে অস্ত্র লুটের পর তা দিয়ে গুলিও ছুড়তে দেখা গেছে। এসব দেখে অনেকে আরো উৎসাহী হয়ে দুর্বৃত্তরা দেশের বিভিন্ন থানা ও সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। এক পর্যায়ে রাত ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন থানায় আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। গভীর রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন থানায় আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারের পর তাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়। তবে বিভিন্ন থানায় পড়ে থাকা পুলিশ সদস্যের মরদেহ দু-দিন ধরেও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইডি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ৭৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক এক সংখ্যানে উঠে এসেছে। এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান নিরূপণে কাজ চলছে।
পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮৫: এখনো রাজারবাগ হাসপাতালের আইসিইউ দু’জন আর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৮৫ পুলিশ সদস্য। সংঘর্ষের পর এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৭১ জন। সব মিলিয়ে সারা দেশে সহিংসতায় আহত হন সহস্রাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তবে অনেক পুলিশ সদস্য ডিউটিতে যাওয়ার পথেও বিক্ষোভকারীদের হাতে আক্রান্ত হন। ঘটনার দিনের দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কান্নায় ভেঙে পড়েন আহত পুলিশ সদস্যরা। এসআই সৈকত আলী বলেন, ‘২০ জুলাই বনশ্রীর মাদারটেকের বাসা থেকে বেরিয়ে গুলশানে ডিউটিতে যাচ্ছিলাম। রামপুরার মুখে পৌঁছাতেই আমাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভকারীরা। পরে তারা আমার পকেট থেকে কাগজপত্র ও মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এ সময় আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি। তারা আমার মোবাইল ফোন দেখে পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পিছু নেয়। এক পর্যায়ে আমি পাশের একটি বাসায় ঢুকে বাথরুমে আশ্রয় নিই। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে বাথরুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কেউ কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা বলে। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে আমাকে বের করে বেদম মারধর করে।’
আরেক পুলিশ সদস্য নাসির উদ্দিন বলেন, ‘১৮ জুলাই পুরান বিশ্বরোডে ২টা থেকে ডিউটি ছিল। ডেমরা কোনাবাড়ী থেকে বেরিয়ে ডিউটিতে যাওয়ার পথে গতিরোধ করে আমাকে মারধর করা হয়। কোনো রকমে দৌড়ে একটি হোটেলে আশ্রয় নিই। কিছু সময় পর স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে আসি।’ কনস্টেবল আরমান আলী বলেন, ‘১৭ জুলাই রাত ১টার দিকে রামপুরায় ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি কাঁধে থাকা ব্যাগ দেখে পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার দিলে পালানোর চেষ্টা করি। একজনের লাঠির আঘাতে রাস্তায় পড়ে যাই। এরপর খুব মারধর করে তারা।’ ১৯ জুলাই এক বিচারপতিকে ডাক্তার দেখিয়ে যাত্রাবাড়ীর কাজলার বাসায় ফেরার পথে বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হন ডিএমপির সুপ্রিম কোর্ট অ্যান্ড বিশেষ নিরাপত্তা বিভাগের কনস্টেবল মফিজুল ইসলাম। রাজারবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে মফিজুল একটি কাগজ বের করে দেন। হাতে নিয়ে দেখা যায়, সেখানে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। মফিজুল লিখেছেন, ‘আমি কথা বলতে পারি না, চোয়াল ভাঙা। ঘটনার দিন সকালে কাজলা টোল প্লাজার আগে চার থেকে পাঁচজন টোকাই আমি পুলিশ কিনা জানতে চায়। ভয়ে অস্বীকার করি। পরে তারা আমার ফোন কেড়ে নেয়। মোবাইলে পুলিশের ছবি দেখে বলে, ‘পুলিশ পাইছি’ এ কথা শুনে আশপাশ থেকে আরো ১৫ থেকে ২০ জন এসেই মারধর শুরু করে।’
পুলিশকে আজ সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ আইজিপির: সারা দেশের পুলিশ সদস্যকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্ব স্ব পুলিশ লাইন্স, দপ্তর, পিওএম ও ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। গতকাল বুধবার আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এ কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই স্ব স্ব ইউনিটে নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে সব শুরু করতে চাই। তাই সবাইকে আগামী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ৮ আগস্ট আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলন দমনে অপারেশনাল ভুলত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে আইজিপি বলেন, ছাত্র-সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। সব কিছুর জন্য আইজিপি হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্সকে স্ব-স্ব পুলিশ লাইন্সে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপাররা স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বর্ণিত কমিটি থানা ও থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপৎকালীন সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং পরবর্তীতে এর চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। আমি পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সব স্তরের সহকর্মীকে সামাজিক মাধ্যমে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত, সমিতি, ব্যাচ, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কোনো দাবি, মন্তব্য, প্রতিউত্তর প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছি। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই রাষ্ট্রের মূল শক্তি। তাই, আমরা সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দক্ষ, জনবান্ধব, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদার পুলিশ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সবাই একযোগে কাজ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ