ঢাকা, রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য

প্রকাশনার সময়: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪০

সরকারী চাকরীতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা, কারফিউ জারি, যান চলাচল ও ইন্টারনেট বন্ধ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি নিয়ে তৈরী হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আমদানী-রপ্তানীসহ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বেশীর ভাগ সেবা-পরিষেবা স্থবির হয়ে পড়েছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসাও পড়ে অচলতার কবলে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সও আসছে না। আন্দোলনে সহিংসতা এর আগেও নানা সময় হয়েছে। তবে এবারের চিত্র ব্যবসায়ী নেতাদের কাছে অচেনা। তারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্য ক’দিন বন্ধ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তবে হঠাৎ সব অচল হয়ে যাওয়ায় আগে থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। ছত্রাক পড়ে মালামাল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, কাঁচামাল পচে যাওয়া ও খাদ্যদ্রব্য মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।

দোকানের ক্ষতি অনিরূপনীয়: বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অন্য সময়ে একদিন দেশের দোকান বন্ধ থাকলে ক্ষতি হয় দিনে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা। এবারো সেই ক্ষতি হচ্ছে। তবে এবারের ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশী।’ এ ‘বাড়তি ক্ষতির’ বিষয়টি বর্ণনা করে তিনি বলেন, মেয়াদ শেষ হয়ে জুতার গাম ছুটে যাচ্ছে, চালে ছত্রাক পড়ছে, পরিবহন ব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়েছে, কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে, এ ক্ষতির পরিমাণ অবর্ণনীয় ও অনিরূপনীয়। দিন আনে দিন খায় এমন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের বিষয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এদের কথা ভাবে কে? দেশে দুই কোটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অনেকেই চা বিক্রী করে।

হকাররা দিন আনে দিন খায়। এদের কথা কেউ ভাবে না। কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা আগামী দিনে দেশ চালাবে তারা যদি এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা না ভাবে, তাহলে কীভাবে হবে?’

শঙ্কায় পোষাক খাত: বন্দর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকা এবং কারখানা বন্ধ থাকায় পোষাক খাতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছে তৈরী পোষাক রপ্তানীকারক ও উৎপাদকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি এস এম মান্নান কচি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘এর চেয়ে বড় ক্ষতিটি হচ্ছে এই যে, আমাদের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ও নির্ভরতায় ঘাটতির আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ফলে আমাদের ভাবমূর্তির যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা টাকার অঙ্কে প্রকাশ করা কঠিন।’

রপ্তানী চালান বন্ধ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের-এনবিআর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশের ৪৩টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৬ হাজার চালান পণ্য রপ্তানী হয়েছে। এ হিসেব আমলে নিলে গত তিন দিনে প্রায় ১৮ হাজার চালান বন্দরে আটকা রয়েছে।

ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় পণ্য রপ্তানী করা যায়নি। একইসঙ্গে আমদানীকৃত পণ্যের শুল্কায়নও করা যায়নি। বর্তমানে বন্দরে সব পণ্য কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড অটোমেশনের মাধ্যমে খালাস করা হয়। পরে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু পণ্য খালাসের নির্দেশ দেয় এনবিআর। গত সোমবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে এনবিআরের কাস্টমস নীতি শাখা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এ নির্দেশনার আওতায় কেবল শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য ও পচনশীল পণ্য খালাস করা যাবে। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা বন্দর চালু ও প্রয়োজনে ম্যানুয়ালি মাল খালাসের আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।

দ্রুত সমাধান দাবী: বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন অস্বাভাবিক সময়ের মধ্যে আছি। এটি মহামারী বা বৈশ্বিক মন্দার মতো পরিস্থিতি না, এর শান্তিপূর্ণ দ্রুত সমাধান আসতে হবে রাজনৈতিক পর্যায় থেকেই।’ ইন্টারনেট বন্ধ কোনো সমাধান না জানিয়ে তিনি বলেন, মহামারীতে মানুষ কেবল ঘরবন্দী ছিল। এবার ভার্চুয়ালিও লকডাউন হয়েছে। বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। অর্থনীতির আকার অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ কত জানতে চাইলে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ক্ষতির আকার হুট করেই নিরূপণ করা ঠিক হবে না। দেশে আমদানীর প্রায় ৪০ হাজার চালান আটকে পড়েছে। ছয় হাজারের মতো চালান রপ্তানী প্রতিদিন ব্যাহত হচ্ছে। লকডাউনে অনলাইনের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল ছিল, সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ