ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

এবারো আশায় গুড়ে বালি

প্রকাশনার সময়: ১৬ জুন ২০২৪, ০৮:৫২

আশানুরূপ ঋণ পাচ্ছেন না ট্যানাররা। ২০২২ সালেও যে ঋণ পেয়েছে তা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। এ বছর ৫০০ কোটি টাকার মতো ঋণ চেয়েছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এত টাকা তারা ঋণ পাচ্ছেন না। গত বছর থেকে মাত্র ১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৭০ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। কোরবানীর পশুর চামড়া ক্রয় ও কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে এ ঋণ পাবে ট্যানাররা। ১২টি সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করা হবে।

চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঋণ দেবে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক— সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী। বাকি ঋণ দেবে বেসরকারী ব্যাংকগুলো।

বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) গত বছরের চেয়ে বেশী ঋণ সহায়তা চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।

গত বছর ব্যবসায়ীরা অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ঋণ চাইলেও পেয়েছেন তার মাত্র অর্ধেক, ২৫৯ কোটি টাকা। তবে ২০২২ সালে ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশী ছিল। যা অঙ্কে ৪৪৩ কোটি টাকা।

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল আজহায় প্রায় এক কোটি পশু কোরবানী দেয়া হয়। এ মৌসুমে সংগ্রহ করা এ কাঁচা চামড়ার বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

গত ১২ মে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের সভাপতিত্বে এক সভায় বিটিএ সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণের জন্য কোরবানীর আগে বার্ষিক যে ঋণ দেয়া হয়, এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। শিল্পমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, পর্যাপ্ত ঋণ দিতে মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রতিবছর যেসব ব্যাংক এ খাতে ঋণ দেয়, তারা এবার ২৭০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ট্যানারিগুলো এ ঋণ নিয়ে অনেক সময় ঋণ যথাসময়ে ফিরত দেয় না। এ খাতে ব্যাপক পরিমাণে ঋণ খেলাপী অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে ব্যাংকগুলোরও ইচ্ছা কম এ খাতে বিনিয়োগ করা।

শাহীন আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত চামড়া খাতে বকেয়া ঋণ ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট গ্রুপের একাই ৫ হাজার কোটি টাকা, বাকী সব ট্যানারিগুলোতে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বকেয়া আছে। এ বছর আমরা ১৭০ কোটি টাকার ঋণ রি-শিডিউল করেছি। তিনি বলেন, চামড়া একটি পচনশীল পণ্য, যা দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে হয়— যার জন্য নগদ টাকা প্রয়োজন হয়, কারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে আড়তে বিক্রি করেন।

বিটিএ সভাপতি আরও বলেন, ট্যানারি মালিকরা নিজস্ব ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিয়ে ব্যবসা করলেও কোরবানীর সময় বেশী নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নিজস্ব ফান্ড থেকে ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।

বিটিএ চামড়া খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংস্থা। এ খাতের শিল্পমালিকরা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাত করেন। প্রক্রিয়াকরণের পর কিছু চামড়া এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পে বিক্রি করা হয় এবং বাকী চামড়া বিদেশে রপ্তানী করা হয়। বিটিএর তথ্যমতে, বর্তমানে ট্যানারী মালিক ও বাণিজ্যিক রপ্তানীকারক মিলিয়ে সংস্থাটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮০০। সারা দেশে ১ হাজার ৮৬৬ জন বড় ও মাঝারী চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছে। এর বাইরে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঈদ-উল আজহায় পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন, এমন অনেক এজেন্ট আছেন।

রাজধানীর পোস্তা, নাটোরের রেলওয়ে বাজার, যশোরের রাজারহাট, গাইবান্ধার পলাশবাদী, রংপুরের তারাগঞ্জ, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, আমিনবাজার ও টঙ্গী-গাজীপুরের আড়তগুলোতে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুত করা হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ২০০টি ট্যানারি আছে। এর মধ্যে ১২৭টি ট্যানারি আছে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের পর থেকে ট্যানাররা ভালো নেই। যার দরুন অনেক ব্যবসায়ী খেলাপীর তালিকায় পড়েছেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর। অন্যদিকে গত কয়েক বছরে চামড়া শিল্পে যাদের ঋণ দেয়া হচ্ছে, তাদের বেশীর ভাগের ঋণই ঋণ পুনঃতফসিল করা হচ্ছে।

তাই এ খাতের ব্যবসায়ীরা এখনো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। বিটিএর সাবেক একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকগুলো চামড়া শিল্পে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। চামড়া মালিকরা আশানুরূপ ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ দেয়, তা বিগত বছরের ঋণের সাথে সমন্বয় করে (ঋণ পুনঃতফসিল)। এতে গত কয়েক বছর যাবত চামড়া শিল্প মালিকদের হাতে এ খাতের ঋণের টাকা আসে না। তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের আগে কিন্তু এ খাতের অধিকাংশ ব্যবসায়ী খেলাপী ছিলেন না। সাভারে চামড়া শিল্পে স্থানান্তর হয়ে উৎপাদনে যাওয়ার মতো সক্ষমতা অনেক ব্যবসায়ীর ছিল না। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বিগত দুই বছরের (২০১৭-২০১৯) ঋণের সুদ যেন মওকুফ করে দেয়া হয়। ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হয়। কমপ্লায়েন্স ইস্যু ও স্থানান্তরের কারণে চামড়া রপ্তানীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ফলে রপ্তানী কমে যায়। তবে গত কয়েক বছর ধরে চামড়া রপ্তানীতে গতি বাড়ছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এগারো মাসে (জুলাই-মে) চামড়াজাত পণ্য রপ্তানী করা হয়েছে ৯৬১ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.১৭ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ডলার।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ