ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

সংখ্যা বাড়ছে রাসেলস ভাইপারের, অ্যান্টিভেনম নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশনার সময়: ১১ জুন ২০২৪, ১৩:৪০

বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। বাংলায় ডাকা হয় চন্দ্রবোড়া নামে। বৈজ্ঞানিক নাম ডাবোয়া রাসেলসই। ২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে দেশে মহাবিপন্ন গোত্রভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

তবে এক দশকের বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব। এ সাপের কামড়ে বেড়েছে মৃত্যুও। পরিস্থিতি এতটা জটিল আকার ধারণ করেছে যে কোথাও কোথাও আতঙ্কে জমিতে কাজ করতে যাচ্ছেন না কৃষক। বিশেষ করে পদ্মাবেষ্টিত জেলাগুলোয় এখন রাসেলস ভাইপারের দংশন মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। পদ্মা ও মেঘনা হয়ে এ সাপ এখন চাঁদপুর, চট্টগ্রামেও পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়।

রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বাড়ায় এর দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে এর অ্যান্টিভেনম না পাওয়ায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। দেশে উৎপাদিত ওষুধ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি হলেও এখনও বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম তৈরি করেনি দেশীয় কোনো ওষুধ প্রতিষ্ঠান। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ভারত থেকে অ্যান্টিভেনম আমদানি করে দেশে সরবরাহ করে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে পাওয়া যায় না।

অ্যান্টিভেনম আসে ভারত থেকে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, সাপের দংশনে রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। কারণ, একেক দেশের সাপের প্রকৃতি, ধরন একেক রকম। ভারতে যেসব সাপ থেকে ভেনম সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর মাত্র ২০ শতাংশ বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে। অথচ বছরের পর বছর ভারতে তৈরি অ্যান্টিভেনম দিয়েই বাংলাদেশে সাপের দংশনের শিকার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সাপের ভেনম তৈরির গবেষণা চলছে

সাপের দংশনে মৃত্যু কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে দেশে বিচরণ করা সাপের ভেনম তৈরির গবেষণা চলছে।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘সাপের কামড়ের ওপর আমরা জাতীয়ভাবে জরিপ করেছি। এতে দেখেছি দেশে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার ৫০০ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। আর চার লাখের বেশি আমাদের দেশে সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে।’

ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘আমাদের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান লক্ষ্য ছিল, বিষধর সাপ সংগ্রহ করা। তারপর তাদের লালন-পালন করা ও বিষ সংগ্রহ করা। বর্তমানে সাপের বিষ সংগ্রহের কাজ চলছে। আমাদের দেশের ১১ জাতের বিষধর সাপের অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে দ্রুত অ্যান্টিভেনম তৈরি সম্ভব নয়। এর প্রক্রিয়া অনেক লম্বা। এখন এ ভেনমের অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান। আবার এ ধাপের অনেক পরীক্ষা আমাদের দেশে হয় না। সম্প্রতি ডব্লিউএইচওর সহযোগিতায় কিছু ভেনম স্পেনের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আমাদের ভেনমের স্বভাব চিহ্নিত করতে হবে।’

কবে পাব রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম?

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, এখনো অ্যান্টিভেনমের সফলতার মুখ না দেখা গেলেও রাসেলস ভাইপারের ভেনম থেকে আমরা অ্যান্টিবডি তৈরি করছি। আমরা প্রথমে রাসেলস ভাইপারের ভেনম নির্দিষ্ট পরিমাণ মুরগিকে দিই। মুরগির ডিমে অ্যান্টিবডিগুলো থাকে। এরপর ডিমের অ্যালবুমিন থেকে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করি। এছাড়া ছাগলের শরীরে ভেনম প্রয়োগ করেও রক্ত সংগ্রহ করে তাদের থেকে অ্যান্টিবডি আলাদা করা হয়েছে। এখন অ্যান্টিবডি পিউরিফিকেশনের কাজ চলছে। এরপর আমরা ইঁদুরের শরীরে সেটা প্রয়োগ করে যাচাই করবো আমাদের দেশে তৈরি অ্যান্টিবডি কতটুকু কার্যকর। আমরা যে ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরির চেষ্টা করছি তা দিয়ে রাসেলস ভাইপারের কামড়ের চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব হবে, যেখানে ভারতের অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও রাসেলস ভাইপারে কামড়ানো রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।

এ অ্যান্টিবডি আলাদাকরণ ও পিউরিফিকেশনের ফলাফল দেওয়া এ বছরের মধ্যে সম্ভব জানিয়ে ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘অ্যান্টিবডি আলাদাকরণের তথ্য নিয়ে আমাদের প্রজেক্ট এ বছর শেষ হবে। এছাড়া সামনে ভালো পরিমাণ ভেনম যদি থাকে, ম্যাপিং করা থাকে এবং ক্যারেক্টার আলাদা করার কাজ হয়ে যায় তাহলে আমরা অ্যান্টিভেনম বানানোর প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়ে যাব।’

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ