স্বজনের বুকফাটা আহজারিতে এখনো ভারী হয় আবু তোরাবের আকাশ-বাতাস। চোখের জল শুকিয়ে শোকে পাথর। এখনো গভীর রাতে ভেসে আসে কান্নার রোল। স্মৃতি বলতে শুধুই ছবির ফ্রেম। আজও নাড়িছেঁড়া ধন ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা সেই ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে আহজারি করেন। কখনো হয়ে যান নির্বাক। সন্তানদের জন্মদিন অনেকে হয়তো ব্যস্ততার কারণে ভুলে যান। কিন্তু মৃত্যুদিন কেউ কখনোই ভোলেন না। আর সেই মৃত্যু যদি হয় ইতিহাসের পাতায় লেখা, সেটা তো আরও বেদনাদায়ক। বলছি, শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির কথা। আজ ১৩ বছর পূর্ণ হয়ে ১৪ বছরে পা দিয়েছে এ ট্র্যাজেডি। মিরসরাইবাসী কোনোদিনই ভুলতে পারবে না এ দিনটিকে।
দিনটি ছিল ২০১১ সালের ১১ জুলাই, সোমবার। মিরসরাই স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল জিতে মিনি ট্রাকে ফিরছিল সবাই। বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় ট্রাকটি উল্টে ছিটকে পড়ে যায় ডোবায়। ঘটনার পরপর ডোবার পানি থেকে উদ্ধার করা হয় একের পর এক মরদেহ। অন্যদিকে ছেলের মৃত্যুর খবরে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বাবা হরনাথ। সব মিলিয়ে ৪৫ জনের প্রাণের বিনিময়ে রচিত হয় মিরসরাই ট্র্যাজেডি।
আবু তোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারায় এ দুর্ঘটনায়। এছাড়া আবু তোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনজন, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের দুজন, আবু তোরাব ফাজিল মাদরাসার দুজন এবং আবু তোরাব এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী মারা যায়। এ রকম একসঙ্গে এতজন সতীর্থ হারানো দিন বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি। হতবিহম্বল হয়ে পড়ে ওদের বন্ধুরাও। অনেকে বারবার মূর্ছা যান। এখনো তাদের মনের দাগ শুকায়নি। আজও সতীর্থদের মৃত্যুতে শোকাহত আবু তোরাবের জনপথ। মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ