ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজপথে

প্রকাশনার সময়: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩১

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবীতে ফুঁসে উঠেছেন দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-রেলপথ অবরোধসহ নানা কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবারও ঢাবি, জাবি, কুষ্টিয়া ইসলামি, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে আসেন। তারা বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শাহাবাগে মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ ও ছাত্ররা। সেখান থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেয়া হয়। এরই মাঝে ঢাবির আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের হুমকী-ধমকী ও বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গন আবারও যে কোনো সময় নতুন করে অস্থির হয়ে উঠতে পারে এবং আন্দোলনের উত্তাপ ক্যাম্পাস পেরিয়ে রাজপথে গড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এতে বহিরাগত সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ক্যাডারদের অনুপ্রবেশ এবং আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সহিংসতারও শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে সতর্ক করেছে। কারণ এর আগেও সরকারী চাকরীতে কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী অ্যাকশন ও দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং পাঁচ জন পুলিশ আহত হন। রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা।

গোয়েন্দা এ তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ ব্যাপারে র‍্যাব ও পুলিশকে অ্যালার্ট থাকার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে পুঁজি করে কোনো বিশেষ মহল যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে না পারে সে ব্যাপারেও তাদের গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। উসকানীদাতাদের চিহ্নিত করতেও নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি।

জানা গেছে, সরকারী চাকরীতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারী করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারী করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে সরকারী চাকরীতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বহাল থাকল। গতকাল আপীল বিভাগও রায় পুনর্বহাল রাখেন। এর পরই রাজপথে নেমে আসেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও তারা গত কয়েক দিন ধরেই টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল দুপুর একটার দিকে হাটহাজারী-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে হাটহাজারী-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরী হয়। পরে দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবী জানান এবং আজ বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন।

শাহবাগে মুখোমুখি শিক্ষার্থী-পুলিশ: কোঠার বিরোধিতা করে দুপুরেই শাহাবাগ মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই এলাকায় চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। হেঁটে অকেকেই নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিকাল ৫টার দিকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ। দুপুর ১২টা থেকেই শিক্ষার্থীরা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। পাশাপাশি পুলিশও অবস্থান নেয়। অবরোধ চলাকালীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একজন পুলিশ সদস্যের উচ্চবাচ্য হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে অবস্থানরত পুলিশের দিকে তেড়ে যায়। তবে আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েক জন গিয়ে তাদের শান্ত করেন। পরে বিকাল ৬টার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে চলে যান। তবে দাবী না মানলে আজও তারা অবস্থান নেবেন বলে ঘোষণা দেন।

জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: সরকারী চাকরীতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ নানা দাবীতে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

৩ ঘণ্টা অবরোধ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক: কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের আশ্বাসে তিন ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়েন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থীরা। এরপর মহাসড়কে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। তবে দাবী না মানলে আবারও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারী দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় কোটা বাতিল দাবী ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুবি শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই লেনেই গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে বিকাল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান এবং পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে তারা আন্দলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিকালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবী সমূহ পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেয়। ফলে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

রাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: সরকারী চাকরীতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা হাইকোর্ট কর্তৃক পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবীতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে তারা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়া ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিক মঈন বলেন, কোটার মতো একটি চরম বৈষম্য আমাদের ওপর পুনরায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বৈষম্য আমাদের পূর্বপুরুষরাও মানেননি, আমরাও মানব না। স্বাধীন দেশে বৈষম্যের শিকার হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বৈষম্যের শিকারই যদি হব, তাহলে যারা আজ বৈষম্য তৈরী করছে তাদের পিতারাই কেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন? ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলে মেধাবীদের রিকশা চালানো ছাড়া উপায় থাকবে না। সরকার তাহলে আমাদের রিকশা কিনে দিক, নয়তো কোটা সংস্কার করুক। কোটা সংস্কার না করে আমরা ঘরে ফিরব না।’

কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ: কোটা সংস্কারের দাবীতে ফের বিক্ষোভ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে সড়কের দুই পশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। পরে তারা অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ট্রেন অবরোধ: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে জব্বারের মোড়ে রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা থেকে জামালপুরগামী আন্তঃনগর জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ: সরকারী চাকরীতে কোটা বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মিছিল হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-৩ এর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকা কলেজে বিক্ষোভ: সরকারি চাকরীতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারী করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবীতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন তারা। এরপর মিছিল নিয়ে সাইন্সল্যাব মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। পরে মিরপুর সড়ক হয়ে নীলক্ষেত মোড় ঘুরে কলেজের মূল ফটকে মিছিল শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।

সার্বিক এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা তাদের দাবী আদায় করতে চান; কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নয়। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তাদের নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির ফন্দি এঁটে এ আন্দোলনকে যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকেও তারা সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেবেন।

বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ক অবরোধ: সরকারী চাকরীতে কোটা বাতিলের দাবীতে তৃতীয় দিনের মতো বরিশাল-কুয়াকাটা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের দু’পাশে শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

আন্দোলনে যেতে শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের বাধা: দেশে সরকারী চাকরীতে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদ এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবীতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় আন্দোলনে যোগ দিতে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে বিভিন্ন হল থেকে এ খবর পাওয়া গেছে। হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা আন্দোলনে যেতে পারছি না। আমাদের কোটা আন্দোলনে যেতে বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগ।

জানা গেছে, সার্বিক এমন পরিস্থিতিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের সংগঠকদের সতর্কতা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সন্দিহান গোয়েন্দারা। তাদের ভাষ্য, সরকারী চাকরীতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবীতে এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চাকরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে নতুন করে কোটা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেলে সংগঠকদের পক্ষে আন্দোলনে নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এছাড়া কোনো বিশেষ মহল মূল সংগঠকদের কৌশলে সরিয়ে দিয়ে এ আন্দোলনের নেতৃত্ব তাদের হাতে নিয়ে নিতে পারে। পরবর্তী সময়ে তারা হয়তো তাদের স্বার্থ হাসিলে বিশেষ ফন্দি আঁটবে।

এদিকে শিক্ষাবিদরাও অনেকে এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হলে এবং এর জোয়ার তীব্র হলে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামাল দিতে র‍্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হলে বিগত সময়ের কোটা আন্দোলনের মতো হতাহতের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কোটাবিরোধী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো বাধা দেবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে বিগত সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখে কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ছক কষা হচ্ছে। এ আন্দোলনে বহিরাগত কেউ কিংবা স্বার্থন্বেষী কোনো গোষ্ঠী নৈরাজ্য চালানোর চেষ্টা চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারী চাকরীতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবীতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবী জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারী করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়? এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরীতে যে কোটা ব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই চাকরী প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ