গণতন্ত্রের মানসকন্যা বিশ্ব মানবতার প্রতীক আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছায়া-সুনিবিড় টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন। ছাত্রজীবনে ঢাকা ইডেন কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নৃশংস ও জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সূচনা হয় এক নিকষ-কালো অধ্যায়ের। দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা হয়ে পড়ে ছিন্নভিন্ন। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিজয়োল্লাসের এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরেন তিনি। আত্মীয়-পরিজনহারা শেখ হাসিনাকে পরম ¯স্নেহ মায়া-ভালোবাসায় আপন করে নেয় এদেশের মানুষ। ৪০ বছর আগে আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময় ও সংকটে হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু তনয়া। পিতার মতো দৃঢ় পদক্ষেপে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার লড়াই-সংগ্রামের নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন জননেত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা।
শেখ হাসিনার দীর্ঘপথ রাজনৈতিক জীবনের পথপরিক্রমা সহজ ছিল না। প্রাণনাশের হামলা হয়েছে ২৯ বার। গৃহবন্দি থেকেছেন। তবুও পিতার রেখে যাওয়ার আদর্শ ও এদেশের মানুষের প্রতি পবিত্র দায়িত্ব থেকে একটু টলানো যায়নি তাকে। ৪০ বছর ধরে নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রােতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বিশ্ব স্বীকৃত।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তার নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহাজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই চাঁদাবাজিসহ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। ওই সময় সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস বন্দি ছিলেন তিনি। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দি হয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত চার মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। ওই বছরের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে ২৩ জুন সরকার গঠন করে তারা। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে চার-তৃতীয়াংশ আসনে বিশাল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা দ্বিতীয় এবং ২০১৮-এর নির্বাচনের পর টানা তৃতীয়বার সরকার গঠিত হয়েছে।
এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট তিন দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ১৯৯৬-০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে।
গত এক যুগের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। এই সময়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভাবনীয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, মানুষের জীবনমানের বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের শুধু আশ্রয়ই দেননি তাদের জন্য ভাসানচরে তৈরি করে দিয়েছেন অস্থায়ী নিবাস। যা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়েছে।
বিশ্বনেতৃত্ব ও বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতির কারণে তিনি সর্বশেষ জাতি সংঘের ৭৬তম অধিবেশনে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ অর্জন করছেন। যা দেশের জন্য বিরল সম্মানের।
এছাড়াও এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। এরমধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তিবৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়ার কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবুও এদেশের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায় আজ সিক্ত হবেন উন্নয়নের নয়নমণি, বিশ্ববরেণ্য নেতা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতির জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন হাতে নিয়েছে কর্মসূচি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ