মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

বন্ধ যমুনা, চিন্তায় কৃষক

প্রকাশনার সময়: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৯

গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘ সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের বৃহত্তম সার কারখানা যমুনা। বন্ধ রয়েছে কারখানাটির ইউরিয়া সার উৎপাদন। এতে সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতিও মরিচা ধরে অকেজো হওয়ার পথে। অপরদিকে কারখানার সঙ্গে জড়িত থাকা হাজারো শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় সামনে রোপা-আমন মৌসুমে যমুনার সারনির্ভর কৃষকরা সার সংকটের আশঙ্কা করছেন।

যমুনা সার কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সার কারখানা। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক এক হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমে ১ হাজার ২০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। যমুনা সার কারখানায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এরপর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার পথে। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে বৃহৎ এ শিল্প কারখানা সচল করতে না পারলে পুরোপুরি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

যমুনা সার কারখানার উপ-প্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) ফজলুল হক বলেন, ‘গ্যাস সংযোগ না থাকায় দীর্ঘ ছয় মাসের বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ। কারখানায় বড় ধরনের কোনো ত্রুটি নেই। ছোট ছোট যা ছিল তা সারানো হয়েছে আগেই। গ্যাস পেলে কারখানা পুনরায় চালু করা হবে।’

যমুনা সার কারখানা থেকে কয়েক হাজার ডিলার সার নেয়। দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানার কমান্ডিং এরিয়ায় সার সংকটের আশঙ্কায় সার ব্যবসায়ীরা।

কৃষক আলমগীর হোসেন, জয়নাল মিয়া, আশরাফ হোসেন ও সামাদ মিয়াসহ অনেকেই জানান, যমুনার সার জমিতে ব্যবহারে ফসল বৃদ্ধি পায়। গাছও সতেজ হয়। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসল ভালো হয় না। জমির উর্বরতা কমে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন যমুনা সার কারখানা বন্ধ থাকলে পূর্বপুরুষের ব্যবহার করা এ সারসংকটে উৎপাদন ব্যাহতের কথাও জানান তারা।

সার কারখানার শ্রমিক মজনু মিয়া, সুলতান মাহমুদ, লেবু মিয়া ও কাদের শেখ বলেন, ‘আমাদের জীবনযাপন বেশ কষ্টকর হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার অনেক যন্ত্রাংশও অকেজো হয়ে যাচ্ছে।’ এভাবে বন্ধ থাকলে এক সময়ে চলমান চিনি, পাট শিল্পের মতো এ শিল্পটিও বন্ধ হয়ে যাবে বলে কারখানার শ্রমিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সার কারখানা এলাকার ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘কারখানার সঙ্গে জড়িত প্রায় তিন থেকে চার শতাধিক পরিবহন। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এ পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’ যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে রক্ষার দাবি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের।

যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, ‘যমুনা সার কারখানায় এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে খরচ লাগে ১৮-২০ হাজার টাকা। আর দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে এক টন সারের খরচ লাগে প্রায় এক লাখ টাকা। আমদানিনির্ভরতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে সচল রাখা হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে। এতে বাইরে থেকে সার আনতে সরকারের ভর্তুকি ভার বহন করতে হবে না।’ কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে বলে জানান এ শ্রমিক নেতা।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ