মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

টার্গেট বড় জমায়েত

প্রকাশনার সময়: ২৯ জুন ২০২৪, ০৮:২৭

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। দীর্ঘদিন পর ফের রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চাইছেন তারা। সে লক্ষ্যে সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে চায় দলটি। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। একটি ঐতিহাসিক সমাবেশে রূপ দিতে সব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে রাজধানীতে সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। সমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে পর্যায়ক্রমে নানা প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ধারাবাহিকভাবে দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছেন। এ সমাবেশে বড় শোডাউন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে গত বুধবার বিএনপির এক যৌথসভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আজ রাজধানীতে সমাবেশ করা হবে। এছাড়া আগামী ১ জুলাই মহানগরগুলোতে এবং ৩ জুলাই সব জেলায় সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, যে কোনো সময় তার জীবনহানী হতে পারে। কিন্তু আদালতের দোহাই দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এজন্য খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা এখন রাজপথে কর্মসূচি নিয়েছেন। এদিকে সমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকালে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে যান দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডমিন) একেএম হাফিজ আক্তারের সঙ্গে তারা বৈঠক করেন। এ্যানী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে শনিবারের সমাবেশের বিষয়টি ডিএমপিকে অবহিত করেছি। তারা (পুলিশ) আমাদের সহযোগিতা করবেন, সেই আশ্বাস পেয়েছি।

দলীয় সূত্র জানায়, সমাবেশ সফল করতে ঢাকা বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা ও অঙ্গ সংগঠনকে নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ লোক জড়ো করতে নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। এজন্য ঢাকা বিভাগীয় বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে আলাদা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। দুপুর আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসবেন। এবার ব্যানার ও ফেস্টুনে শুধু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা থাকবে।

জানা গেছে, সমাবেশ ঘিরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের হাইকমান্ডকে আলাদা কিছু করে চমক দেখাতে চাইছেন। বিগত আন্দোলনের দায়ে ঢাকা মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তাই আগামী কমিটিতে পদ পদবীর আশায় নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আসতে চাইবে। এজন্য মহানগরের নেতারা সমাবেশ সফল করতে দিন-রাত কাজ করছেন। ইতোমধ্যে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা শুরু করেন মহানগর নেতারা। সেখানে মহানগরের প্রতিটি থানাকে সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ঘটানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, বিগত আন্দোলনে ব্যর্থতার দায়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আগামীতে কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতারাও বড় শোডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঢাকার দুই মহানগর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা ও মহানগর থেকেও নেতাকর্মীদের এ সমাবেশে অংশ নিতে নির্দেশনা রয়েছে। পদ বঞ্চিত যেসব নেতা রয়েছেন তারা সামনের সারিতে এসে নিজেদের অবস্থান জানান দিবেন। এজন্য পদ প্রত্যাশী নেতারা দিন-রাত পরিশ্রম করে সমাবেশ সফলে কাজ করছেন।

বিএনপি নেতারা জানন, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। তার চিকিৎসকরা বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করার কথা বললেও সরকার সেই সুযোগ দিচ্ছে না। এখন তার অবস্থা সংকটাপন্ন। সরকার কিছুতেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিবে না, তাই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দলীয় প্রধানকে মুক্তি করতে চাইছে তারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সমাবেশ সফল করার জন্য দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে নিয়মিত বৈঠক ও আলোচনা করেছেন। যাতে আমাদের সমাবেশ সাফল্য মণ্ডিত হয়। শুধু দলের নেতাকর্মীই নয়, ঢাকায় বসবাসরত সাধারণ জনগণকেও এ সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক জনসামগম ঘটানোর জন্য প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেহেতু খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এ সমাবেশ তাই নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুশের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তাই বলা যায়, সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটবে।

গত তিন বছরে পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কয়েক দফা অনুমতি চাইলেও ওই শর্তের যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবারই তা নাকচ করা হয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুই দিন আগে তার হূদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়েছে।

গত ২১ জুন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। খালেদা জিয়ার হদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত রোববার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হূদযন্ত্রে স্থায়ী পেসমেকার বসানো হয় বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানান।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হূদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। এর আগে গত ২ মে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে তার পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। পরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত ২৭ অক্টোবর। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় ৫ মাসের বেশী সময় চিকিৎসা শেষে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারী তিনি বাসায় ফেরেন।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশী সময় তিনি কারাবন্দী ছিলেন। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ স্থগিত করে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তখন থেকে ছয় মাস পরপর মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ