চলমান সংকট আরো বড় হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে একের পর এক সংকট। তাতে নতুন করে যুক্ত হলো বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারা। নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমছে। গত মে মাসে এই খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০.৩৫ শতাংশ থাকলেও জুন মাসে তা কমে ৯.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এই হারই বহাল থাকার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন বিনিয়োগে ভয় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই বছর থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দ্বিতীয়বারের মতো বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় মে মাসে। কারণ মে মাসে ১০.৩৫ শতাংশে উঠেছিল বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির হার। বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়লে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয় বলে মত বিশ্লেষকদের। কারণ বেসরকারি খাতের ঋণের ওপর নতুন কর্মসংস্থান নির্ভর করে। এই খাতের ঋণ বাড়লে দেশে কর্মসংস্থান এবং তার সঙ্গে উৎপাদন বাড়ে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ১৪ শতাংশ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় ঋণের প্রবৃদ্ধির হার। এর পর থেকে লক্ষ্যমাত্রার আশপাশেই রয়েছে প্রবৃদ্ধি।
ব্যাংকাররা বলছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধির এ অবস্থা। একটি দেশের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি অপরিহার্য। কিন্তু ক্রমেই দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.৮ শতাংশ, মে মাসে ১০.৩৫ শতাংশ, এপ্রিলে ৯.৯০ শতাংশ এবং মার্চে ছিল ১০.৪৯ শতাংশ, যা ওই সময়ে আগের ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি মাসে প্রায় আট বিলিয়ন ডলার করে এলসি খোলা হয়েছে। সে সময়ের তুলনায় ঋণপত্র খোলার হার অনেক কমেছে। আমদানী চিত্রই বলে দিচ্ছে নতুন বিনিয়োগ ও পুরনো ব্যবসা সম্প্রসারণের হাল। আমদানী কমে যাওয়াকে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণে বলে মনে করছেন এই ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে কমেছে ৪.২৩ শতাংশ ও ১৩.৯৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫১.৪৮ বিলিয়ন ডলার। ওই আট মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৪৪.৩১ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি ২৫.৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৮৫ বিলিয়ন ডলারে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি নিষ্পত্তি ২৫.০৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৪৩ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৬২ শতাংশ। এর পর থেকে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯.৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির এই হারই বহাল থাকবে।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ