ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আজ নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত!

প্রকাশনার সময়: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৪

অবশেষে নিষিদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। গত সোমবার ১৪ দলের বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আজ (বুধবার) নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা হবে বলে জানা গেছে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারপন্থিদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নয় জামায়াত।

আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে এখনো দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।

জামায়াত-শিবিরকে আজ বুধবারের মধ্যে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি করা হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীও তাকে (আইনমন্ত্রী) নির্দেশ দিয়েছেন আগামীকালের (আজ) মধ্যে একটি ব্যবস্থা নেয়ার। তিনি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বসবেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। যখন সিদ্ধান্ত হবে, তখন বলবেন। তখন সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘তাহলে কি আগামীকালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত (জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ) হবে?’ জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ।’

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘কালকের (আজ) মধ্যে যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তো নির্বাহী আদেশে হবে?’ এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়।’এরপর প্রশ্ন করা হয়, তাহলে কি নির্বাহী আদেশেই হচ্ছে— জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা কোটা আন্দোলন করেছিলেন, তারা কিন্তু বলেছেন, এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের (সরকার) কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে জামায়াত, বিএনপি, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা (সহিংসতা) করেছে। দলটিকে (জামায়াত) যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।’ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেই ইস্যু পরিবর্তনে অপকৌশল হিসেবে সরকার এটা করছে। নৈরাজ্যের দায়-দায়িত্ব অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর না চাপিয়ে অবিলম্বে আপনারা পদত্যাগ করুন। এ সরকার রাষ্ট্রঘাতী, প্রাণঘাতী, গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।

ফখরুল বলেন, সরকার একটা ইস্যুকে ডাইভার্ট করার জন্য আরেকটা ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। পাকিস্তান আমলেও কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। স্বৈরাচার সরকাররা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নিয়ে থাকে। এ দেশে জঙ্গিবাদের বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে উল্লেখ আছে। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। সেটার প্রক্রিয়া কী হবে, তা আইনগত দিক দেখেশুনে সরকার শিগগিরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। কারণ, তারা আইনগত দিকটি ভালোভাবে দেখে নিতে চায়, যাতে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এ অপশক্তি আর কোনো সুযোগ না পায়। তিনি বলেন, এখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন। জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের কারও সংযোজন-বিয়োজন, সংশোধন থাকলে তারা বলতে পারেন। সংযোজন-বিয়োজন বা সংশোধন দরকার। সেটা উল্লেখ করতে নেতারা যাতে কুণ্ঠিত না হন। গত সোমবার গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটিকে ‘বেআইনি’ উল্লেখ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছেন তিনি।

গতকাল এক বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোনো দল বা জোট অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ধারা চালু হলে এক দল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে থাকবে। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।’

দলের আমির দাবি করেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন যা বাংলাদেশের সব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।’ বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে বসে অতীতে অনেক আন্দোলন করেছে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার ফর্মুলা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে এবং তার ভিত্তিতে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ রকম একটি গণতান্ত্রিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি বেআইনি, এখতিয়ারবহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি। জনগণ ১৪ দলের এ দাবি গ্রহণ করবে না।’ বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘অরাজক পরিস্থিতিতে সরকার দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

দলের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে আমির উল্লেখ করেন, ‘অতীতে যত অঘটন ঘটেছে কোনো তদন্ত ছাড়াই তার জন্য জামায়াতকে দোষারোপ করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে যে জামায়াত কোনো ঘটনার সঙ্গেই জড়িত নয়। বরং দেখা গেছে, ওইসব ঘটনার সঙ্গে শাসকগোষ্ঠীই জড়িত। এবারও সরকারের সব অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হবে, ইনশাআল্লাহ।’

উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। ১৪-দলীয় জোটের গত সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে যে নাশকতা, আগুন দেওয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তারাই এসব অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা করেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটির ছাত্র সংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য একটি আইনের খসড়া কয়েক বছর আগে তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ