অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দেশজুড়েই চলছে এখন বাজেট পর্যালোচনা। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি হ্রাস করার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বাজেটে।
বিষয়টিতে গুরুত্ব দিলেও কমানোর তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এছাড়া বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি ব্যবসায়ীদের চাওয়া। ফলে কেউই খুশি হয়নি বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের বক্তব্য থেকে জানা গেছে। কারণ মিলছে না তাদের চাওয়া পাওয়া। গতকাল শনিবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, আইসিএবি এবং বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম।
তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে অসঙ্গতির নানা দিক। এদিকে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, ভোক্তা, সাধারণ মানুষ, বিনিয়োগকারী, ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ— খুশী নয় কেউই। অন্যদিকে বাজেটে দেশের মূল্যস্ফীতি কমাতে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে— তা বাস্তবায়ন করা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলছেন, যে ধরনের পদক্ষেপ বাজেটে নেয়া হয়েছে, এর ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামবে না। সেটা সাড়ে ৬ শতাংশের ওপরে নিশ্চয়ই থাকবে। যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয় না।
এক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় গতকাল ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অধিক মাত্রায় সরকারের ঋণ বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, এর ফলে বিনিয়োগে ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সরকারকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অধিক মাত্রায় সরকারের ঋণগ্রহণ বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পরতে পারে। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার জরুরি। সেসঙ্গে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়ানোর করের আওতা বাড়ানো এবং উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস বিস্তৃত করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জাতীয় বাজেট পরামর্শক কমিটির সভায় সরকারের কাছে আমরা বিস্তারিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলাম। মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আর বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সুশাসন ও যথাযথ মনিটরিং দরকার বলে মনে করেন সংস্থাটি। সভাপতি বলেন, দেশের জিডিপির আকার এবং অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিগত কয়েক বছরে যেখানে প্রায় ১০-১২ শতাংশ হারে বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবার বাড়ানো হয়েছে ৫ শতাংশেরও কম (৪.৪২)।
বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন ও যথাযথ মনিটরিং। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকীর মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া বাজেটে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারী এবং বেসরকারী খাতের অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের এ নেতা বলেন, বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্যও বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৮৯ শতাংশ। এ মূল্যস্ফীতির হারকে কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে। ভূরাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে আমাদের অর্থনীতিতে এমনিতেই বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ বিনিময় হার, ঋণের সুদের হার, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাজেট বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। এফবিসিসিআই বলছে, বাজেটে বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে চাপের মুখে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার জরুরী।
সেসঙ্গে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানো এবং উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস বিস্তৃত করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জন ও রিজার্ভ বাড়ানোর যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে মত দিয়েছে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংগঠনটির পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদহার এত দেরীতে বাড়ানো হয়েছে যে, এর আগেই চাহিদা নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যমূল্য বাড়ান।
এ জন্য যে ধরনের শক্ত পদক্ষেপ দরকার তা বাজেটে নেই, বরং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেখানে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে দুর্নীতি উৎসাহিত করবে বলে মত দেন তারা।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত ছিল। রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে করের আওতা না বাড়িয়ে গতানুগতিকভাবে কেবল প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। এটা না করে ধনীদের ওপর কর বাড়ানো দরকার ছিল।
কেননা ধনিক শ্রেণী ও রাজনৈতিক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কারণে নানাভাবে কর দেন না। অবশ্য এবার সর্বোচ্চ কর হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার বিষয়টি ইতিবাচক।
তিনি আরও বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ন্যায়ভিত্তিক সমাজের সঙ্গে কোনোভাবেই এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হবেন। ব্যাংক খাত সংস্কারের কথা অনেক আগে থেকে বলা হচ্ছে না। ঋণখেলাপী, করখেলাপী ও কালো টাকার মালিকরা একই সূত্রে গাথা।
এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ইতস্তত কেন? মূল্যস্ফীতি কমাতে অনেক দেরীতে সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ডলারের দর বাড়ানো হলেও এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়নি। সাধারণভাবে সুদহার বাড়ানো হয় চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য। তবে ধারাবাহিকভাবে ৯ থেকে ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ইতোমধ্যে এমন এক জায়গায় নেমেছে যে, সুদহার দিয়ে আর চাহিদা নিয়ন্ত্রণ হবে না। তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে গত এক দশক ধরে স্থবিরতা তৈরী হয়েছে। ফলে সেখানেও সুদহারের কোনো প্রভাব পড়বে না, বরং এ সময়ে সুদহার অনেক বাড়লে আর্থিক খাতের অবস্থা খারাপ হবে।
আবার ব্যবসায়ীরা এটিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে পণ্যমূল্য আরও বাড়াবে। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন। অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনায় কারণে নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা হঠাৎ দর বাড়িয়ে দেন। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ধরনের কঠিন পদক্ষেপ দরকার তা এবারের বাজেটে নেই। আবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের যে ধরনের সমন্বয় দরকার তাও নেই। তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের বেশীর ভাগ আসে ব্যক্তি খাত থেকে। ব্যক্তি খাতে এক দশক ধরে বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে।
এর মধ্যে আবার মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানীতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সুদহারও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে রিজার্ভ কমছে। এর মধ্যে আগামী অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। কেবল রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে রিজার্ভ বাড়বে না, হুন্ডি কমাতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাক খাতের প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি। লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি কচি বলেন, বাজেট বক্তব্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের এ প্রধান খাতটির (পোশাক খাত) জন্য কিছু নীতি সহায়তার প্রস্তাব দেয়া হলেও বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মূল প্রস্তাবগুলো বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। পোশাক শিল্প সংকটে আছে দাবী করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শিল্পে পণ্যের দরপতন হয়েছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় পাঁচ বছরে দফায় দফায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে শিল্প একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে বলে দাবী করে তিনি বলেন, শুধু মে মাসেই কমেছে ১৭ শতাংশ। আমরা মজুরী ৫৬ শতাংশ বাড়িয়েছি, কিন্তু আমাদের মূল্য বাড়েনি। বরং গত ৯ মাসে আমাদের প্রধান পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮ থেকে ১৮ শতাংশ। বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে, যেগুলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সহায়ক হবে না বলে মনে করছে বিজিএমইএ।
তার মধ্যে আছে— নতুন বন্ড লাইসেন্স ফি ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি বার্ষিক পাঁচ হাজার টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব। এস এম মান্নান কচি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সহায়ক কিছু নীতি সহায়তা থাকবে। বিশেষ করে উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং এটিকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার বিষয়ে আমাদের গভীর প্রত্যাশা ছিল এবং আছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যাংক যখন সরকারকে লোন দেয়ার সুযোগ পাবে তখন আমাদের দিতে চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক। এতে করে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। আপনারা দেখেছেন, বিগত বছরগুলোতে এমনিতেই বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে।
তিনি বলেন, রপ্তানীর ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) যদি দিতে হয়, তাহলে সেটি ১ থেকে দশমিক ৫ শতাংশ করার দাবী জানাই। এজন্য অবশ্যই রিটার্ন এবং সমন্বয়ের দরকার আছে। এটা করার জন্য সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ জানাই।
নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে আমরা অবশ্যই চাপে পড়ব। তাই আমরা সরকারের কাছে সহায়তার দাবী জানাচ্ছি। শিল্পাঞ্চলের বাইরে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যাংক ঋণ না দেয়ার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, সেটি প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিবন্ধতা তৈরী করবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
তিনি বলেন, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জে কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে। আবার প্রশাসন থেকে সবাইকে ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে বলা হয়েছে। আপনি যদি গাড়িতে তেল না দিয়ে ড্রাইভারকে চাবুক মারেন— গাড়ি চালাও, এটা সম্ভব নয়। আমি গ্যাস সংকট সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দেয়া সাপেক্ষে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকা (এমসিসিআই)। এ ব্যবস্থার ফলে নিয়মিত করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি। এমসিসিআই মনে করে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি বাজার সংকুচিত হওয়া, মন্থর বিনিয়োগ ব্যবস্থা, ব্যাংক ঋণের জন্য উচ্চ সুদহার, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ও রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতকরণের সময় বাজেট প্রস্তুত করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। সংগঠনটি বলে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
তবে বাজেটকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনার গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা জনগণকে যথাযথ সেবা দেয়ার আরও সুযোগ আছে। ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থকে বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়ে এমসিসিআই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এ ব্যবস্থার ফলে নিয়মিত কর প্রদানকারী করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে।
নিয়মিত কর প্রদানকারীদের জন্য এটি একটি শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রকৃত অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ হারে কর আরোপসহ জরিমানার বিধান প্রবর্তন করে এ ব্যবস্থা প্রচলন করলে নিয়মিত করদাতারা উৎসাহিত হবে। বাজেটে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির দিক থেকে, দেশের মুদ্রাস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশী, যা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ইঙ্গিত। মোট বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।
আইসিএবি সভাপতি বলেন, বাজেট বক্তৃতায় রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডিভিএস’র অবদানকে গুরুত্ব প্রদান করা এবং করদাতা কর্তৃক প্রদর্শিত আয়ের সত্যতা এবং স্বচ্ছতা বাড়ার কথা উল্লেখের জন্য আমরা অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ.বি. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার থাকলেও এই লক্ষ্য অর্জনে প্রকৃত অর্থে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যও বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে।
এ ছাড়া কর প্রশাসনে সুশাসন ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। যে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কর আহরণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপী ঋণের যে তথ্য দিয়ে থাকে সেটি সঠিক নয়। তথ্য গোপন করার কৌশল সুশাসনের অন্তরায়।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ