ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, মানুষ খাবে কী!

প্রকাশনার সময়: ১২ জুলাই ২০২৪, ১১:০২

লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই। একটি পণ্যের দাম কমলে, অন্যটির বাড়ে কয়েকগুণ। কাঁচাবাজারে এমনটাই অভিযোগ ভোক্তাদের। সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়ে গেছে মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। বৃষ্টি ও কোটাবিরোধী ‘বাংলা ব্লকেড’ অজুহাত দেখিয়ে নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন। এসব অজুহাতে সরবরাহ ঠিক থাকলেও বাড়ানো হয়েছে ডাল, আলু ও ডিমসহ সব পণ্যের দাম। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে রাজধানীর কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টির কারণে বাজারগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই। তার পরও সবজির চড়া দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৫-৫০ টাকার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়, গত সপ্তাহের ১৩৫ টাকা কেজি মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় এবং গত সপ্তাহের ১৪০ টাকা ডজন ফার্মের ডিম কিনতে হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা, যা আগে ১৬০-১৮০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৯৫-১১০ টাকা ছিল।

খুচরা বাজারে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোন সবজি। গত সপ্তাহের ৫০ টাকার পেঁপে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে প্রতি কেজি লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। যা সপ্তাহ আগে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি করলার দাম ৬০-৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটির কেজি ৬০-৭০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি। যা ৭ দিন আগেও ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে খুচরা বাজারে এক সপ্তাহ আগের ১৭০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকায়, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-১০০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকায় এবং তেলাপিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. রাতুল হাসান বলেন, বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও নিত্য নতুন অজুহাত দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। মাসের বাজেট সপ্তাহে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন এখন ডাল, ডিম ও আলুভর্তা করে ভাত খাবো তাও ভাবতে পারি না। যেন এসব দেখার কেউ নেই।

একই বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এখানে কারসাজি নেই। বৃষ্টিতে খেতের অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া কাদার কারণে মাঠ থেকে সবজি সরবরাহ কম হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছাত্রদের বাংলা ব্লকেডের কারণে পরিবহন ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। বাজারে তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, পণ্যের দাম সহনীয় করতে সার্বিকভাবে অভিযান চলমান আছে। ডিমের অস্বাভাবিক দামের পেছনে তেজগাঁও ডিম আড়তদারদের হাত রয়েছে। অভিযান পরিচালনা করে সত্যতা পাওয়ায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। অন্যান্য যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না; ফলে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ